জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে বছরে মারা যাচ্ছে ৬ হাজার নারী
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:২৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জরায়ু-মুখ ক্যান্সার পৃথিবীব্যাপী শীর্ষ পাঁচ এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্যান্সার। প্রতিবছর এই ক্যান্সারে প্রায় ১২ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত করা হচ্ছে এবং প্রায় ৬ হাজার নারী মৃত্যুবরণ করছে। এই ক্যান্সার মূলত মানবদেহের প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) কারণে সৃষ্টি হয়।
আজ সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জাতীয় কৌশলপত্র বাংলাদেশ ২০১৭-২০২২’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইউনাইটেড নেশনস ফান্ড ফর পপুলেশন অ্যাক্টিভিটিস এর তথ্যমতে প্রায় ৯০ ভাগ এইচপিভি ইনফেকশন মানবদেহের হরমোনের মাধ্যমে দূর হয়। তবে বেড়ে যাওয়া ইনফেকশনগুলো জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে পরিণত হয়। জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে পরিণত হতে ইনফেকশনের পর প্রায় ১০ বছর সময় লাগে। তাই বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি নারীর জরায়ু-মুখ ক্যান্সারের স্ক্রীনিং করা উচিৎ কারণ, এই রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো ঠিক বোঝা যায় না যে কারণে স্ক্রীনিং করা জরুরি এবং সঙ্গে সঙ্গে টিকা গ্রহণ করা উচিৎ। তা ছাড়া দেশের প্রায় ৩০ মিলিয়নের বেশি ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের এই স্ক্রীনিং-এর আওতায় আনা হচ্ছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেন, ক্যান্সার বর্তমানে বিশ্বময়ী একটি সমস্যা। কর্মকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তার সফলতা আসবে। শুধুমাত্র পরিকল্পনায় এত বড় সমস্যার সমাধান হবে না এবং বাল্যবিবাহের কারণে নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমরা আগের চেয়ে বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেছি। ইন্টারনেটের অপব্যবহার বাড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এই অপব্যবহারের প্রভাব আমাদেরকে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে এ ধরনের রোগগুলো দিন দিন বাড়ছে।
চিকিৎসকরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে চায় না উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা হাসপাতাল গুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসকরা তার সঠিক ব্যবহার করছেন না। রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তা ছাড়া আমাদের ডাক্তাররাও প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে চায় না। তারা দেশ সেবার চেয়ে তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন। তাই আবার বলছি ডাক্তার বাড়িয়ে কর্মকৌশল বানিয়ে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে না যদি আমরা জনগনের সেবায় আন্তরিক না হই। একটা জায়গার কর্মকর্তারা একজন নেতা। নেতাদের তাদের কাজের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে।
কেবিনেটে হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের আইন পাস হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। পর্যাপ্ত পরিমাণ নার্স ও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু তারা যদি ঠিকমত দায়িত্ব পালন না করে তাহলে সমস্যা দূর হবে না। প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন মেডিকেলে ইন্টার্নিশিপ এক থেকে দুই বছরে উন্নীত করতে। কিন্তু তাতে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হবে বলে সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে। ইন্টার্নিতে গ্রামে গিয়ে শিখলে ভালো ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব।
উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রমাণ করেছে যে সার্বিক উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। আর রাজনৈতিক ক্ষমতা ছাড়া কখনোই দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত যে কয়বার রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্টিত হয়েছে সে কয়বারই দেশ উন্নতির মুখ দেখেছে। রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া অন্য কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসীন হলে তারা এগোতে পারবে না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঝরে পড়বে। পরে মন্ত্রী জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জাতীয় নীতিমালার কৌশলপত্র ২০১৭-২০২২’র মোড়ক উন্মোচন করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গাইনোকোলজিকাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেছা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর সুলতান মো. শামসুজ্জামান, বিএসএমএমইউ’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. বারদান জং রানা, ইউএনএফপিএর স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ড. সত্যনারায়ণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহা, মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিন, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের পরিচালক শিরীনা দেলহুর প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, জরায়ু-মুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে জাতীয় নীতিমালার কৌশলপত্র ২০১৭-২০২১ অনুসারে এ পর্যন্ত ২ মিলিয়ন নারীকে স্ক্রীনিং-এর আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ২৭ মিলিয়ন মহিলাকে এই সেবার আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া এ বিষয়ে টীকাদান কর্মসূচিও চলমান রয়েছে। পরীক্ষামূলক কার্যক্রম গাজীপুরে ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই