‘পুরোদস্তুর কমার্শিয়াল ছবিতে অভিনয় করার যোগ্যতা আমার নেই’
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:১৮
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
পুরোনো ঢাকার অলিগলি পেরিয়ে যখন ওয়াইজ ঘাট পৌঁছালাম তখন বিকেল হেলে পড়েছে সন্ধ্যার গায়ে। সাইরেন বাজিয়ে বীরদর্পে ঘাট ছাড়ছে দূরপাল্লার লঞ্চগুলো। এরকম সময় প্রবেশ করলাম বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) এর ভেতরে। উদ্দেশ্য বলিউড ও টলিউডের অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত দর্শন। তিনি বাংলাদেশে এসেছেন ‘নন্দিনী’ নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করতে। এটি তার তৃতীয় বাংলাদেশী সিনেমা।
শট শেষে বিশ্রাম কক্ষে বসে ছিলেন ইন্দ্রনীল। ভেতরে ঢুকতেই স্মিত হাসি দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন ইন্দ্রনীল। করমর্দন, কুশল বিনিময়ের পালা শেষে শুরু হলো আলাপ। আলাপকালে তিনি বাংলাদেশে সিনেমা, নিজের ক্যারিয়ারসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনের আগল খুলেছেন।
- অপ্রিয় প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক। অনেক ভারতীয় শিল্পীর বিরুদ্ধে ওয়ার্ক পারমিট না নিয়ে শুটিং করতে আসার অভিযোগ ওঠে। আপনি কি ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে শুটিং করতে এসেছেন?
আমি এর আগেরবারও ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে শুটিং করতে এসেছিলাম। এই সিনেমাতেও ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে শুটিং করতে এসেছি। আমার মনে হয় ভারত থেকে যারা কাজ করতে আসবেন তাদের নিয়ম মেনে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করতে আসা উচিত। এরকম যদি কেউ অনুমতি ছাড়া অভিনয় করতে আসেন তাহলে সেটা দুঃখজনক।
আরও পড়ুন : মুক্তির জন্য প্রস্তুত ‘নাকাব’, অপেক্ষা সেন্সরের
- এই নিয়ে তৃতীয় বাংলাদেশি সিনেমায় অভিনয় করছেন। নিশ্চয়ই কিছু ধারণা হয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা সম্পর্কে। সেই ধারণা থেকে বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে মূল্যায়ন করা আমার জন্য খুব কঠিন। আমি পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে সেভাবে চিনি না। এখানকার খুব বেশি সিনেমা দেখিনি। তবে আমি যেসব ছবিতে কাজ করেছি সেগুলো ভালো লেগেছে। নতুন পরিচালক আসছেন। নতুন ধরনের সিনেমা করার চেষ্টা করছেন। এটা খুব ভালো দিক। আমি যে ধরনের সিনেমাতে অভিনয় করি সে ধরণের সিনেমা এখানে এখন নির্মিত হচ্ছে।
- ‘নন্দিনী’ সিনেমার সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হলেন?
এই ছবির প্রযোজক ও পরিচালক আমার সঙ্গে বোম্বেতে দেখা করেন। ছবির চিত্রনাট্য ও আমার চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। সেটা আমার কাছে ভালো লেগেছিল। তাদেরকে আমার পেশাদার মনে হয়েছিল।
আরও পড়ুন : অসাম্প্রদায়িক ও অসম প্রেমের গল্পে নির্মিত হচ্ছে ‘শেকল’
- আপনার চরিত্র সম্পর্কে বলুন।
আমার চরিত্রটি খুব মজার। আমি একজন রিপোর্টার। যে একটি প্রতিবেদন তৈরীর চেষ্টা করে। সেই সূত্রে ধরে এক মেয়ের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর কি হয় সেটা বলা যাবেনা। বাকিটা সিনেমা হলে গিয়ে জানতে হবে।
- দুই বাংলার পরিচালকদের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য খুঁজে পান?
ভাষা যাই হোক, ক্রিয়েটিভ মানুষরা সবসময় এক রকমের হন। তাদের লক্ষ্যটা একই থাকে। আমার মনে হয় কলকাতায় সবাই ভালো ছবি বানানোর চেষ্টা করছে। এখানেও ভালো ছবি বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেদিকটায় কোন পার্থক্য আমার মনে হয়না।
তবে ইন্ডাস্ট্রির আকারে পার্থক্য রয়েছে। যেমন আমি বোম্বেতেও কাজ করি। সেখানকার ইন্ডাস্ট্রি বড়। তাদের স্কিল বড়, ক্যানভাস বড়। আবার কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিও এগিয়েছে।
- হিন্দি সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তবে বেশি দেখা যাচ্ছে বাংলা ছবিতে। কেনো?
আমি মূলত কলকাতা থাকি না। কলকাতা থেকে ডাকলে আমি গিয়ে ছবি করি। গত কয়েক বছর ধরে একটু বেশি ডাক পাচ্ছি কলকাতা থেকে, সেজন্য মনে হচ্ছে কলকাতায় বেশি সিনেমা করছি। আমি একজন অভিনেতা, তাই যেকোন ভাষার সিনেমায় আমি অভিনয় করতে পারি। তেলেগু সিনেমায় অভিনয় করেছি। মারাঠিতে করেছি। হিন্দিও করি।
আরও পড়ুন : সুমিত-তিশার ‘বিশুদ্ধ ভালোবাসা’
- বোম্বেতে থাকছেন। সেখান থেকে ডাক পেলে কলকাতায় চলে যাচ্ছেন। আবার ফিরে হিন্দিতে অভিনয় করছেন। সমন্বয় করেন কিভাবে?
সমন্বয় করতে হয়। যেহেতু আমি একজন অভিনেতা সেহেতু এছাড়া উপায় নেই। আমি আরও ভালো ভালো কাজ করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি সমন্বয় করে একদিন সেরা ছবিতে অভিনয় করে ফেলব। তাছাড়া আমার ক্যারিয়ার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে আমি তৃপ্ত নই। কোন অভিনেতাই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে তৃপ্ত হতে পারেনা। সে চায় পৃথিবীর সব ভালো ভালো সিনেমায় অভিনয় করতে।
- কমার্শিয়াল ও বিষয়ভিত্তিক- কোন ধরণের সিনেমায় নিজেকে মেলে ধরতে সুযোগ পান?
আমার বেশি ভালো লাগে আর্টফিল্ম। আমি যেসব কমার্শিয়াল ছবি করেছি সেগুলো সেমি কমার্শিয়াল ছিল। আমার কাছে মনে হয় একদম পুরোদস্তুর কমার্শিয়াল ছবিতে অভিনয় করার যোগ্যতা নেই। কমার্শিয়াল ছবিতে যে ধরনের অভিনয়ের দরকার হয় সেটা মনে হয় আমি পারব না। আমি নাচ, গান করতে পারিনা। তবে আমি যে ওরকম ছবি করতে চাইনা এটা ভুল বলা হবে।
- গোয়েন্দা কিরীটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা কতোটা চ্যালেঞ্জের?
গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করতে হলে আবেগটা থাকতে হয়। এই আবেগটা চরিত্রের প্রতি। তবে চরিত্রটি একদম আবেগের বাইরে। একজন গোয়েন্দার আবেগটা থাকা উচিত না। আমার কাছে গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা ভালো ছিল। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে চরিত্র নিয়ে ভাবতে হয়। যেহেতু এটা সাহিত্যের চরিত্র, সেহেতু সেই চরিত্রটাকে ঠিকঠাকভাবে ফুঁটিয়ে তোলা চাট্টেখানি কথা নয়। ঠিকঠাকভাবে না করতে পারলে সমালোচনার মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন : হ্যারি পটার নিয়ে স্মৃতিকাতর হ্যাজেল কিচ
- গত কয়েক বছর ধরে টালিগঞ্জে গোয়েন্দা নির্ভর সিনেমা বেশি নির্মিত হচ্ছে। সিনেপ্লেক্সগুলো রমরমিয়ে চলছে। গোয়েন্দা নির্ভর সিনেমা নির্মাণ বেড়ে যাওয়া সেখানকার ইন্ডাস্ট্রির জন্য কতোটা ইতিবাচক?
এটা একদিকে ভালো। আবার অন্যদিক থেকে খারাপ। বাংলা সাহিত্যে এতো সুন্দর সুন্দর গোয়েন্দা গল্প আছে যা মানুষ পড়ছে। সেকারণে মানুষ দেখতে যায়। মুক্তি পাওয়ার আগে জেনে যায় ছবিটি হিট হবে। তবে আগের লেখা গল্পের উপর নির্ভরশীল হওয়াটা ঠিক নয়। নতুন নতুন গল্প ভাবতে হবে। এটা আমার কাছে নেতিবাচক মনে হয় ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু, কিরীটি নিয়ে ছবি বানালেই হিট। হিট ছবির জন্যই মূলত এ ধরনের গোয়েন্দা নির্ভর ছবি বানানো হচ্ছে। এছাড়া আর কিছু না।
- নতুন নতুন গল্প ভাবার কথা বললেন। কলকাতায় তো প্রচুর রিমেক ছবি নির্মাণ হচ্ছে। যদিও সেখানকার অনেকে বলছেন রিমেক ছবির কারণে টালিগঞ্জ হুমকির মুখে পড়েছে। আপনার মতামত কি এ বিষয়ে?
আমি কলকাতায় শেষ তিন বছরে তিনটি সিনেমা করেছি। আমি তো বলেছি কলকাতায় থাকি না। তাই জানিনা সেখানে কি হচ্ছে! তবে যা খবর পাই তাতে জানতে পেরেছি রিমেক ছবিগুলো এখন চলছে না। দর্শক আর রিমেক ছবি পছন্দ করছে না। তামিল-তেলেগুর ছবি আগেই সবাই দেখে ফেলে। তাই বাংলায় কেউ দেখতে চায় না। টালিগঞ্জের মৌলিক গল্পের ছবির দিকে জোর দিতে হবে।
- পশ্চিম বাংলায় সিঙ্গেল স্ক্রীনগুলোতে দর্শক কমছে। বিপরীতে বাড়ছে সিনেপ্লেক্সের দর্শক। এভাবে চললে সিঙ্গেল স্ক্রীন বন্ধ হয়ে যাবে বলে কি মনে হয়?
ইদানিংকালে সিনেপ্লেক্সে দর্শক বেশি যাচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে কথা বলার আমি সঠিক ব্যক্তি নই। সিঙ্গেল স্ক্রীনের সিনেমা কেনো আলাদা হতে হবে? সিনেপ্লেক্সের সিনেমা আলাদা হতে হবে? সিনেপ্লেক্সে এলিট শ্রেণির মানুষ যাবে, আর সিঙ্গেল স্ক্রিনে এলিট ক্লাসের মানুষ যাবে না। এটা ঠিক নয়। ভালো ছবি দুই জায়গাই চলা উচিত।
আরও পড়ুন : ‘জন্মভূমি’র পোস্টার প্রকাশ, মুক্তি এ বছরেই
- বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে শেষ করতে চাই। বাংলাদেশে আপনার পছন্দের অভিনয় শিল্পীর তালিকায় কে কে আছেন?
যাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি তাদের কথা বলতে পারব। জয়া আহসান আমার অত্যন্ত প্রিয় অভিনেত্রী। তিনি অসাধারণ অভিনয় করেন। শহিদুজ্জামান সেলিমের সঙ্গে কাজ করেছি। দুর্দান্ত অভিনেতা তিনি। এই ছবিতে ফজলুর রহমান বাবুর সঙ্গে অভিনয় করেছি। যদিও তার সঙ্গে এখনও শুট হয়নি। আমি শুনেছি তিনি বড় মাপের একজন অভিনেতা। তিনিও আমার পছন্দের তালিকায় চলে আসবেন বলে মনে করি।
ছবি: আব্দুল্লাহ আল মামুন এরিন
আরও পড়ুন :
অজয়ের তামাশায় চটেছেন কাজল
মাসুদ রানা : বড় চমক ভিলেনে
জয়তু নায়ক জাফর ইকবাল
শ্রদ্ধার নতুন চ্যালেঞ্জ
আরো দেখুন :
লুবনা মারিয়ামের সাক্ষাৎকার: নাচের মানুষ, কাছের মানুষ
https://www.youtube.com/watch?time_continue=4&v=Vlz9HVc3_tY
সারাবাংলা/আরএসও/পিএ/পিএম