ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চায় বিশ্বশক্তিগুলো
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:২০
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ইরানের ওপর একতরফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে নিজেদের গা বাঁচাতে একজোট হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান, চীন, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া।
সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
এই পরিকল্পনায় ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য দেশগুলো অর্থনৈতিক অবরোধ সত্ত্বেও তেহরানকে পাশে রেখে বাণিজ্য চালিয়ে যাবার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত এড়াতে চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইইউ, ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখতে ‘স্পেশাল পার্পাস ভেহিকেল’ বা এসপিভি নামের নতুন একটি আর্থিক লেনদেন কাঠামোর সূচনা করবে বলেও জানায়।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান ফ্রেডরিকা মোগেরিনি বলেন, এসপিভি কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে ইইউ নিয়ম মেনে ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে। এই কৌশলের আওতায়, ইইউভুক্ত নয় এমন দেশগুলোও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারবে।
‘স্পেশাল পার্পাস ভেহিকেল’ বা এসপিভির ব্যাপারে বলা হচ্ছে, মার্কিন অবরোধ থেকে ইরানকে বাঁচাতে এটি একটি বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন উপায়। এই প্রক্রিয়ার আওয়তায় সরাসরি আর্থিক লেনদেন না করে সমান মূল্যের পণ্য বিনিময় করা হবে। যেমন, ইরান ফ্রান্সের কোনও কোম্পানির কাছে তেল বিক্রি করতে পারে। সেই বাণিজ্য হিসাব লেনদেন করে অর্থ পরিশোধ করতে পারে ইতালির কোনও কোম্পানিকে, যেখান থেকে ইরান অন্য কোনো পণ্য কিনবে। এতে সরাসরি ইরানের ব্যাংকিং সিস্টেমের ‘হাত লাগানোর’র প্রয়োজন হবে না। মধ্যস্ততাকারী এই অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রও নিশ্চিত হতে পারবে না।
ইরানের ব্যাপারে অন্য দেশগুলোর এভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ইইউয়ের এই পরিকল্পনায় তিনি বিরক্ত ও হতাশ!
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বরাবরে মতোই নিশ্চয়তা দিয়ে বলছেন, তেহরান পরমাণু চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ থেকে নিয়ম মেনে চলছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোকে চুক্তি ভঙ্গের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
রুহানি বলেন, বাধা দিতে জোটবদ্ধ হওয়া মোটেই শক্তির লক্ষণ নয়। বরং এটি বুদ্ধির দুর্বলতা। জটিল ও পরস্পর সংযুক্ত পৃথিবীর জন্য এটি বিশ্বাসঘাতকতা!
ইরানের অর্থনৈতি ও তেল রপ্তানি বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে মে ও আগস্ট মাসে দুধাপে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে চীর ও ইউরেশিয়া দেশগুলোতে ইরানের তেল রপ্তানি কমে যায়। তবে দেশগুলো কতদিন এই প্রবণতা বজায় রাখবে তা নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাচ্ছিলো না।
তবে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা আইন সংশোধন করে আবারও ইরানকে বিপদে ফেলতে চেষ্টা করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন চাইছে ২০১৫ সালে হওয়া পরমাণু চুক্তিটি থেকে সরে আসার পর নতুন করে ইরানকে চুক্তিতে বাধ্য করা। তবে ইরান বরাবরই তা প্রত্যাখান করেছে।
উল্লেখ্য, ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে হওয়া ভিয়েনার সেই ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি অনুসারে, ছয়টি বৃহৎ শক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিবছর ইরানকে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে রাজি হয়েছিল। বিনিময়ে ইরান কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু গত ৮ মে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে এখনো হুমকি উল্লেখ করে এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় ও দেশ দুটির মধ্যে নতুন সংকট শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক আণবিক কমিশন (আইএইএ) বারবার নিশ্চিত করে বলেছে ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুরোপুরি মেনে চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তা মানতে নারাজ। ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে চাইছে। কিন্তু দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ সত্ত্বেও ইরান গত বছর সাড়া পৃথিবীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো তেল ও গ্যাস বিক্রি করেছে।
সারাবাংলা/এনএইচ/এমআই