আপাদের পায়ের ধুলা নেওয়ার কালচার চিরতরে কবর দেওয়া হবে: ড. কামাল
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:১৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ‘আপাদের পায়ের ধুলা নেওয়ার কালচার’ চিরতরে কবর দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন। একইসঙ্গে নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য টাকা লেনদেনের সংস্কৃতি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেছেন। ‘নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার অপরিহার্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন ছিল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া।
আলোচনায় ড. কামাল বলেন, ‘আজ যারা ঐক্য চায় না, অনৈক্য চায়, তারা সংঘবদ্ধ। জনগণের বৃহত্তর ঐক্য হলে পায়ের ধুলা নেওয়া, কালো টাকার প্রভাব চিরতরে শেষ হবে। দেশে জবাবদিহিতার সরকার গঠন হবে।’ দেশকে রক্ষায় দেশের সব মানুষকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ড. কামাল বলেন, উনারা বলে থাকেন সৃষ্টিকর্তা নাকি ওনাদের রাষ্ট্র পরিচালনার লাইসেন্স দিয়েছে। আসলে তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি করছেন, আর দায়ী করছেন সৃষ্টিকর্তাকে। তারা গণতন্ত্রের নামে রাষ্ট্রের ১২টা বাজিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্যরা অন্ধ ও বোবা। তারা দেশের সমস্যার কথা বলছেন না। তাদের বেতন-ভাতা তো ঠিক আছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, কথা বলবে কেন? সরকার বলছে, এ দেশ সত্যিকারের উন্নয়নশীল হয়েছে। উন্নয়নশীল হলে তো বস্তিবাসীর জন্য আবাসন দেখছি না, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি দেখছি না। বাবা যেমন যেমন ছেলে-মেয়ের জন্য বাড়ি-সম্পদ রেখে যায়, বাড়ির মালিকের দলিল থাকে, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন। এর ৭ অনুচ্ছেদে লেখা আছে, জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। সেই মালিক জনগণের কাছ থেকে রাষ্ট্রের দলিল ছিনিয়ে নিয়েছে। জনগণ কথা বলতে পারছে না। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হচ্ছে না।
‘যাদের কালো টাকা আছে, তারাই এখন দেশের মালিক,’— বলেন ড. কামাল। একইসঙ্গে সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ হলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘দেশের মালিক জনগণ। কিন্তু দলিল জনগণের হাতে নেই। দেশের দলিল একটি দলের কাছে, একটি ব্যক্তির কাছে জিম্মি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কথা বলে একরকম, ক্ষমতায় না থাকলে কথা বলে অন্যরকম। তারা দুই রূপ ধারণ করে।’
তিনি আরও বলেন, আজ মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা নেই। রাষ্ট্র পরিচালনার গুণগত কোনো পরিবর্তন নেই। আগামী নির্বাচনে দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বের সরকার গঠন করে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন করা হবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, খুব শিগগিরই সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আইনজীবীদের মহাসমাবেশ ডাকা হবে। দুর্নীতিবাজ এই সরকারের কাছ থেকে শেয়ারবাজার, ব্যাংকের টাকা লুটপাটের হিসাব নেওয়া হবে। শেয়ার বাজার, লুটপাটের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের কেউ নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, স্বাধীন দেশের জনগণের ভোট চুরি করে তারা ক্ষমতায় রয়েছে। জনগণের টাকা চুরি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা হয়েছে। চোর আবার বড় কথা বলে! আজ ৪৭ বছর পর আমাদের ভোটের জন্য কথা বলতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে সরকার জনগণের ভোট চুরি করে। এত বড় দুঃসাহস! মানুষকে রেসপেক্ট পর্যন্ত করতে জানে না।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে হবে। মাসল দেখাতে আমর আসিনি, কেউ যেন না আসে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে কেয়ারটেকার সরকার মেনেছে, এখন তারা মানে না। দেশটা কি মগের মুল্লুক পেয়েছে তারা? ভোট চোরদের অধীনে আগামী নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর