বার্লিনে হচ্ছে নিজস্ব চ্যান্সারি কমপ্লেক্স
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৯
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জার্মানিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাফতরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনাসহ বাংলাদেশি হাইকমিশনার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নত আবাসন সুবিধা দিতে বার্লিনে একটি চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে অনুমোদনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বার্লিনে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন জমিরও প্রকৃত ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
‘জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ নামে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটির বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী সভায় এটি উপস্থাপন করা হতে পারে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বার্লিনে অবিস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সুবীর কিশোর চৌধুরী প্রকল্পটি নিয়ে কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ হাইকমিশন, বার্লিনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাফতরিক কাজ ও বসবাসের উন্নত পরিবেশ তৈরিসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা যাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন জমির সুষ্ঠু ব্যবহারও সম্ভব হবে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনযোগ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে বর্তমানে ৭৪টি দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস কার্যালয় বা মিশন আছে। প্রাথমিকভাবে ভাড়া করা বাড়িতে মিশনগুলোর কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় যেসব রাষ্ট্রে বাংলাদেশের চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা নির্ধারণ করে স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইনভিত্তিক একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওই নির্দেশনা অনুযায়ীই বিভিন্ন দেশে জমি থাকা সাপেক্ষে বাংলাদেশ মিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগে দূতাবাসগুলোর গুরুত্ব বিবেচনায় নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ তিনটি পর্যায়ে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে একটি অগ্রধিকার তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে জার্মানির বার্লিনে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে ৭৬ কোটি টাকা খরচে ৩৬ কাঠা জমি কেনা হয়। জমিটির কেনার চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে, নির্মাণের সময় ভবনের ফ্লোর এরিয়া রেশিও ১ দশমিক ১ হিসেবে মোট ২ হাজার ৫৫১ বর্গমিটার ফ্লোর এরিয়া নির্মাণ করা যাবে। নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর ৩৬ মাসের মধ্যে তা শেষ করতে হবে। কোনো কারণে সরকার এই সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে প্রথম দিনের জন্য এক মিলিয়ন ইউরো এবং পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ৩ হাজার ইউরো জরিমানা দিতে হবে। চুক্তির আওতায় সর্বোচ্চ ২০ লাখ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
চুক্তিতে আরও বলা হয়, কোনো কারণে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ১২ মাসের মধ্যে সরকার দূতাবাস হিসেবে ভবনটি ব্যবহার শুরু না করলে বিক্রেতার কাছে জমিটি ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে বাংলাদেশ সরকার।
ওই চুক্তি সইয়ের পর প্রকল্পের প্রাক্কলন এবং উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ বিভাগ, গণপূর্ত অধিদপ্তর ও স্থাপত্য অধিদফতরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ২০১৭ সালের ২২ মে থেকে ২৬ মে জার্মানির সফর করে। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই প্রকল্পটি চূড়ান্ত করে চ্যান্সারি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ১৮৫ বর্গমিটার আয়তনের চ্যান্সারি ভবন নির্মাণ এবং ৮৭০ বর্গমিটার আয়তনের হাইকমিশনারের আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর