শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের আশা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৬
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানরা আশা করছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ফের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। আর আগামী বছরও তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার সঙ্গেই বৈঠক করবেন বলেও আশাবাদী।
আরও পড়ুন- মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সময় ক্ষেপণ করছে: প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সাইড লাইনে এস্তোনিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর তারা এই আশাবাদ জানান। বৈঠক শেষে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক। ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী দূত মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সাধারণভাবে সবাই-ই বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকবেন বলে আশাবাদ জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে দুই দিনের যাত্রাবিরতির পর ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক পৌঁছান তিনি। সেখানে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে)। তবে এর আগেই গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ আয়োজিত বিভিন্ন সেশন, সেমিনারে অংশ নিয়েছেন। এর বাইরে বুধবার সাইডলাইনে বেশকিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
এর মধ্যে জাতিসংঘ সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী আলাদা আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কেরস্টি কালিজুলাইদ, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরে, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন স্ক্রানার বারগেনার ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিমালা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ফেডেরিকা মোঘেরিনির সঙ্গে। এছাড়াও ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য প্যারিস এগ্রিমেন্ট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ: টুওয়ার্ডস কপ২৪ অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের একটি অনানুষ্ঠানিক সংলাপেও বক্তব্য রাখেন তিনি।
পরে পররাষ্ট্র সচিব ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘তারা প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানিয়ে বলেছেন, আপনাকে আমরা আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমাদের মাঝে ফেরত পাব।’ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার ভূমিকা এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমকে বিবেচনায় নিয়ে তারা এমন আশাবাদ জানিয়েছেন বলে জানান সচিব।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বৈশ্বিকভাবে যে বার্তাটি উঠে এসেছে, সেটি হলো তারা আগামী বছরও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার সঙ্গেই বৈঠক করবেন।’
ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হাতে হাত ধরে চলবে বলে আশাবাদ জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তারা আরও জানান, শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাও অব্যাহত থাকবে। বিশ্বনেতারা আশাবাদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমস্যাগুলো গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছেন এবং মিয়ানমার যেন নিজ দেশের এসব নাগরিককে দ্রুত ফিরিয়ে নিতে কাজ করে, সেজন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধান বাংলাদেশের হাতে নেই। মিয়ানমারকেই এ বিষয়ক সমস্যার খুঁজে বের করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে এবং এর মধ্য দিয়ে তাদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ তবে রোহিঙ্গারা যতদিন পর্যন্ত নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবে না, ততদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ তাদের দেখভাল করবে বলে জানান তিনি। এসময় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পুনর্বাসন করা হবে জানিযে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তাও আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ৪ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা যাচাই-বাছাই করা আছে। তাদের দিয়েই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হোক।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন স্ক্রানার বারগেনার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছেন। রোহিঙ্গারা যেন মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারেন, উত্তর রাখাইনে তেমন পরিবেশ তৈরিতে তিনি মিয়ানমারকে রাজি করাতে পারবেন বলে আশাবাদ জানান। এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে তিনি ফের বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানান।
গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, তার মধ্যে মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত নিয়োগ ছিল একটি। ক্রিস্টিন স্ক্রানার বলেন, আমাকে নিয়োজিত করার মাধ্যমে সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে যে উন্নয়ন হয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা। এই উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব হয়েছে, তার রহস্য তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন। এ বছর বাংলাদেশের ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে তারা বলেছেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এটা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার চিত্র। বাসস।
আরও পড়ুন-
‘শান্তিরক্ষার আহ্বানে সাড়া দিতে কখনও ব্যর্থ হয়নি বাংলাদেশ’
ছবি: পিআইডি
সারাবাংলা/টিআর