Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিইসি-ইসি সচিবের সঙ্গে চার কমিশনারের মতবিরোধ


২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:১২

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা:  প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ এর সঙ্গে চার কমিশনারের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এই মতবিরোধের কারণ কমিশনের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে কমিশনারদেরকে অবহিত না করেই সিইসি ও ইসি সচিব সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী একযোগে ইসি সচিবকে ইউনোট (আনঅফিসিয়াল নোট) দিয়েছেন। একইসঙ্গে ইউনোটের অনুলিপি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম ইউনোট দেওয়ার বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা চার কমিশনার যৌথভাবে ইসি সচিবকে ইউনোট দিয়েছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা অবহিত না থাকার কারণে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন লোকজন জানতে চাইলে আমরা তাদের বলতে পারি না। তাই আমরা এ বিষয়ে ইউনোট দিয়েছি।’

ইউনোটে আমার উল্লেখ করেছি, নির্বাচন সংক্রান্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং ট্রেনিং ও প্রশিক্ষণসহ সকল বিষয়ে ইসি সচিবালয় থেকে যেন নির্বাচন কমিশনারদের অবহিত করা হয়।

চার কমিশনারের ইউনোট দেওয়ার বিষয়টি সারাবাংলার কাছে স্বীকার করেছেন ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ। তিনি বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনাদের কাছে (চার কমিশনার) মনে হয়েছে, কিছু কিছু নথি উপস্থাপনযোগ্য কিন্তু উনাদের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে না। যদিও অনেক নথি উপস্থাপন করা হয়। তবে উনারা মনে করছেন, প্রশিক্ষণসহ আরও কিছু নথি উপস্থাপন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী নথিগুলোা উপস্থাপন করছি।’

বিজ্ঞাপন

ইসি সচিব বলেন, ‘এটি কোনো সমস্য না, এটি সাধারণ একটা বিষয়। ইউনোট দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জব্দ করার জন্যও না।’

তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে কোনো মতবিরোধও নেই।’

ইসি সূত্র জানায়, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের সঙ্গে কমিশনারদের মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে আরপিও সংশোধন নিয়ে মতবিরোধ প্রকাশ্য চলে আসে।

গত ৩০ আগস্ট ইসির কমিশন সভায় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে আরপিও‘তে পরিবর্তন আনার প্রতিবাদে কমিশনার মাহবুব তালুকদার নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কমিশন সভা বর্জন করেন। তখন থেকে মতবিরোধ সামনে চলে আসে। যদিও এর আগে গত ১১ জুলাই ইসি কর্মকর্তাদের বদলি নিয়ে মাহবুব তালুকদার ইউনোট দেন।

এছাড়াও গত ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হোটেল রেডিসনে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের নির্বাচন কমিশনের সংগঠন ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া ( ফেমবোসা) সম্মেলন নিয়ে কমিশনারদের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন নিয়ে সিইসি ও ইসি সচিবের সঙ্গে কমিশনারদের মতবিরোধ নতুন মাত্রা পায়।

একাধিক কমিশনারের অভিযোগ সার্কভুক্ত আটটি দেশের নির্বাচন কমিশনের এ সম্মেলনের প্রস্তুতি সর্ম্পকে আমরা কিছুই জানতাম না। সবকিছুই ইসি সচিবালয় থেকে করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়েও কমিশনারদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।

ইসি সূত্র জানায়, আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচনের প্রস্তুতি, ইভিএম ব্যবহারের জন্য ইসি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং ঢাকার বাইরে সিইসির নির্বাচনী সফর নিয়েও কমিশনারদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিইসি, আর বিশেষ অতিথি হিসেবে নাম ছিল ইসি সচিবের। ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চার কমিশনারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ ছাড়াও সম্পতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনী সফর শুরু করেছেন।

এরই মধ্যে সিইসি বগুড়া ও দিনাজপুর অঞ্চল সফর করছেন। ইসি সচিবালয় থেকে এই সফরসূচি নির্ধারণ করা হলেও চার কমিশনারের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি কিংবা তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়নি বলে জানা গেছে। এ নিয়েও সিইসির সঙ্গে কমিশনারের দূরত্ব বেড়েছে বলে জানা গেছে।

সারাবাংলা/জিএস/একে

ইসি নির্বাচন কমিশন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর