Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাম্পের ‘নো মোর’ দ.এশীয় মিত্রতায় নয়া মোড়!


২ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:২৭

তুহিন সাইফুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

নো মোর… যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইটের শেষ দুটি শব্দ হৃদপিণ্ড কাঁপিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের। নানা অপকর্মে দেশটির দীর্ঘ দিনের মিত্র এবার সরাসরি বলে দিয়েছে আর নয় অর্থ সাহায্য। ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানকে মিথ্যাবাদী আর ঠকবাজ বলতেও ছাড়েননি। বলেছেন, এত সহায়তা এত কিছু তার বিনিময়ে ওরা আমাদের ‘মিথ্যাচার’ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

জবাবে পাকিস্তান অবশ্য ট্রাম্প তথা যুক্তরাষ্ট্রের এই আস্ফালনকে স্রেফ ‘অনর্থক’ বলে দিয়েছে।

এদিকে ট্রাম্পের টুইট আর পাকিস্তানের জবাবের জেরে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মিত্রতাবাদী রাজনীতিতে পরিবর্তনের আভাস দেখছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত সম্পর্কে নতুন মোড়ের কথা ভাবছেন। আর সে মিত্রতা যদি পাকাপাকি রূপ নেয় তাহলে তার সুফল কিংবা প্রভাবের ছিঁটেফোঁটা বাংলাদেশের ভাগ্যেও জুটবে বলে মত তাদের।

কেউ কেউ অবশ্য এর কোনও কুফলই দেখছেন না। তারা বলছেন, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের এই ঝগড়া আগেও দেখেছেন, আখেরে এর কোনও প্রভাব দুই দেশের সম্পর্কে পড়ে না।

নতুন বছরের শুরুর দিনটিতে টুইটটি করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি পাকিস্তানকে ‘ঠকবাজ’ ও ‘সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য’ হিসেবে অভহিত করেন। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দেয়া অর্থসাহায্যও বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন।

ট্রাম্প তার টুইটে বলেন, ‘গত ১৫ বছর একেবারে বোকার মতো পাকিস্তানকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা আমাদের নেতাদের বোকা মনে করে মিথ্যা আর ঠকবাজি ছাড়া কিছুই দেয়নি।’

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তাদের সামান্য সহযোগিতা নিয়ে যে সন্ত্রাসীদের আমরা আফগানিস্তানে খুঁজে বেড়াচ্ছি, তাদেরই স্বর্গের মতো আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান।’

তিনি বলেছেন, ‘অনেক হয়েছে, আর নয়!’

বছরের প্রথম দিনে ট্রাম্পের এমন টুইটের কি অর্থ দাঁড়ায়? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক পত্রিকা দ্যা ডিপলোম্যাট বলছে, ‘ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই মুখোমুখি অবস্থান বেশ গুরুতর কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ থেকে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ কেমন হতে পারে সে বিষয়েও ধারণা নেওয়া যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই টুইটের পর আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্ক যে আর আগের মতো থাকছে না সেই আভাস ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে ইসলামাবাদকে ২৫৫ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়ার কথা থাকলেও, মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই তা স্থগিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন মিলিটারি ফাইনান্সিং (এফএমএফ)-এর এ সহায়তা পাকিস্তান যদি ফের পেতে চায় তাহলে দেশের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের নির্মূল তাদেরই করতে হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্কের ভাঙনের প্রভাব পড়বে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে। দেশ দুটির বিচ্ছেদের পর এ অঞ্চলের রাজনীতিতে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব আরো বাড়বে। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ভারতের সঙ্গে দূরত্বসহ নানা কারণেই পাকিস্তান-চীন সম্পর্ক এখন থেকে নতুন মাত্রা পাবে। সেই সঙ্গে আমেরিকার ‘সাবেক’ মিত্রকে পাশে পেতে রাশিয়াও জোরেশোরেই চেষ্টা শুরু করবে।

তবে এই প্রশ্নও উঠেছে কে হতে যাচ্ছে আমেরিকার পরবর্তী দক্ষিণ এশীয় মিত্র? ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পে যুক্ত না হয়ে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে একরকম ‘একঘরে’ হয়ে আছে ভারত। ফলে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে ভারতই হতে পারে আমেরিকার পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। অন্তত প্রথমসারির ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও এই ধারণা দিচ্ছে।

এদিকে আমেরিকা-পাকিস্তান টানাপোড়েনে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বাংলাদেশের সামনেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হুসেন সারাবাংলাকে বললেন সে কথা। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনে দরকষাকষির একটা সুযোগ এসেছে।’

পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশ লাভবান হবে এবং কুটনৈতিক ভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধাগুলো উঠিয়ে আনতে পারবে, এমনটাই মত তার।

তবে ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ ও ‘অপরিপক্ক’ আাখ্যা দিয়ে এই ঢাবি অধ্যাপক বলেন, ‘এই অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব বাড়লে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে আমেরিকাকে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছেই ফিরতে হবে।’

এদিকে ট্রাম্পের এই পাগলাটে টুইটের পর পাকিস্তান কর্তৃপক্ষও বেশ নড়েচড়ে বসেছে। টুইটের একটু কড়া জবাবই দিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ। দেশটির বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যম ডনকে দেয়া সাক্ষাতকারে খাজা আসিফ বলেন, ‘আমরা এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছি, আমরা আর পারবো না তাদের সহযোগিতা করতে, সুতরাং ট্রাম্প এখন যে ‘আর নয়’ বলছেন, এটা অনর্থক।’

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের করা যাবতীয় চুক্তি পুণর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দেশটির সরকার। সেই সঙ্গে আমেরিকার কাছ থেকে নেয়া অর্থ সহায়তার যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করে দেয়ার হুমকিও দিয়েছে পাকিস্তান।

এমন উত্তেজক পরিস্থিতির মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে পকিস্তানের বিরুদ্ধে কি কোনো ‘অ্যাকশন’ নিতে যাচ্ছে আমেরিকা? দ্য ডিপলোম্যাট পত্রিকা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের সাথে কথা বলে জানাচ্ছে, এমনটা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই! কারণ, ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও ২০০৯ সালে ইসলামাবাদকে নিয়ে একই রকম ‘কটু মন্তব্য’ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তার দুই মেয়াদে কখনোই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি তাকে।

ধারণা করা হচ্ছে পূর্বসুরীর মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পাগলাটে টুইটও শেষ পর্যন্ত ফাঁকা বুলিই থেকে যাবে!

সারাবাংলা/তুসা/এমএম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর