প্রতিশোধ না আরেকটি অপেক্ষা?
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:৩১
।। স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকাঃ বারবার চোখের সামনে ট্রফি ধরা দিতে দিতে আর দেয়া হয় না। আবারও সেই সুযোগের সামনে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। মঞ্চটা একই। প্রতিপক্ষ চেনা। এশিয়া কাপের ফাইনাল। তৃতীয়বারের মতো ও টানা দ্বিতীয়বার এশিয়ার শ্রেষ্ঠ টুর্নামেন্টের ফাইনালে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। প্রতিশোধ না হয় আরেকটি হতাশার দিন হতে পারে আজকে।
দুবাইয়ে শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শুরু হওয়া এই ম্যাচ শেষে জানা যাবে কার মাথায় উঠছে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট।
ফরমেটটাই শুধু পরিবর্তন হয়েছে। টি-টুয়েন্টি ফরমেটে গত আসরে ২০১৬ সালে ভারতের কাছেই হেরে ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয়নি বাংলাদেশের। তার আগে ২০১২ সালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হেরে ট্রফিতে চুমু দেয়া হয়নি ম্যাশদের। নাসির-সাকিব-মুশফিকদের কান্নায় কেঁদেছে দেশের পুরো জাতি। এবার প্রতিশোধ তুলে সেটা পুষিয়ে দিতে চায় মাশরাফি বাহিনী।
লঙ্কানদের হারিয়ে মিশন শুরু করা পরের দুই ম্যাচের আঘাত সামলে ঘুরে দাঁড়িয়ে পরের দুইটা ম্যাচ পকেটে পুড়ে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। সাকিব-তামিম ছাড়াও যে টাইগাররা তেতিয়ে উঠতে পারে তারই প্রদর্শন হয়েছে পিচে। সেটাও বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে ক্রিকেটারদের। প্রতিশোধের আগুন নিভেনি যে এখনও।
শেষ ম্যাচে সব ক্যাটাগরিতে দুর্দান্ত খেলেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে ক্যাচ ও ফিল্ডিং। পাকিস্তানকে হারানোর পেছনে ক্যাচ ও ফিল্ডিং অসামান্য অবদান রেখেছে। সেটা অব্যাহত রাখতে চায় ম্যাশরা। সঙ্গে সাকিব-তামিমের অবর্তমানকে বুঝতে দিচ্ছেন না মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-মিথুন আর কায়েশরা। শঙ্কার জায়গা একটাই ওপেনিং জুটি না তাসের ঘরের মতো ভেঙে না পড়ে। ওপেনিং জুটির গড় বাংলাদেশের ৯.১১ যেখানে ভারতের গড় ৮৯.১২। বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় ওপেনিং জুটি ভাঙতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে প্রতিপক্ষদের্।
তার কারণ রোহিত শর্মা আর শেখর ধাওয়ান। এই দু’জনে মিলে প্রতিপক্ষদের ধসিয়ে দিয়েছে প্রতিবার। ব্যাটিং লিস্টে সবার উপরে তাই এ দু’জনের নাম। ৮১ গড়ে চার ম্যাচে ৩২৭ রান নিয়েছেন ধাওয়ান একাই। যার মধ্যে দুইটি শতকের ইনিংস আছে! অন্যদিকে চার ম্যাচে ২৬৯ রান সংগ্রহ করা রোহিত শর্মার গড় ১৩৪! এক শতক আর দুই অর্ধশতকের ইনিংস একাই খেলেছেন তিনি। সঙ্গে ৭০ গড়ে পাঁ ম্যাচে আম্বাতি রাইডুও আছেন টপ লিস্টে।
ওপেনিং জুটিই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ম্যাশ বাহিনীর জন্য্য। সেই হিসেবে বোলিংয়েও বেশ এগিয়ে ভারত। কুলদ্বীপ-জাদেজা-বুমরাহ এ ত্রয়ী মিলে নিয়েছেন ২১ উইকেট। ভুবেনেশ্বর ছয় উইকেট নিয়ে কম রানে বেঁধে রাখাতে ওস্তাততো আছেনই। তবে, টাইগারদেরও শঙ্কাটা এ জায়গায়। এক ফিজ ছাড়া কেউই সেভাবে ধারাবাহিক ছিলেন না টুর্নামেন্টজুড়ে। একাই নিয়েছেন উইকেট। ৭ উইকেট নিয়ে টপ সিক্সে থাকা সাকিবতো টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছেন পাকিস্তানের ম্যাচের আগেই। তার অবর্তমানে জ্বলে উঠতে হবে মাশরাফি-রুবেল-মিরাজ-রিয়াদদেরও।
এবার এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার পালা বাংলাদেশের। কিন্তু ফাইনালে যে, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ভারত। যারা কি-না পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই প্রতিপক্ষকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছে। বিশেভাবে চিরপ্রতিন্দ্বন্দি পাকিস্তানকে পাত্তাই দেয়নি টিম ইন্ডিয়া। গ্রুপ পর্বে ৮ উইকেটে ও সুপার ফোরে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে হারায় ভারত।
তারপরও পুরো আসরে এখন পর্যন্ত ভারতের পারফরমেন্স ভাল। যেটা ভালো জানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। তাই তো পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পরই ভারতকে নিয়ে চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন ম্যাশ। ভারতকে শক্তিশালী দল বলে অ্যাখায়িত করে মাশরাফি বলেন, ‘আমরা জানি ভারত অনেক বেশি শক্তিশালী দল। আমাদের সাকিব এবং তামিম নেই। তারপরও আমি আশা করবো ফাইনাল ম্যাচে ছেলেরা তাদের সেরা পারফরমেন্সই প্রদর্শন করবে।’
শিরোপা লড়াইয়ে সেরা পারফরমেন্স করতে মুখিয়ে আছে ভারতও। এমনই ইঙ্গিত দিলেন ভারতের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান দিশে কার্তিক। তিনি বলেন, ‘আমার সেরা ফর্মে রয়েছি। আমাদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। নিজেদের সেরা পারফরমেন্স অব্যাহত রাখতে পারলে শিরোপা জয় অসম্ভব কিছু না।’
এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ১১বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এরমধ্যে দশবারই জয় পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া। একবার জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালের আসরে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিলো টাইগাররা। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ৩৪ মুখোমুখিতে ২৮টিতে জয় পেয়েছে ভারত। বাংলাদেশের জয় ৫টিতে।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিথুন, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, আরিফুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, আবু হায়দার রনি, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মোমিনুল হক।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, আম্বাতি রাইদু, মনীষ পান্ডিয়া, কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দিনেশ কার্তিক, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, যুজবেন্দ্রা চাহাল, ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিত বুমরাহ, খলিল আহমেদ, দীপক চাহার ও সিদ্বার্থ কাউল।
সারাবাংলা/জেএইচ