Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজনৈতিক বিবেচনা নাকি যোগ্যতা, নিয়োগে বিভক্ত বিএসএমএমইউ প্রশাসন


২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:৪১

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘রাজনৈতিক বিবেচনা’ নাকি ‘যোগ্যতা’র ভিত্তিতে নিয়োগ হবে— সে প্রশ্নের সুরাহা না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। আবার সেই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের বিরোধিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-উপউপাচার্য অবরুদ্ধও হয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রীতিমতো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএসএমএমইউ প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮০টি মেডিকেল অফিসার ও ২০টি ডেন্টাল সার্জনের শূন্য পদ পূরণে নিয়োগ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বিএসএমএমইউয়ে। তবে প্রশাসন একমত হতে না পারায় একদিন আগে (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল হান্নানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

আরও পড়ুন- বিএসএমএমইউ’র মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের প্রশাসন চেয়েছিল ‘রাজনৈতিক’ নিয়োগ দিতে। মূলত ক্ষমতাসীন দলঘেঁষা একটি সংগঠনের চিকিৎসকদের নিয়োগ দিতেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়াই শুরু করেছিল ওই প্রশাসন। কিন্তু বর্তমান প্রশাসন চায় চিকিৎসকদের নিয়োগ হোক ‘যোগ্যতার ভিত্তি’তে।

গত বছরের ১ অক্টোবর মেডিকেল অফিসার চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে মেডিকেল অফিসার পদে ১৮০ জন ও ডেন্টাল সার্জন পদে ২০ জন চিকিৎসক নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়। একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছে, একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের দীর্ঘ মেয়াদি চাপে শুরু হয়েছিল এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। তবে বর্তমান প্রশাসন সেই সিদ্ধান্তে ভেটো দিলে শুরু হয় জটিলতা। ২৭ সেপ্টেম্বর তা ‘অনিবার্য কারণে’ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরীক্ষার নতুন তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে— বিএসএমএমইউ প্রশাসন এমন ঘোষণা দেওয়ার পর সেই রাত থেকে প্রতিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করে। পরদিন ক্যাম্পাসে মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি ও বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া এবং আরও দুই উপউপাচার্য (প্রশাসন ও শিক্ষা), বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এসময় উপউপাচার্য (শিক্ষা) ডা. শাহানা আখতার রহমানের কক্ষের বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- নিয়োগ পরীক্ষার দাবি, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অবরুদ্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক নিয়োগ নিয়ে সার্বিক এই অবস্থা নিয়ে বিব্রত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন; একইসঙ্গে বিপাকেও। একাধিক চাকরিপ্রত্যাশী সারাবাংলাকে জানান, এই নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা ঢাকায় এসেছেন, প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের একদিন আগে পরীক্ষা স্থগিত করে প্রশাসন।

সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসক পদে তাদের নিয়োগ দিতে চাপ দেন। এই দাবিতে উপাচার্যকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধও করে রাখা হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ডা. কামরুল হাসান তাদের তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চাকরিপ্রত্যাশী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে অধ্যাপক ডা. কামরুলের আলোচনা হয়।

তিনি তাদের বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুইশ চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই আছে। তোমাদের কাছে অনুরোধ, তোমরা কোনো রকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি কোরো না। আমাদের পক্ষে যতগুলো পোস্ট বের করা সম্ভব, আমরা বের করে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞাপন দেবো। সেই সময় ওই আলোচনার একটি ভিডিও ক্লিপও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র সারাবাংলাকে বলেন, সিদ্ধান্ত ছিল একশ পদে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং বাকি পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। তবে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানের সময়ে সেটি আর সম্ভব হয়নি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদকে (স্বাচিপ) একশ প্রার্থী নির্বাচনের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী একজন চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, বেশকিছু নিবেদিত কর্মী ওই তালিকায় ছিলেন। তারা আসলে ‘ডিজার্ভ’ করেন। আর পলিটিক্যাল ছেলে যদি আসে, তাহলে আসুক না। কী হবে তাতে?

তবে নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে বিএসএমএমইউ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, লিখিত পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে নিয়োগপ্রত্যাশীদের। আর এতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। এর মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং উপউপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহানা আখতার রহমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা এসে জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ছাত্রলীগ হোক আর যেই হোক, লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে হবে।

সূত্র জানায়, এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রশাসনকে। রাজনৈতিক নিয়োগ দিতেই এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশায়িত প্রতিষ্ঠান এবং এখানে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শত শত চিকিৎসক নেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগ থেকে যারা ভালো ফলাফল করেন, তারাই বিভাগের শূন্য পদে নিয়োগ পান।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, সিন্ডিকেট সর্বসম্মতভাবে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য। পরে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।

সারাবাংলা/জেএ/এটি/টিআর

চিকিৎসক নিয়োগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর