কোনো জোটে কাজ হবে না: ১৪ দল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:২৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: কোনো জোট কাজ হবে না। সবচেয়ে বড় জোট মানুষের জোট, সেই জোট শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেই জোট শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের ধাররাবাহিকতা রাখতে সরকারবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনের কর্মী সমাবশে নেতারা এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ‘বিএনপি’র অব্যাহত মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রেরর বিরুদ্ধে’ ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা নিজে নত হয়ে খালেদা জিয়াকে টেলিফোনে অনুরোধ করেছিল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য। অনুরোধ করেছিল সরকারে যোগদান করার জন্য। তিনি সেইদিন মানলেন না। তিনি আন্দোলনের ডাক দিলেন। আন্দোলনে মানুষ নাই। হরতাল হয় না। অবরোধ হয় না। সেদিন যদি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত, তারা যদি প্রমাণ করতে পারত এমনভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাহলে তাদের কথায় যুক্তি থাকত।
‘কোনো সংগ্রাম তারা করে না। আজকে তারা পরাজয় মেনে নিয়েছে। তার কারণ কোনো মানুষ যদি নদীতে পড়ে যায়, সে বাঁচার জন্য খড়খুটোসহ যা পায় তা ধরে বাঁচতে চায়। খালেদা জিয়ার ২০ দল যখন ডুবে যাচ্ছে তখন ওই খড়কুঠো ধরে ধরে, গণফ্রন্ট, অমুক ফ্রন্ট, ধরে ধরে আজকে যুক্তফ্রন্ট করতে চায়। আরও বড় জোট করতে চায় কিন্তু কোনো জোট কাজ হবে না। সবচেয়ে বড় জোট মানুষের জোট, সেই জোট শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেই জোট শেখ হাসিনার নেতৃত্ব।’
টানা মেয়াদে সরকারের মেগা প্রকল্পসহ দৃশ্যমান উন্নয়ন পদক্ষেপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন দেশে পরিণত হয়েছে। মানুষ তা দেখতে চায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপিত হয়ে সারা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থা মানুষ অব্যাহত রাখতে চায় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। শেখ হাসিনা আজকে যখন জাতিসংঘে গিয়েছে, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়করা তার শুভ কামনা করেছেন। তিনি আবার জয়যুক্ত হয়ে ফিরে আসুন, এইটা তারা কামনা করেছেন। শেখ হাসিনা আজকে বাংলাদেশের জাতীয় নেত্রী নন, আজকে তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্বের নেতৃত্ব।’
মানুষ এই ধারা মেনে নিয়েছে এবং এই ধারাকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীতে সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সুষ্ঠ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই দেশে গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম হবে। এইটাই হবে আজকে ১৪ দলের কর্মীদের প্রতিজ্ঞা এবং শপথ। সেইভাবে আগামীতে নেতাকর্মীদের প্রস্ততি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আন্দোলন করবার ক্ষমতা তাদের নাই। আন্দোলন তারা করবে না। আন্দোলনের নামে রেললাইন তুলে ফেলার চেষ্টা করবে। পাহারা দিতে হবে যাতে তুলতে না পারে। আন্দোলনের নামে তারা রাস্তাঘাট বন্ধ করার চেষ্টা করবে। পাহারা দিতে হবে। যাতে বন্ধ করতে না পারে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ যারা করবে তাদেরকে ধরিয়ে দিতে হবে। প্রতিহত করতে হবে।’
সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজক্যলাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, বেশ কিছুদিন ধরেই সামনের নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য, ব্যর্থ করার জন্য; একের পর এক চক্রান্ত চলছে।’
এই মহানগর নাট্যমঞ্চে হাতে হাত ধরে যারা সেদিন শপথ নিলেন তারা কারা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সেই গোঁফধারী ব্যক্তিরা হচ্ছে ওই এক/এগারোর সেনা শাসনের আইনী উপদেষ্টা, সেই এক/এগারোর সেনা শাসনের সাংবিধানিক পরামর্শদাতা। এক/এগারোর মাইনাস টু থিউরির তথাকথিত সংস্কারবাদীরা। যারা দল থেকে বাদ পড়েছে। বহিষ্কৃত হয়েছেন। আজকে তারা যুক্ত হয়েছেন? গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে? আজকে তারা যুক্ত হয়েছেন মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের যদি এতোই জনপ্রিয়তা থাকে, নির্বাচনে আসুন। আমি জানি আপনারা আগামীকাল জনসভা করবেন। ৭ দফা দাবি দেবেন। ৯ দফা লক্ষ্য দেবেন। কথা তো সেই একি। শুনে রাখুন, যদি আবার আগুন সন্ত্রাস হয়। যদি আবার আমার ভাইদের হত্যা করা হয়। যদি আবার শিশু হত্যা হয়। যদি আবার নির্বাচন বর্জনের নামে চারশো স্কুল পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে জনগণ এবার আপনাদেরকে আর ক্ষমা করবে না।’
১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি জামায়াত চক্রান্ত করেছিল যেন আমরা মহানগর নাট্যমঞ্চে আমরা সমাবেশ করতে না পারি। কিন্তু আমরা হলাম বাঘের বাচ্চা। যত বাধা দেবে আমরা বেশি অগ্রসর হবো। তাই আজকে কর্মী সমাবেশ নয় জনসমুদ্র হয়ে গেছে।’
‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে। বাংলার জনগণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। তাই এখন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের কর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের ঘরে বসে থাকার সময় নাই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এটা ২০১৪ সাল নয়। ২০১৮ সাল। তোমাদের মরণকাল ইনশাল্লাহ এই বছরেই হবে। বিএনপি-জামায়াত লোক ভাড়া করছো। ওই পরিত্যক্ত পলায়ণপর নেতাদের ভাড়া করছো। যাদের নীতি নাই। ঠিকানা নাই। পলায়ণরতে অভ্যস্ত। ওই নেতাদের ভাড়া করেছো। খেলার মাঠে প্লেয়ার ভাড়া করা হয়, রাজনীতিতে নেতা ভাড়া হয় এই প্রথম দেখলাম।’
আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন, বিশ্ব নেতারা বলেছেন। আর এই সমস্ত চুঁনোপুটি দুর্নীতিবাজ, হাওয়া ভবনের দুষ্টুরা আজকে মাঠে নেমেছে। তাই আগামী নির্বাচনে জনগণকে ভুল না করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি যদি বেশি চক্রান্ত করেন। কালো হাত ভেঙে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতকে কোনো ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জেপি) চেয়ারম্যান পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জ বলেন, ‘যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। তাদের মুখে যখন সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শোনা যায়। তখন দেশের মানুষ, পৃথিবীর মানুষ এটা গ্রহণ করতে চায় না। নির্বাচন আসছে, নির্বাচন হবে। নির্বাচনের বিকল্প দেশে আমরা অনেকে সময় অনেক কিছু দেখেছি। কিন্তু সেটা দেশবাসীর মঙ্গল সাধন করে না। যারা সেইদিন পর্যন্ত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সঙ্গে ছিলেন, যারা নির্বাচন করার কথা চিন্তাও করেন না। তারা আজকে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেন। এটা দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। পৃথিবীর মানুষ গ্রহণ করবে না।’
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সমাজের প্রিভিলেজ তথা সুবিধাভোগী মানুষ দাবি করে শরীফ নুরুল বলেন, ‘তাদের এ সমাবেশে যারা নিরন্ন মানুষ অবহেলিত মানুষ এবং অনগ্রসর মানুষ তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তারা এখানে সমবেত হয়েছে আমরা যে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে চাই, সেই অব্যাহত ধারাকে নসাৎ করার জন্য।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আজকে ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার চক্রান্ত হচ্ছে।’
মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এছাড়াও জোট নেতাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জাসদ একাংশের নেতা শিরীন আকতার, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুর বশর মাইজভাণ্ডারী, গণতন্ত্রী পার্টির শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নিম চন্দ্র ভৌমিক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক শাহে আলম মুরাদ।
সারাবাংলা/এনআর/একে
আরও পড়ুন
বিভাগীয় ৩ শহরে সমাবেশের ঘোষণা ১৪ দলের