Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্লাইড চাপায় শিশুর মৃত্যু, অভিযোগের আঙুল শিক্ষক-চিকিৎসকের দিকে


২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:০৮

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

রাজবাড়ী: আলাদিপুর আর.সি. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লাইড চাপা পড়ে আব্দুল আলিম শেখ নামে সাত বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগ, বিদ্যালয় ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আলিমকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।

আলিম ওই স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবার নাম মামুন শেখ। তাদের বাড়ি আলাদিপুর মধ্যপাড়া গ্রামে।

মামুন শেখ সারাবাংলাকে বলেন, শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে আমি ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আলাদিপুর বাজারে আসি। বাজারের পাশেই স্কুলটি। বাজারে পৌঁছে খবর পাই আমার ছেলে স্কুলে স্লাডের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে। দ্রুত ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সঙ্গে স্কুলের শিক্ষকরাও যান। সেই সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক ডা. মনিজা। ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছি- কিন্তু কোনো চিকিৎসক আসেননি। ডা. মনিজাকে বারবার ডাকা হয়েছে, তিনিও আসেননি। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট তিনি মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছিলেন।

“আমি বারবার ডা. মনিজার কাছে মিনতি করেছিলাম, তখনও আমার ছেলে কথা বলছিল। কিন্তু ডা. মনিজা গুরুত্ব দেননি। বিনা চিকিৎসায় শেষ হয়ে গেল আমার ছেলেটা”- বলেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন মামুন।

তিনি বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল। স্কুলে যে স্লাইডের নিচে আমার ছেলে চাপা পড়েছে, সেটা ঠিক মতো বসানো ছিল না। স্লাইডটা ছিল আলগা, যে কারণে ওটা কাত হয়ে পড়ে যায়। আমার ছেলে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল, তখন ওর গায়ের ওপর পড়ে যায় স্লাইডটি। স্কুল কর্তৃপক্ষ একটু সচেতন হলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

এই প্রসঙ্গে আলাদিপুর আর.সি. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, স্লাইডটি আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত হাসান শিক্ষার্থীদের জন্য দিয়েছেন। শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) খেলনাটি স্কুলে এনে তারা রেখে গেছেন। বন্ধের দিন হওয়ায় আমরা বিষয়টি জানতাম না। যে কারণে খেলনাটি আলগা অবস্থায় ছিল। সকালে শিশুরা খেলছিল, সেই সময় আলিম পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল। হঠাৎ খেলনাটি উল্টে আলিমের ওপর পড়ে। এতে আলিম আহত হয়। আমরা তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগে ভর্তির স্লিপ, এক্স-রে এবং বিভিন্ন অজুহাতে সময় বিলম্ব করেন চিকিৎসক মনিজা। তাকে বারবার ডাকা হলেও তিনি আলিমকে দেখতে আসেননি। এভাবে ৪০-৪৫ মিনিট জরুরি বিভাগের বেডে ছটফট করে মারা যায় আলিম।

তিনি বলেন, চিকিৎসকের অবহেলার কারণে আলিম মারা গেছে। আমরা চিকিৎসক মনিজার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষকরা শিশুদের নিষেধ করলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না।

আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শওকত হাসান সারাবাংলাকে বলেন, স্লাইডটি আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে স্কুলে দিয়েছি। স্থায়ীভাবে স্থাপন করার পর যেন বাচ্চারা খেলতে পারে। দু’এক দিনের মধ্যেই কাজটি করা হতো। কিন্তু যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত।

এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসকের অবহেলার বিষয় উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেছেন আলিমের স্বজনরা। এরপর একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শিশু মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আলী আহসান তুহিন বলেন, ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম না। হাসপাতালে এসে শিশুটির সব ফাইলপত্র দেখেছি। এক্স-রে পরীক্ষায় দেখা যায়, শিশুটির কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। সেই সঙ্গে তার পেটের নিচের অংশ ফুলে উঠেছিল। এমন রোগীর চিকিৎসা হলো ভেন্টিলেশন। যা আমাদের এখানে নেই। আমাদের হাসপাতালে যদি ভেন্টিলেশন বা আইসিইউ সিস্টেম থাকতো তাহলে আজ এমন ঘটনা ঘটতো না।

রোগীর স্বজনরা ওই সময় দায়িত্বরত এক নারী চিকিৎসকের নামে অবহেলার অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করবে কমিটি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বলেন আলী আহসান তুহিন।

সারাবাংলা/এটি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর