Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিবন্ধন নেই দুই বড় জোটের ১৫ দলের


৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:২৫

।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল সকরেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোটে থাকা অধিকাংশ শরিক দল নিজস্ব প্রতীকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে এসব শরীক দলের নিবন্ধন না থাকায় নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই দলগুলোর।

নিবন্ধনবিহীন এসব দল সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে, হয় জোটের প্রতীকে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাইলে প্রার্থীদের নির্বাচনে আসতে হবে বেশ কিছু কঠিন শর্ত পূরণ করে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সারাবাংলাকে।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ইসির নিবন্ধিত দলগুলো কেবল দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। বিপরীতে কোনো রাজনৈতিক দলের যদি ইসির নিবন্ধন না থাকে তাহলে ওই দলের কোনো প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না।

ইসি সচিব আরও জানান, নিবন্ধনবিহীন কোনো রাজনৈতিক দল থেকে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। আবার ইচ্ছা করলে জোটের নেতৃত্বাধীন দলের দলীয় প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।

ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৪০টি নিবন্ধতিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের ৬টি ও মহাজোটের ৩টি মিলে এই জোটে ৯টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে নিবন্ধিত দলের সংখ্যাও ৯টি দল। ফলে প্রধান দুই বড় দলের জোটে ৩৩টি শরীক দলের মধ্যে মাত্র ১৮টি দলের ইসির নিবন্ধন আছে। বাকি ১৫টি দল জোটে থাকলেও তাদের নিবন্ধন নেই। অন্যদিকে  দুই জোটের বাইরে নিবন্ধিত দল রয়েছে ২২টি। জোটের বাইরে থাকা দলগুলোকে জোটে ভিড়ানোর জন্য প্রধান দুই জোট থেকেই দেখানো হচ্ছে নানা ধরনের প্রলোভন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে বড় দুই জোটের নাম অনুসারে ৩৪টি রাজনৈতিক দল থাকার কথা থাকলেও, বাস্তবে দল রয়েছে ৩৩টি। এর মধ্যে ২০ দলীয় জোটে ২০টি রাজনৈতিক দল থাকলেও ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে ১০টি দল। তবে মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি এবং বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন মিলে এই জোটে দলের সংখ্যা ১৩টি। এ ছাড়াও যুক্তফ্রন্ট ও বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টে থাকা কয়েকটি  দলের নিবন্ধন থাকলেও বাকি দলগুলোর নিবন্ধন নেই।

আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই : ইসি সচিব

ইসি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোকে দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে আগে কোনো বাধা নিষেধ না থাকলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হয়। সংশোধনী আরপিওতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইসিতে  নিবন্ধন করার বিধান যুক্ত করা হয়। যেখানে বলা হয়, ইসিতে কোনো দল নিবন্ধিত না হলে ওই দল দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারবে না। একইসঙ্গে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এসব শর্তেও মধ্যে রয়েছে, ‘নিবন্ধন পেতে একটি দলকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো নির্বাচনে অন্তত একটি সংসদীয় আসন পেতে হবে, অথবা যেকোনো একটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ওই আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে। এ ছাড়াও আরপিওতে বলা হয়েছে, দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে, দেশের অন্তত এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কমিটি এবং কমপক্ষে ১০০ উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় ন্যূনতম ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রামাণিক দলিল থাকতে হবে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল: ২০ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোর মধ্যে আছে, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ ভাসানী, পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) এই সাতটি দলের নিবন্ধন নেই। এ ছাড়া ইসলামী ঐক্যজোট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) মূল অংশ ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করলেও দুটির খণ্ডিত অংশ জোটের সঙ্গে রয়েছে। তবে খণ্ডিত অংশ দুটির নিবন্ধন নেই। আবার সাম্যবাদী দলের একটি অংশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করে বিএনপি জোটে যুক্ত হয়েছে, তাদেরও নিবন্ধন নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করায় স্থগিত রয়েছে দলটির নিবন্ধন। ফলে ২০ দলীয় জোটে থাকা ১১টি রাজনৈতিক দলের কোনো নিবন্ধন নেই।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির জোটে থাকা নিবন্ধিত ৯টি দল হলো, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পাার্ট-বিজেপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল-জাগপা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পাটি-বাংলাদেশ ন্যাপ, খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন : সিইসি-ইসি সচিবের সঙ্গে চার কমিশনারের মতবিরোধ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট: আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, জাসদ ও ১১ দলের সমন্বয়ে ২০০৪ সালে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়। জোট গঠনের শুরুতেই ১১ দলীয় জোটের একাধিক শরিক দল এ জোটে যুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে। ফলে একে ‘১৪ দলীয় জোট’ বলা হলেও এ জোটে দল সংখ্যা আট থেকে ১০টির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে ১৪ দলীয় জোটে ১০টি দল রয়েছে। যাদের মধ্যে কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশীদ খান) ও গণ-আজাদী লীগ-এ ৪টি দলের ইসির নিবন্ধন নেই। পরে জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন ১৪ দলীয় জোটে যোগদান করলে দল সংখ্যা ১২টি হয়। জাতীয় পার্টি নিয়ে মহাজোট গঠন করলে ১৪ দল ও মহাজোটে নিবন্ধিন দলের সংখ্যা ৯টি এবং দলের সংখ্যা ১৩টি।

এদিকে ১৪ দল ও মহাজোটে থাকা নিবন্ধিত দলগুলো হলো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি,  বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল-এমএল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি-জেপি ও জাতীয় পার্টি।

দুই জোটের বাইরে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ২২: বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট- (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, ঐক্যবন্ধ নাগরিক আন্দোলন, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), গণফ্রন্ট, গণফোরাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), জাকের পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, কৃষিক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্ট।

সারারাবাংলা/জিএস/এমআই

আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশন বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর