সম্পাদক পরিষদের আপত্তি নিয়ে আলোচনা হবে মন্ত্রিসভায়
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:১৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: জাতীয় সংসদে সদ্য পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে যে আপত্তি তোলা হয়েছে তা নিয়ে মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশ হয়। এই আইনটির কিছু ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে আপত্তি ওঠে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে। আইনটির প্রয়োজনীয় সংস্কার চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।
এরই ধারাবাহিকতায় সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সম্পাদক পরিষদের সদস্যরা।
বৈঠকের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে যে, সকলেই এ আইনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। তবে তারা যে ধারাগুলো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। মন্ত্রিসভার আলোচনায় যে ‘টার্ম অব রেফারেন্স’ আসবে সেটি নিয়ে আমরা সম্পাদকদের সঙ্গে পরবর্তীতে আলোচনা করব।’
সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ধারায় বলা হয়েছে , কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, প্রচারণা ও মদদ দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর সর্ব্বোচ শাস্তি ১৪ বছরের সাজার পাশাপাশি জরিমানা দিতে হবে ৫০ লাখ টাকা।
তবে আইনের ২১ ধারা বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন,‘আলোচনায় সবাই একমত হয়েছেন যে ২১ ধারাটি যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।’
ধারা ২৫ এ বলা হয়েছে, কেউ যদি ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভয়-ভীতি দেখায় তাহলে তাকে তিন বছরের জেল বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ২৮ এ বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করার জন্য ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ করে, তাহলে তাকে অনধিক ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে তাকে অনধিক ১০ বছেরের কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৩১ এ বলা হয়েছে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা বিভিন্ন শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়, তাহলে তা ডিজিটাল অপরাধ। এই অপরাধের জন্য ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ধারা ৩২ এ বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করলে তা হবে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির শামিল। আর এটি হবে অজামিন যোগ্য অপরাধ। এমন অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে- কোন ব্যক্তি প্রথমবার এই অপরাধে দোষী সাব্যস্থ হলে অনুর্ধ ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা ২৫ লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আর একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা বারবার ওই অপরাধে দোষী প্রমাণীত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। এই প্রেক্ষাপটে গত ৯ এপ্রিল বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠায় সংসদ। সাংবাদিকদের তিনটি সংগঠন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিলটি নিয়ে দুই দফা বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
বৈঠক শেষে আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সদস্য ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের কাছে আইনটির কয়েকটি ধারা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। আমরা আইনটি পুরোপুরি বাতিল চাইনি, আমরা চাই এটির প্রয়োজনীয় সংস্কার হোক। এই আইনের কিছু ধারা আছে বাকস্বাধীনতা, স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি। এই আইনের কিছু ধারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি ও সাংবাদিকতার নীতি পরিপন্থি। সেগুলোর বিষয়ে আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি।’
সারাবাংলা/এইচএ/একে
আরও পড়ুন
ডিজিটাল আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন ইইউ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাকস্বাধীনতা দমনে ব্যবহৃত হতে পারে