Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নিজেকে রাজাকারের বাচ্চা বলে যে, তেমন মেধাবী চাই না’


৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:২৭

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আপোষ না করার আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা। তিনি বলেছেন, একটি চাকরির জন্য ‘আমি রাজাকারের বাচ্চা’ বলে যে নিজেকে, দেশে তেমন মেধাবী আমরা দেখতে চাই না।

রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীতে বঙ্গবন্ধু মেধাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে নুজহাত এই আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার এইচ টি ইমাম।

বিভিন্ন স্কুলের বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নুজহাত বলেন, ‘আমি চাই, তোমরা মুক্তিযোদ্ধার মতো হবে। দেশের জন্য বুক চিতিয়ে দেওয়ার সাহস যেন তোমাদের থাকে। তোমরা কখনোই জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগী বিএনপির সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করবে না। আমার বাবার খুনি হচ্ছে ওই জামায়াতিরা। তোমরা কখনো খুনীদের সঙ্গে আপোষ করবে না।’

‘দেশকে ভালোবাসবে, দুর্নীতি করবে না। মন্ত্রী-এমপি হওয়া লাগবে না। আমলা হওয়া লাগবে না। তোমরা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা হও, তোমাদের পেছনে সারা দেশ থাকবে।’

তিনি বলেন- মেধাবী মানে কি শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মন্ত্রী-এমপি, আমলা হওয়া ? সেটাই কি জীবনের সব? একটা বড় গাড়ি হবে, বড় চাকরি করব, অনেক বেশি টাকা আয় করব, আমার একটা বড় পাজেরো গাড়ি থাকবে, সেটাই কি জীবনের সফলতা? আমরা কি সেটাই অর্জন করতে চায়? বঙ্গবন্ধু কি আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছেন ?

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নুজহাত বলেন, তোমরা বৃত্তি পেয়েছ, তোমরা মেধাবী। আমি তোমাদের মাঝে এসেছি এ জন্য যে, আমার ধারণা তোমাদের সঙ্গে এভাবে কথা বলতে বলতে একদিন বঙ্গবন্ধুর মতো কেউ বের হবে।

বিজ্ঞাপন

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তিনি বলেন, ‘তোমরা হবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মতো। তারা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বিচলিত হননি, হাসিমুখে মৃত্যুকে মেনে নিয়েছেন কিন্তু পাকিস্তানিদের দালালি করেননি।’

তিনি আরও বলেন, তোমরা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের মতো হবে, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মতো হবে। তারা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেঈমানি করেননি। আমি সেরকম মেধাবী দেখতে চাই।

‘আমি চাই তুমি একদিন বঙ্গবন্ধুর মতো হবে। তুমি একদিন এবারের সংগ্রাম বলে ডাক দেবে, আমরা আবার যুদ্ধে যাব, আমরা জামায়াত-শিবির নিশ্চিহ্ন করব, তুমি সেরকম মেধাবী হবে।’

একই অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমাম নুজহাতের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘নুজহাতের যে কান্না, এটা এখন আর শোক নয়। এটা এখন আমাদের গর্ব। এই শোক এখন আমাদের শক্তি। শোককে শক্তিতে পরিণত করা আমাদের শিখিয়ে গেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘শুধু ভালো পড়ালেখা করলে কিংবা জিপিএ-ফাইভ পেলেই হবে না। জিপিএ-ফাইভ বললেই এখন আঁতকে উঠি। তোমাদের স্কুলে কি জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় ? তোমাদের স্কুলে কি জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয় ? তোমরা কি শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে পারো ?’

তিনি আরও বলেন, আমি বাঙালি। আমি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের বাঙালি। এই পরিচয় আমাদের গর্বিত করে। যত মেধাবীই হোন, বাঙালি পরিচয় দিতে হবে গর্বভরে। আমরা বাঙালি। আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছি। সারা বিশ্ব মিয়ানমারের নিন্দা করছে।

সততা এবং দেশপ্রেম নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক হবার আহ্বান জানান এইচ টি ইমাম।

বিজ্ঞাপন

নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ফাউন্ডেশন।

সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাজ্জাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সীমান্ত তালুকদার এবং সংগঠনের উপদেষ্টা মো. ইমরান।

অনুষ্ঠানে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৫৭৪ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

এইচ টি ইমাম নুজহাত চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর