Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল চেয়ে ৪০ শিক্ষকের বিবৃতি


৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:১০

।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাবি: ডিজিটাল আইনের নিবর্তনমূলক ধারা বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও মিডিয়া স্টাডিজের ৪০ জন শিক্ষক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক সাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের আগেই এ আইন পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে।

রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) পাঠানো ওই বিবৃতিতে উল্লেখিত তিনদফা দাবি হলো-আইনের বিতর্কিত ও নিবর্তনমূলক ধারাগুলোকে (যেমন ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২, ৪৩) রদ করা,  অবশিষ্ট প্রত্যেকটি ধারাকে জামিনযোগ্য করা ও শাস্তির মাত্রা কমানো এবং পরোয়ানা ছাড়া পুলিশের অবাধ গ্রেফতারের, তল্লাশি ও জব্দ করার ক্ষমতা প্রত্যাহার করা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ৫৭ ধারা এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন ধারায় সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঠাঁই নিয়েছে। এ আইন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার তথা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করবে। এ আইন স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে রুদ্ধ করে দেবে। এ আইন ব্যাপক আকারে মানুষকে হয়রানি করার পথ উন্মুক্ত করে দেবে। ফলে সব ধরনের মাধ্যমে স্ব-নিয়ন্ত্রণ বা সেল্ফ সেন্সরশিপ বৃদ্ধি পাবে। অংশিজন হিসেবে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও মিডিয়া স্টাডিজ বিষয়ক শিক্ষকেরাও এই আইনটি পুনর্বিবেচনার দাবি তুলছি।

এতে আরও বলা হয়, এ আইনের অন্যতম মানবাধিকারবিরোধী দিক হলো, এ আইনের মোট ১৪টি ধারার ক্ষেত্রে যেকোনো কিছু আমলযোগ্য ও জামিন-অযোগ্য এবং রকমভেদে শাস্তির অতি উচ্চমাত্রা। এতগুলো ধারা জামিন-অযোগ্য রাখা শাস্তির মাত্রার সূত্রেই আমরা ধারণা করতে পারি এই আইনটি প্রবর্তন করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারী, লেখক ও সাংবাদিকদের নিবর্তন করার জন্য।

বিজ্ঞাপন

আইনে অনেক বিষয়ের পরিপূর্ণ সংজ্ঞায়ন নেই উল্লেখ করে বলা হয়, এ আইনের অস্পষ্টতার যথেচ্ছাচার ব্যবহারের সম্ভাবনা প্রবল, যেভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা। এ অস্পষ্টতার কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়বে গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও গবেষকেরা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য নথিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। আর নথিপত্রের জন্য কোনো না কোনো অফিসে যেতে হয় এবং মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ক্যামেরা ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্য রেকর্ড বা চিত্র ধারণ করতে হয়। আর এটা তার পেশাগত দায়িত্ব। এটা কখনো বেআইনি হতে পারে না। ৩২ ধারাটির কারণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা রুদ্ধ হয়ে পড়বে। এই ধারাটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ের গবেষণার ক্ষেত্রকেও স্তব্ধ করে দেবে।

এ ছাড়া আইনটির ২১, ২৫, ২৮, ৩১, ৩২ ও ৪৩ নম্বর এ ছয়টি ধারা নিয়ে শিক্ষকদের তীব্র আপত্তি রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, লেখক-সাংবাদিক কিংবা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী যেকারোর জন্যই এ আইনের ভয়ংকর দিকটি হলো, এর ৪৩ ধারায় পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, জব্দ ও তল্লাশি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই দেশে গুম অপহরণের পাশাপাশি নানান রকম পুলিশি হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। তাই, পুলিশকে দেওয়া এ ক্ষমতারও অপপ্রয়োগ ঘটবে বলে আমরা আশঙ্কাবোধ করছি। এতে জননিরাপত্তার পরিবর্তে জনহয়রানি বাড়বে, পুলিশি হয়রানিও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠবে।

আরও বলা হয়েছে, আইনের খসড়ায় গুপ্তচরবৃত্তি শব্দটি বাদ দিয়ে বিতর্কিত অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ কে সন্নিবেশ করা হয়েছে। আমাদের বোধগম্য নয়, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে দেশে যখন অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হতে চলেছে, তখন মান্ধাতা আমলের সেই নিবর্তনমূলক আইন সন্নিবেশ করার মাধ্যমে সরকার কী উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়? আমরা জানি নতুন ডিজিটাল বাস্তবতার উপযোগী আইন প্রণয়ন করা দরকার, কিন্তু সেই আইন ব্যবহারকারীদের জন্য নিবর্তনমূলক নয়, সমর্থনমূলক হতে হবে। আর যারা হীন উদ্দেশে সাইবারস্পেসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে, তাদের বিচারের জন্য যথেষ্ট আইনকানুন ইতোমধ্যে বিদ্যমান আছে, তার কিছু হালনাগাদকরণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যুক্ত হতে পারতো।

বিজ্ঞাপন

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও মিডিয়া স্টাডিজের শিক্ষকরা হলেন:

১। গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২। কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩। ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪। রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৫। আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৬। আ-আল মামুন, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৭।  তানিয়া সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, স্ট্যামফের্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
৮। সুবর্ণা মজুমদার, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৯। সায়মা আলম, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১০। জাহেদ আরমান, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, কলেজ অব ম্যাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া আর্টস, সাউদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
১১। উজ্জ্বল মণ্ডল, সহকারী অধ্যাপক, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি
১২। সুমন রহমান, অধ্যাপক, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস
১৩। সজীব সরকার, সহকারী অধ্যাপক, জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
১৪। নাসরিন আক্তার, লেকচারার, জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
১৫। মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, স্ট্যামফের্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
১৬। তপন মাহমুদ, সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, স্ট্যামফের্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
১৭। মাহমুদ হাসান কায়েশ, লেকচারার, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
১৮। সামিয়া আসাদী, সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, স্ট্যামফের্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
১৯। মোবাশ্বার হাসান, পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ ফেলো, ডিপার্টমেন্ট অব ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব অসলো
২০। আফরোজা সোমা, সহকারী অধ্যাপক, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ
২১। নন্দিতা তাবাসসুম খান, সিনিয়র লেকচারার, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস
২২। দেলোয়ার হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৩। কাজলী সেহরীন ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৪। আব্দুর রাজ্জাক খান, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৫। মার্জিয়া রহমান, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৬। খন্দকার তানভীর মুরাদ, শিক্ষক, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট

২৭। জায়েদুল আহসান পিন্টু, খণ্ডকালীন শিক্ষক, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ
২৮। সাহস মোস্তাফিজ, প্রভাষক, জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
২৯। মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
৩০। সুদীপ্ত শর্মা, সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
৩১। কাজী মামুন হায়দার, সহকারি অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৩২। আনিস রহমান, টার্ম লেকচারার, স্কুল অব কমিউনিকেশন, সাইমন ফ্রেজার ইউনিভার্সিটি, কানাডা
৩৩।কাজী আনিছ, সিনিয়র লেকচারার, জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
৩৪। সেলিম রেজা নিউটন, সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

৩৫। হাবিবা রহমান, সহকারী অধ্যাপক, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৬। শামীম মাহমুদ, শিক্ষক, ইনস্টিটিউট অফ জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ, হামবুর্গ ইউনিভার্সিটি, জার্মানি
৩৭। মো. রাইসুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
৩৮। আমিনা খাতুন, প্রভাষক,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৯। ইব্রাহিম বিন হারুন, প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
৪০। শেখ জিনাত শারমিন, প্রভাষক, প্রিন্টিং অ্যান্ড পালিকেশন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সারাবাংলা/কেকে/এমআই

ডিজিটাল আইন নিবর্তনমূলক ধারা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর