জেলের জালে হাসছে ইলিশ, বিক্রেতার মুখেও হাসি
১ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:৩১
।। আবদুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জাল গুটালেই ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসছে রুপালি ইলিশ। যাচ্ছে রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে। হঠাৎ বাজারে ঢুকলে মনে হবে যেন ‘ইলিশ উৎসব’ চলছে। অধিকাংশ মাছ বিক্রেতার ডালায় শোভা পাচ্ছে রুপালি ইলিশ।
গত কয়েকদিন ধরেই মাছের বাজারে ইলিশের দাম সবচেয়ে কম। তাই ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষ এখন জাতীয় মাছ। তবে চলতি সপ্তাহে এই চাঙাভাব পড়ে যাবে বলে মনে করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। কারণ, এক সপ্তাহ পর ফের ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে।
রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) কারওয়ান বাজার এবং রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। শুধু বাজার, বেড়েছে মৌসুমি মাছ বিক্রেতা। ঢাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে, অলিগলিতে ফেরি করে ইলিশ মাছ বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে।
তারাও বলছেন, এটা সম্ভব হয়েছে প্রজনন মৌসুমে এবং জাটকা ইলিশ ধরতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায়। এখন কম দামে বড় ইলিশ পাচ্ছেন বিক্রেতারা।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ১৮শ’ টাকায়। গত সপ্তাহেও বিক্রি হয়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকায়। এছাড়া ১ কেজি ওজনের এক হালি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত।
দুই হালি ইলিশ কিনে বাড়ি ফিরছেন রবিউল ইসলাম জুয়েল। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। বললেন, ইলিশ মাছের দাম এখন বেশ কম। এক হালি মাছ কিনলাম ১৮শ’ টাকায়। এই দামে ইলিশ পেয়ে ভালো লাগছে।
শরীফুল ইসলাম এসেছেন মিরপুর থেকে। সঙ্গে তার দুই বন্ধু। তাদের হাতে ইলিশ ভরা ব্যাগ। জানালেন, তিন বন্ধু মিলে ছয় হালি ইলিশ কিনেছেন তারা। চলছে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি।
মাছ বিক্রেতা জামাল উদ্দিন জানান, কয়েকদিন ধরে ইলিশ মাছ বেশ সস্তায় বিক্রি হচ্ছে। এখন এক হালি মাছের দাম দুই হাজার টাকা। অন্য সময় এ রকম সাইজের এক হালি মাছ আমরা চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করি।
কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা বাবুল মিয়া জানান, ‘মৌসুমে এখনই সবচেয়ে কম দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়াছে, যে কারণে বাজারে ইলিশের আমদানিও বেড়েছে।
অনেকেই এখন ইলিশ বিক্রি খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। জমিলা বেগম এমনই একজন। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে তিনি জানান, কারওয়ান বাজারে মাছের দোকানে তিনি পানি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। কয়েকদিন থেকে তিনি ফুটপাতে ইলিশ বিক্রি করছেন। রোববার তিনি চার হালি ইলিশ মাছ কিনে ফুটপাতে বসেন বিক্রির জন্য। তার মতো আরও অনেকেই মাছ কিনে বিক্রি করছেন। মাছের দাম কম হওয়ায় বিক্রিও বেশ ভালো, জানালেন জমিলা বেগম।
বাজারে এখন চট্টগ্রামের এবং পদ্মার ইলিশ থাকলেও ক্রেতার পছন্দ পদ্মার ইলিশ। বিক্রেতাদের মুখেও পদ্মার ইলিশের হাঁক-ডাক। চট্টগ্রামের ইলিশের চেয়ে পদ্মার ইলিশের দাম তুলনামূলক বেশি।
মৎস অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. রাশেদুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ইলিশ মাছ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এটা সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিয়েছেন। এই সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থপনা করতে পারলে এই খাত থেকে আমাদের নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে মা ইলিশ রক্ষা, জাটকা ধরা বন্ধ, প্রজননের সময় দেওয়া ইত্যাদি বিষয় কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। জেলেদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যে সময় ইলিশ ধরা বন্ধ- সে সময় তারা যেন আর্থিক সংকটে না পড়েন। আশা করছি, আগামী দিনে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমাদের অধিদফতর মাছ উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে। ইলিশের উৎপাদন যখন একেবারেই কমে এসেছিল, তখন কিছু সুপারিশমালার ভিত্তিতে মৎস অধিদফতর ইলিশ উৎপাদনে নজর দেয়। প্রশাসনের সব সেক্টরের কর্মকর্তারা আমাদের সহায়তা দিচ্ছে। যে কারণে দিন দিন ইলিশ উৎপাদন বাড়ছে। দীর্ঘ ১০ বছরের চেষ্টায় ইলিশ আজকের অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবর মাসের ৭ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন সময়। এই সময় মাছ ধরা বন্ধ করতে জেলে, স্থানীয় প্রশাসন, দেশবাসীর সকলের সহযোগিতা কামনা করছি আমরা।
তিনি বলেন, একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে- সারা বছরই ইলিশ পাওয়া যায়। আসলে তা নয়। একটি নির্দিষ্ট সময় ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। সেই সময় ইলিশ সংরক্ষণ করেতে পারলে সারা বছরই আমরা ইলিশের স্বাদ নিতে পারব। ইলিশের পোনা বড় হওয়ার জন্য কিছু জায়গায় অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব জায়গায় জাটকা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়াতে আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের চুক্তি করা দরকার- উল্লেখ করে মৎস অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, এটা কার্যকর করা সম্ভব হলে ইলিশে আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না।
মৎস অধিদফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরের পর থেকে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে আমাদের উৎপাদন ছিল ৩.৪০ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৯৬ মেট্রিক টনে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে প্রতিবারের মতো এবারও জেলেদের মধ্যে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালীর জেলে নাসির উদ্দিন বলেন, এই সময় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে দামও কম। তবে দাম কম হলেও জালে বেশি মাছ ওঠায় আমরা খুশি। একটু শঙ্কাও রয়েছে, আবার ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে। সরকারি সহায়তা ঠিক মতো না পেলে আমাদের চলা কঠিন হয়ে যাবে।
সারাবাংলা/এটি
ইলিশের দাম কারওয়ান বাজার মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সস্তায় ইলিশ