Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইন্দোনেশিয়া: মৃতদের গণকবর, জীবিতদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে


১ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৪৪

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

সময় যত গড়াচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরের ধ্বংসযজ্ঞ ততই প্রকট হয়ে ধরা পড়ছে। ভূমিকম্প ও সুনামিতে এখন পর্যন্ত ৮৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় সংবাদমাধ্যম বিবিসি। উপকূলীয় এলাকায় উদ্ধার শেষে এই সংখ্যাটি আরও অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভূমিকম্প ও সুনামিতে মৃতদের অধিকাংশকে ইতোমধ্যে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে। যেকোন ধরনের রোগের সংক্রামণ বা প্রাদুর্ভাব এড়াতে এই ব্যবস্থা। একইসাথে চলছে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো সুলাবেসি দ্বীপ পরিদর্শন করেছেন। তিনি দিনরাত উদ্ধারকাজ চালাতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন। দেশটির বিনিয়োগ বোর্ডের প্রধান থমাস লেবং জানান, তার প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক সহায়তা নেবার ব্যাপারেও আগ্রহী।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার মুখপাত্র সুতপো পুরোও নগরহো বলেন, যে পরিমাণ দালান ভেঙ্গে পড়েছে। উদ্ধার চালাতে তত সরঞ্জাম নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থাও অপ্রতুল।

তিনি বলেন, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব নয়।

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে বলা হয়, পালুর একটি শপিংমল থেকে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পাওয়া গেছে। এছাড়া, রোয়া রোয়া হোটেলের ধ্বংসাবশেষ থেকে মানুষের চিৎকার শোনা গেছে।

ভারি উদ্ধার সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকাজ শেষ করতে পারছে না উদ্ধারকারী দল। থালিব বাওয়ানো নামের একজন স্বেচ্ছাসেবক জানান, রোয়া রোয়া হোটেল থেকে তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ৫০ জনেরও বেশি লোক এখনও আটকা পড়ে আছেন।

তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিৎকারের শব্দ শোনা গেছে। এদের মধ্যে শিশুও আছে। তারা সাহায্য চাইছে। কিন্তু এখনো তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমরা তাদের মনোবল দিয়ে যাচ্ছি। এখন তারা জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বন্দি। তাদের পানি ও খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। তবে তারা শুধু বেরুতে চাইছে।

বিজ্ঞাপন

‘আমরা বেরুতে চাই। সাহায্য করো।’ এভাবে তারা চিৎকার করছে।

সুনামি ও ভূমিকম্পের ফলে সুলাবেসি দ্বীপের রাস্তাঘাট পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমানবন্দর, বিকল হয়ে গেছে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। দূরবর্তী এলাকাগুলোতে পোঁছানো সেখানে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষের নিচে আরও অনেকে জীবিত আটকা পড়ে আছেন।

ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জুসুফ কাল্লা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এদিকে, ইন্দোনেশিয়ার বিচার মন্ত্রণালয় বলছে, সুলাবেসি দ্বীপে দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে বারোশ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেল থেকে পালিয়েছে।

আহত ও মৃতদেহ পাশাপাশি

পালু শহরে আহত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। মৃতদেহ রাখা হয়েছিল রোগীদের পাশেই। বিবিসির প্রতিবেদনে পরিস্থিতি তুলে ধরতে বলা হয়,

পালুর মামবোরো হেলথ ক্লিনিকে ভাঙ্গা পা নিয়ে পাঁচ বছরের এক মেয়ে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে। মেয়েটির পরিবার কোথায় তা জানা যায়নি। এমনকি মেয়েটিও কিছু মনে করতে পারছে না। হাসপাতালটিতে কোন বিদ্যুৎ নেই। ফুরিয়ে আসছে চিকিৎসা সরঞ্জামও।

ঐ মেয়েটির কিছু মিটার দূরে পড়ে আছে অনেকগুলো ব্যাগের সারি। ওগুলো আসলে মৃতদেহ। বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার সাসনো জানান, লাশগুলো গণকবরে সমাহিত করা হবে যাতে রোগ ছড়াতে না পারে।

তিনি বলেন, মৃতদেহগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আমরা লাশ হস্তান্তরের জন্য পরিবার পরিজনদের অপেক্ষায় থেকেছি। কিন্তু আর সময় নেই।

প্রতিটি গণকবরে তিনশ করে মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগের পরবর্তী পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর টম হাউয়েলস।

বিজ্ঞাপন

টম বলেন, দিন যত যাবে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য সরবরাহ ও আশ্রয়স্থলের মান ততই খারাপ হবে।

খাদ্য সরবরাহ কমে আসায় স্থানীয় মানুষরা এখনই ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোতে খাদ্য, পানি ও ওষুধ খুঁজছে। তাদের একজন বলেন, আমাদের আর কিছুই করার নেই। এখন আমাদের খাবার জোগাড় করতে হবে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ইন্দোনেশিয়ার সুলাবেসি দ্বীপে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ভূমিকম্পের পর পরই সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। পরে আবারও তা ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সতর্কতা প্রত্যাহারের পরই উপকূলীয় শহর পালুতে ভয়াবহ সুনামি হামলে পড়ে।

বিশ্বের ভূমিকম্প প্রবণ দেশগুলোর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া অন্যতম। ২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ২ লক্ষ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

সারাবাংলা/এনএইচ

ইন্দোনেশিয়া পালু ভূমিকম্প ও সুনামি সুলাবেসি দ্বীপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর