Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ বিশ্বব্যাংকের, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ এর আশা


২ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:৪৯

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে, এই প্রবৃদ্ধির সুফল কারা পাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া,  দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) সকালে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ধারা অব্যাহত থাকলে এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়লে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। আগামীতে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের বেশ কিছু সংস্কার আনতে হবে।

প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল অব্যাহত থাকলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাবে। এতে করে বাজেটে চাপ বাড়বে। এজন্য আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে। খেলাপি ঋণের দিকে নজর দিতে হবে। এই মুহুর্তে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪ শতাংশে। ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মোট ঋণের ৪৮ শতাংশই খেলাপি ঋণ। এছাড়া, ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের বড় অংশই খেলাপি ঋণ। ব্যাংক খাতের এই বিশাল ঋণ আদায়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি খাত ও রেমিট্যান্স প্রবাহে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালেও ব্যাংকিং খাতের বোঝা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এতে বলা হয়, যাদের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে সরকার ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে তারা পাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ খাতে জোর দিতে হবে। এক হিসেবে বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০১১-২০১৭ সাল পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ মানুষ নতুন করে বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ২০৩০ সালের বিদ্যুতের চাহিদা মোকাবিলায় এখন থেকেই উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে জ্বালানী ব্যবহারের অপচয় রোধ করতে হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশে গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় ৬/৭ গুণ কম। গ্যাস ব্যবহারে অপচয়রোধ করা গেলে ১৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে জানানো হয়। বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ দ্রত উন্নয়ন করছে। উন্নয়ন ধরে রাখতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। রফতানি ও রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি যেন কমে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিশ্বের ১০টি উদীয়মান দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এজন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি, মানবসম্পদ উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের ক্ষেত্রে যদি সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকে, বিদ্যুতের চাহিদার সাথে যোগান সমন্বয় করা গেলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)‘র নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, জিডিপি‘র গ্রোথ সরকারী হিসাবে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। এটা নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে, এখানে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। গত কয়েক বছরে রপ্তানি আয় হতাশাজনক। জিডিপি‘র তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কম হলে কিভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়বে?

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স কমছে, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। তিনি বলেন, ব্যাংকের নয়-ছয় পলিসি নির্ধারণ কোন কাজে আসেনি। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক এই অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের গুণগত মান ও খরচ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এসব মেগা প্রকল্প থেকে কী ধরনের অর্থনৈতিক সুফল আসবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো হিসাব এখনও করা হয়নি। রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতুর যেভাবে ব্যয় বাড়ছে তা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখতে হবে।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে কিনা সেগুলো ভেবে দেখতে হবে। কেননা বাংলাদেশে এখনো ১৯ মিলিয়ন লোক চরম দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছে। সাড়ে ৫ মিলিয়ন শিশু এবং ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন নারী অপুস্টিতে ভুগছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কাদের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, প্রবৃদ্ধির সুফল কার কাছে যাচ্ছে, সেটা বের করতে হবে।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন, পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরসহ বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর