৪ নদীর নাব্য উন্নয়নসহ ১৫ প্রকল্প অনুমোদন
২ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:২১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর ড্রেজিং ও দখলমুক্ত করে নাব্য উন্নয়নসহ ১৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে ৮ হাজার ৪৭৯ কোটি ২২ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৪৪৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে আসবে ৪ হাজার ২৯০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী বাহাদুরবাদের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র হতে উৎপন্ন হয়ে জামালপুর এবং ময়মনসিংহ জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব বাজারে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নদীটির ২২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ও ১০০ মিটার প্রস্থে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে তিন মিটার গভীর করে নৌপথটি ক্লাস-২ নেভিগেশনাল রুটে উন্নিত করা হবে।
‘ধরলা একটি সীমান্ত নদী যা প্রকৃত পক্ষে ব্রহ্মপুত্রের উপনদী। নদীটি হিমালয়ের দক্ষিণ সিকিম থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। লালমনির হাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে। নদীটি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদীতে পতিত হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় সম্পূর্ণ ধরলা নদী (দৈর্ঘে ৬০ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৩৮ মিটার) ড্রেজিং করা হবে।দিনাজপুর সেতাবগঞ্জের একটি বিল থেকে উৎপন্ন তুলাই নদীটি ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাঙ্গন নদীর ভারতীয় অংশে মিলিত হয়েছে। এ নদীর ৭০ কিলোমিটার ও ৩৮ মিটার প্রস্থে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এক দশমিক পাঁচ মিটার গভীর করে নৌপথটি ক্লাস-৪ নেভিগেশনাল রুটে উন্নীত করা হবে।’
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী একনেকে বলেছেন প্রকল্পগুলোর সংশোধন গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকল্পে যা কাজ থাকবে তাই আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। তারপর যদি প্রয়োজন হয় আলাদা প্রকল্প দিতে হবে।
নির্বাচনের কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ থেমে থাকতে পারে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন চলবে একই মাত্রায়, একই গতিতে। নির্বাচন সংবিধান অনুয়ায়ী হবে। নির্বাচনের সঙ্গে কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। শেখ হাসিনার কাছে সব সময়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তুলাই এবং পুনর্ভবা নদীর নাব্য উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।
এ ছাড়া কক্সবাজার বিমান বন্দর উন্নয়ন (১ম পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত), এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ২ হাজার ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-মাটিরাঙ্গা-খাগড়াছড়ি সড়ক উন্নয়ন (চট্টগ্রাম অংশ), খরচ হবে ৩৯৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
ভূরুঙ্গামারি-সোনাহাট স্থলবন্দর-ভিতরবন্দ-নাগেশ্বরী মহাসড়কের দুধকুমার নদীর ওপর সোনাহাট সেতু নির্মাণ, খরচ হবে ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
জার্মানির বার্লিনে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লক্স নির্মাণ, খরচ হবে ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে গুঁড়ো দুধ কারখানা স্থাপনে খরচ করা হবে ১০৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
এ ছাড়া সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে খরচ হবে ২৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে ভোলা জেলার সদর উপজেলাধীন রাজাপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন রক্ষার্থে তীর সংরক্ষণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে খরচ হবে ১৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন (আরওএসসি) দ্বিতীয় পর্যায় (দ্বিতীয় সংশোধিত), খরচ হবে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণে খরচ হবে ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনে খরচ ১৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন, গোপালগঞ্জ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের খরচ হবে ২৫০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচের উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
সারাবাংলা/জেজে/এমআই