সাত মাস ধরে আশ্রয় বিমানবন্দরে, অতঃপর পুলিশের হেফাজতে
৩ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:০২
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
গল্পটি সিরিয়ার নাগরিক হাসান আল কুন্তারের। তিনি কাজ করতেন আরব আমিরাতের একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হলে লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থীর মতো তার জীবনেও নেমে আসে অনিশ্চয়তা।
বিবিসির এক সংবাদ প্রতিবেদনে গন্তব্যহীন এই যুবকের দুর্দশা তুলে ধরা হয়। সিরিয়ায় বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণে অনিচ্ছা ছিলো কুন্তারের। কারণ তিনি যুদ্ধ ঘৃণা করতেন। এ কারণে কুন্তারের পাসপোর্ট ও নবায়ন করা যায়নি। কুন্তার নিজেও চাননি দেশে ফিরে যেতে। তার ভয় ছিলো সিরিয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হবে অথবা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে জোর করা হবে। তাই বাধ্য হয়ে অবৈধভাবে কুন্তার আরব আমিরাতে থাকছিলেন।
আরব আমিরাত পুলিশ ২০১৬ সালে কুন্তারকে গ্রেফতার করে। এরপর কোনভাবে তার গন্তব্য হয় মালয়েশিয়ায়। কারণ শর্তসাপেক্ষে মালয়েশিয়াতে সিরীয়ার নাগরিকদের ভিসা ব্যতীত ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। তবে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নয়। কুন্তারকে মালয়েশিয়ায় তিন মাসের পর্যটন ভিসা দেওয়া হয়।
মালয়েশিয়ায় ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর কুন্তার বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হন। তুরস্কে তাকে আশ্রয় দিতে রাজি হয়নি। কম্বোডিয়া থেকেও তাকে ফেরতে পাঠানো হয়। কুন্তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেয়ে ইকুয়েডর যেতেও ব্যর্থ হোন।
সুতরাং বাধ্য হয়ে কুন্তার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টের অভ্যর্থনা এলাকায় থাকতেন। এয়ারলাইনসের কর্মীদের দেওয়া খাবার খেতেন। যেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা টম হ্যাঙ্কসের টার্মিনাল ছবির গল্প। প্রায় সাত মাস ধরে কুন্তার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে থেকেছেন, খেয়েছেন, ঘুমিয়েছেন। জানালার কাঁচে তাকিয়ে অপেক্ষা করেছেন মুক্ত আকাশটা দেখতে।
এসময়ের মধ্যে বাহিরের পৃথিবীর সাথে কুন্তারের যোগাযোগ রাখার একমাত্র উপায় ছিলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তিনি টুইটারে প্রতিদিনের ছবি পোস্ট করতেন। মাসের পর মাস কুন্তারের এই ক্লান্তির জীবন দেখে অনেকেই তাকে সাহায্য করতে চেয়েছে। কানাডায় তাকে থাকতে দিতে কয়েক হাজার স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তবে লাভ হয়নি। মালয়েশিয়াতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাও কুন্তারকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
কুন্তারও বিষয়টি জটিল বুঝতে পেরে বলেছেন, অনেক দেশই আমাকে নিতে চায় না। কারণ আমি সিরিয়ার নাগরিক। কিন্তু আমি আমার চেষ্টা কাজটা করবো।
তবে মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ জানিয়েছে, কুন্তার এখন আর বিমাবন্দরে নেই। তাকে বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে পুলিশের জিম্মায় নেওয়া হয়েছে। কুন্তারকে জিঙ্গাসাবাদ শেষে অভিবাসন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তাকে বিতাড়নের জন্য সিরিয়ার অ্যাম্বাসির সাথে যোগাযোগ করা হতে পারে।
হাসান আল কুন্তারের ভাগ্যে কি ঘটবে সে সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানায় বিবিসি। তবে কুন্তারের জন্য সমব্যথী অনেকেই চাইছেন কুন্তারকে তৃতীয় কোন দেশে থাকার সুযোগ করে দেওয়া হক। এজন্য চালানো হচ্ছে ক্যাম্পেইনও।
আরও পড়ুন: সিরিয়ায় মানবতার চরম বিপর্যয়
সারাবাংলা/এনএইচ