‘সব আয়োজন তারুণ্যের জন্য, তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’
৪ অক্টোবর ২০১৮ ১১:২২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: উন্নয়ন মেলা-২০১৮ তরুণদের প্রতি উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সব আয়োজন তারুণ্যের জন্য। যারা দেশকে কিছু উন্নতিও দিতে পারবে, নিজের ভাগ্য গড়তে পারবে। তাদের পরিবারগুলোও সুন্দরভাবে বাঁচবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের আজকের শিশু, আগামী দিনের তরুণ; তারাই এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন মেলাসহ দেশের সব জেলা-উপজেলায় আয়োজিত উন্নয়ন মেলার একযোগে উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হলো চতুর্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে চলবে তিন দিনের এ মেলা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুরুতে উন্নয়ন মেলার থিম সং’টি দেখানো হয়। এছাড়াও সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পদক্ষেপের একটি ভিডিও চিত্রও দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন কোনো একটি জায়গায় নয়, সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। আমি আশা করি, এই উন্নয়ন মেলার মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষ তাদের জন্য আমরা কী উন্নয়ন করলাম এবং সে উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তারা কিভাবে নিজের ভাগ্যকে গড়তে পারবে, সেটা দেখার সুযোগ তারা পাবে এবং সেই সুযোগটা তারা গ্রহণ করবে। সেই চিন্তা থেকেই আজকের এই উন্নয়ন মেলা।
শিশু-কিশোর ও তরুণদের স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আজকের শিশু আগামী দিনের তরুণ; তারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকের তরুণ আগামী দিনে হবে এ দেশের কর্ণধার। কাজেই আমাদের সব আয়োজন এই তারুণ্যের জন্য। তরুণরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে। তাদের সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ যেন গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
উন্নয়ন মেলা তরুণদের উৎসর্গ করে তিনি বলেন, এই মেলা তরুণদের জন্যই উৎসর্গ করছি। তারা যেন নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়তে পারে। সন্ত্রাস-মাদক-জঙ্গিবাদ, এসব থেকে মুক্ত থেকে তারা নিজেদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলবে, সেটাই আমরা চাই। যারা দেশকে কিছু উন্নতিও দিতে পারবে, নিজের ভাগ্য গড়তে পারবে। তাদের পরিবারগুলোও সুন্দরভাবে বাঁচবে। একেবারে গ্রামের মানুষও যেন তার যেকোনো কর্মসংস্থানটা করে নিতে পারে, সেটা আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের জনগণের ভাগ্য পবিরর্তন করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। শুধু বর্তমানে যারা আছে তারা নয়, তরুণ প্রজন্ম বা আগামী দিনের যত নাগরিক হবে বা যে শিশুটি জন্ম নেবে, সেও যেন একটা সুন্দর পরিবেশে জন্ম নিতে পারে, তার বাবা-মা যেন তাকে শিক্ষা-দীক্ষা— সবদিক থেকে উন্নত করতে পারে; আমরা সেই ধরনের একটি পরিবেশ তৈরি করে দিয়ে যেতে চাই। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের উন্নয়ন পরিককল্পনা, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের সব পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ কারও মুখাপেক্ষী হয়ে চলবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবে। ভিক্ষা করে চলবে না। নিজের শ্রম দিয়ে মেধা দিয়ে এ দেশকে গড়ে তুলবে। আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াব— এটাই জাতি পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সব সময় চাইতেন।
সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষায় আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এই শিক্ষা শুধুমাত্র বই পড়ে শিক্ষা না, এই শিক্ষাটা যেন তার জীবন-জীবিকার পথ উন্মুক্ত করে; যা শুধু দেশে না, দেশে-বিদেশেও তার কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। শিক্ষা যেন সত্যিকারের একটা জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একটা জাতি গড়ে তুলতে কাজ করে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই প্রথম যখন সরকারে এলাম, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলাম।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার যে ফলাফল, সেটা আমরা পর্যালোচনা করলাম। আমরা দেখলাম, পাসের হার বাড়লেও কয়েকটি বিষয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা একটু পিছিয়ে আছে। এই আধুনিক যুগে কেউ পিছিয়ে থাকুক বা ডিজিটাল যুগে পিছিয়ে থাকুক, সেটা আমরা চাই না। সে জন্যই আমরা এবারের উন্নয়ন মেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি উপহার রেখেছি। সেটা হলো— পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা-ইংরেজি-গণিত বিষয়ে অনলালাইন ডিজিটাল পাঠ্য সহায়িকা। অর্থাৎ, অনলাইনেই তারা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষা নিতে পারবে। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সেইসঙ্গে আমরা ১০টি ভাষায় একটি অ্যাপ তৈরি করে দিয়েছি, যা অনলাইনে পাওয়া যাবে এবং যেকোনো ভাষার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। কেউ যদি বিদেশে যেতে চায় বা কোনো চাকরি করতে চায়, তাহলে সেখান থেকে তারা ওই ভাষাটা সম্পর্কে শিক্ষা নিতে পারবে। সেখানে আরবি থেকে বিভিন্ন ভাষার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।
এবারের উন্নয়ন মেলার প্রতিপাদ্য ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। মেলা প্রতদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর