সে আমার আরেক কন্যা, স্পিকারকে প্রধানমন্ত্রী
৪ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৪৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আরেক কন্যা হিসেবে রংপুরবাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন-২০১৮ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পরিচয় করিয়ে দেন স্পিকারকে। উদ্বোধনী শুরুতে উন্নয়ন মেলার থিম সং প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়াও সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পদক্ষেপের একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর দশম জাতীয় সংসদের স্পিকার পদে বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল।
সেলাই প্রশিক্ষণের একজন সুবিধাভোগী হিসেবে এক শিক্ষার্থীর বক্তব্যের পর জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে আরেকজন উপকারভোগীকে কথা বলার আহ্বান জানান। এরপর কথা বলার জন্য মোহাম্মদ আবদুল খালেক ক্রাচে ভর করে উঠে দাঁড়ান।
এতে গণভবন প্রান্তে সংযুক্ত প্রধানমন্ত্রী বলে উঠেন, ‘আপনি বসে বলেন। বসে বলেন। কিন্তু আবদুল খালেক মিয়া প্রধানমন্ত্রীর কথার ভ্রুক্ষেপ না করে সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ওইপ্রান্তে সামনের সারিতে উপস্থিতদের বলেন, ‘ওনার বসার ব্যবস্থা করে দেন একটু…।’
এরপর মাইক্রোফোন হাতে আবদুল খালেক মিয়া বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দুইটা কথা বলার জন্য সুযোগ করে দেওয়ার জন্য…আপনাকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে আপনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং আমাদের প্রিয় নেত্রী, ম্যাম স্পিকারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’
এ সময় তাৎক্ষণিক গণভবন প্রান্তে সংযুক্ত প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেও আমার আরেক কন্যা। সেও আমার আরেক কন্যা।’
এ সময় আবদুল খালেক মিয়া আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করেন এবং উভয়প্রান্তে উপস্থিত সকলে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।
এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসা ছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী নিজেও কয়েকদফা অট্টহাসিতে মেতে ওঠেন।
প্রধানমন্ত্রীর উচ্চস্বরে হাসির মাঝেই ওই প্রান্ত থেকে আবদুল খালেক মিয়া বলেন, ‘আমরা তো এতদিন জানতাম যে, আপনার শুধু একজন কন্যা…।’
এরপর তিনি তার শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমি মোহাম্মদ আবদুল খালেক মিয়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করি। এ ছাড়াও তিনি তার অঞ্চলের জন্য একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি রংপুরে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান।’
পাশাপাশি এ ছাড়াও তিস্তা ব্যারেজের প্রভাবকে গলার ফাঁস হিসেবে উল্লেখ করেও এ বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এরপর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিন্তু ব্রহ্মপুত্র, ধরলা থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি নদী ড্রেজিং করে নদীখনন করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে দিচ্ছি যাতে করে সেখানে পানি সবসময় থাকে। বারো মাস থাকে। যা আমাদের যে কোনো আপদকালীন সময়ে কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায় সে ব্যবস্থাটি কিন্তু আমরা নিচ্ছি।’
আসলে গ্যাসের আমাদের খুব অভাব ছিল। আমরা এখন এলএনজি আমদানি করছি। ইতোমধ্যে আমরা কিছু গ্যাস সব জায়গায় দিতে পারছি। তা ছাড়া আমরা গ্যাসের কূপও খনন করছি। যদি ওই এলাকায় গ্যাস পাওয়া যায় নিশ্চয়ই আপনারা গ্যাস পাবেন। তা ছাড়াও কিন্তু ওখানে অনেক প্রতিষ্ঠান করে দেওয়া হচ্ছে।
আপনি আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা এবং রংপুরে এই দিকে কোনো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নাই। তো আপনি যখন বলছেন, অবশ্যই ওই অ্যঞ্চলে একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে দেব। এটা রংপুরে হবে না। যেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নাই সেইখানে করে দেব। ওই অঞ্চলের যে জেলায় নাই সেখানে করো দিবো, যাতে পুরো বিভাগের ছেলে-মেয়েরা পড়তে পারে।
এ সময় পাশে থাকা স্পিকারের উদ্দেশে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, এটার একটা ব্যবস্থা করে দাও।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হলে মুখ্যসচিব প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে বলেন, সংসদীয় রীতিতে স্পিকাররা অনেক সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আমি সেই রকম একটা…চাচ্ছি।
‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য করে এবারের উন্নয়ন মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। মেলা প্রতদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্ররধানমন্ত্রী কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই