গান-কবিতা জমে আছে রাবেয়ার
৩ জানুয়ারি ২০১৮ ১৬:২৬
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনে এসেও গান-কবিতা লেখা বন্ধ হয়নি সাতক্ষীরার রাবেয়া বসরীর। রাতদিন ফুটপাতে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখি। যার বেশিরভাগ লেখাতেই প্রকাশ পাচ্ছে শোষণ-বঞ্চনা আর দুঃখ-দুর্দশার কথা।
বুধবার দুপুরে অনশন স্থলের মূল মঞ্চে ডাক পান রাবেয়া বসরীর। পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই এ শিক্ষিকা মাইক্রোফোন হাতে নিয়েই আবেগঘন বক্তব্য রাখেন। ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই-নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’ বিখ্যাত এ চরণ দুটি আউড়িয়ে এসময় তিনি বলেন, আজ নয়দিন এই রাস্তায় পড়ে আছি। নাওয়া-খাওয়ার ঠিক নেই। ঘুমাতে পারি না। এতো দুর্দশা জীবনে আসবে কোনোদিন কল্পনাও করিনি। আজ অনেক কষ্টে মাইকে বক্তব্য দিচ্ছি। দুঃখে দুঃখে আজ আমরা জর্জরিত। জানি না আমাদের ছেলেমেয়ে, পরিবারের কী অবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী আমাদের ‘মা’। আজ আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য গভীর উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। কিন্তু আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কোনো উদ্বেগ আমরা দেখছি না। এ কষ্ট আর সইতে পারছি না। তাই আমি আপনাদের একটি গান শোনাবো। আমি এ ক’দিনে অনেক গান ও কবিতা এখানে বসে বসে লিখেছি। কিন্তু তা শোনানোর পরিবেশ পাচ্ছি না। এরপর তিনি একটি গান গেয়ে শোনান।
গান শেষে সারাবাংলাকে তিনি জানান, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। তাদের স্কুলটি এখনো এমপিও না হওয়ায় চরম কষ্টে আছেন শিক্ষকরা। এবার এমপিওর ঘোষণা দেয়া না হলে স্কুলে চাকরি করা হয়তো আর সম্ভব হবে না।
গান-কবিতা লেখার পেছনের কথা জানতে চাইলে সাতক্ষীরার আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, এমনিতে আমি লেখালেখি করি। কিন্তু এখানে এসে লেখার পেছনে কেবল শোষণ-বঞ্চনা আর কষ্ট কাজ করেছে। আমি অনেক দুঃখ নিয়ে এগুলো লিখেছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করে আসছেন সারাদেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক। গতকাল (মঙ্গলবার) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আন্দোলনরত শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি না মানা হবে ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। বুধবার দুপুর পর্যন্ত তাদের সে দাবি পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা আসেনি।
সারাবাংলা/এমএস/এমএ