‘ওয়েলডান বাংলাদেশ আর্মি’
৪ অক্টোবর ২০১৮ ২২:০৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সারফেইস টু এয়ার মিসাইল ভেহিকল বা সংক্ষেপে এফ এম-৯০। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে যুক্ত সবচেয়ে নতুন এই সরঞ্জামের আদলে বানানো স্টল। এর ভেতরে প্রদর্শিত হচ্ছে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ। দর্শকের ভিড়। অধিকাংশেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। শেষে স্টল থেকে বেরিয়ে মতামত দেওয়ার সাদা বোর্ডে লিখে দিচ্ছেন, ‘ওয়েলডান বাংলাদেশ আর্মি’।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় উন্নয়ন মেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্টলের চিত্র এটি।
উন্নয়ন মেলায় স্টল ছিল প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ পুলিশেরও। সশস্ত্র বাহিনীর স্টলগুলো মেলায় নজর কেড়েছে সবার, বিশেষত শিক্ষার্থীদের।
সেনাবাহিনীর স্টলে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম, হাতিরঝিল প্রকল্পসহ সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন প্রকল্পের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। এ ছাড়া আগ্রহীদের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষারও ব্যবস্থা রেখেছে সেনবাহিনী।
সরকারি কমার্স কলেজের একদল ছাত্রীকে দেখা গেল, সেনাসদস্যদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। কেউ কেউ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রকাশনা মনযোগ দিয়ে পড়ছেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান সম্বলিত লিফলেট তুলে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ স্টলে যারা যাচ্ছেন সবার হাতে।
সরকারি কমার্স কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নুসরাত স্বর্ণা সারাবাংলাকে বলেন, সেনাবাহিনীর মতো একটি সংস্থা যারা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাদের নিয়ে জানার আগ্রহ অবশ্যই আছে। সে জন্যই মেলায় এসেই চোখের সামনে সেনাবাহিনীর স্টলে দেখে সেখানে এসেছি। এখানে এসে সেনাসদস্যদের আন্তরিক আচরণে খুব ভালো লাগছে।
চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সিগন্যাল ব্যাটেলিয়ন-৩ এর ক্যাপ্টেন তাহসীন ইকতেদার আলী সারাবাংলাকে বলেন, নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কানেকটিভিটি গড়ে তোলার অংশ হিসেবে, তারা যেন সেনাবাহিনীকে দূরের কেউ না ভাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা নতুন প্রজন্মের সন্তানদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে উজ্জীবীত করার চেষ্টা করছি।
সেনাবাহিনীর স্টলের সামনে মতামত নেওয়ার জন্য রাখা আছে সাদা বোর্ড ও কলম। সেখানে কেউ লিখছে, ‘ওয়েলডান বাংলাদেশ আর্মি’। কেউ লিখছে ‘বেস্ট লাক বাংলাদেশ আর্মি।’ কেউ লিখছে, ‘এগিয়ে যাও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।’
চট্টগ্রাম মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মিজানুর রহমান লেখেন, ‘ওয়েলডান বাংলাদেশ আর্মি’। মিজানুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী অনেক ভালো ভালো কাজ করে। তারা যে শুধু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে তা-ই নয়, সেনাবাহিনী যেকোনো দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়ায়।’
সেনা কর্মকর্তা তাহসীন ইকতেদার আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মতামত আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণার।’
সেনবাহিনীর স্টলের পাশেই নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর স্টল। নৌবাহিনীর স্টলেও প্রদর্শন করা হচ্ছে তাদের অত্যাধুনিক সব সরঞ্জামের ছবি। সাম্প্রতিক সময়ে নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হওয়া এসব সরঞ্জামের ছবি দেখে বিস্মিত হচ্ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে রক্তচাপ মাপার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিমানবাহিনীর স্টলে ব্যতিক্রমধর্মী কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। সেই কুইজে অংশ নিয়ে পুরস্কার জিততে বিমানবাহিনীর স্টলেও শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।
বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে সক্ষমতা সেটা সবার সামনে উপস্থাপন করছি। বিমানবাহিনী যে আগের চেয়ে অনেকগুণ এগিয়েছে সেটা বোঝাচ্ছি। একইসঙ্গে কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক স্থাপন করছি। ওভারঅল পিপলের সঙ্গে কানেকটিভিটির জন্যই আমাদের মেলায় আসা।’
চট্টগ্রাম নগর ও জেলা পুলিশের স্টলে ট্রাফিক সচেতনতামূলক বিভিন্ন তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের বিষয়টিও জানানো হয়েছে প্রতীকী ভাস্কর্য তৈরি করে। ট্রাফিক সচেতনতামূলক লিফলেটও বিতরণ করা হচ্ছে এই স্টলে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে একযোগে সারাদেশের উন্নয়ন মেলা উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম নগরীর জিমনেশিয়াম চত্বরে বিভাগীয় উন্নয়ন মেলায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রামে উন্নয়ন মেলার সভায় বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান, সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন এবং পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা।
উন্নয়ন মেলায় ১৭০টিরও বেশি স্টল আছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে এই মেলা।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই