‘গায়েবি মামলায় নির্বাচনের পথ বন্ধ করছে সরকার’
৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৩:১৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: গায়েবি মামলা দিয়ে সরকার নির্বাচনের পথ বন্ধ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৬ অক্টোবর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৫ দিনে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছে ৪ হাজার ১৪৯টি। এসব মামলায় জ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৮৬ হাজার ৬৯২ জন, অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৭ জন, মোট আসামির সংখ্যা ৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৬ জন। মামলাগুলোয় মোট ৪ হাজার ৬৮৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘গায়েবি’ মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার সম্ভব্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে, যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে আটক রাখা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত করে রাখা, সিনিয়র নেতাদের মামলা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা— সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণ একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তারা এই অবস্থার পরিবর্তন চায়। এই সরকার পরিবর্তন হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হোক— সেটাই তারা চায়। কিন্তু সেই নির্বাচনে যেন বিরোধীদল অংশগ্রহণ করতে না পারে, তার জন্য সব রকম অবস্থা সরকার তৈরি করে রেখেছে।’
‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং আমরা যে সাত দফা দিয়েছি, সেগুলো মেনে নিতে হবে। তাহলেই নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে, অন্যথায় নয়,’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। জনগণও তাই চায়। আমরা চাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ সরকার পরিবর্তন করার সুযোগ পাক এবং তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হোক।’
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমার ৬৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে কোনো দিন শুনি নাই যে, ঘটনা ঘটে নাই, তারপরও মামলা হয়েছে। অর্থাৎ ন্যায় বিচার বলতে যেটা বোঝায় সেটাকে একেবারে নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে ‘
গায়েবি মামলা দিয়ে সরকার দেশের আপামর জনসাধারণকে হেয় করেছে বলেও অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের যে অফিসার বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন, তার বিরুদ্ধে কেন ডিসিপ্লিনারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না— এর আলোকে একটা রিটপিটিশন করার চিন্তা করছি।’
মামলার নেপথ্যে সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘মামলা করেছে ফৌজদারি মামলা। উপায় নেই, জামিন নিতে হবে। হাইকোর্ট থেকে অগ্রিম জামানি নেওয়ার পর যখন মামলা নিন্ম আদালতে যাবে। সেখান থেকে বলা হবে আত্মসমর্পণ করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘নিচের আদালত তো স্বাধীন না। তারা সম্পূর্ণভাবে নির্বাহী বিভাগের অধীনে কাজ করে। তাদের দায়-দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের কাছে নাই। তাদের দায়-দায়িত্ব এখন আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে। সুতরাং নিম্ন সেটাই করবে, যেটা সরকার চাইবে।’
‘সরকারের উদ্দেশ্য হলে নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো’— এমন মন্তব্য করে ব্যারিস্টা মওদুদ বলেন, ‘হিসাব পাকা। এখন যারা উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নিচ্ছেন, তাদের এই ৬ সপ্তাহ শেষ হবে নভেম্বরের মাঝামাঝি। ওই সময় তো নির্বাচন একেবারে কাছাকাছি চলে আসবে। তখন তাদেরকে আটকে দেওয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, নজরুল, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর