উন্নয়ন মেলা: হাতের কাছে মনের মতো সেবা
৬ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:৩১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বছরের শেষ ভাগে এসে সারাদেশে বসেছে উন্নয়ন মেলা। এ মেলায় দেশের সার্বিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে দেশের অগ্রগতির সম্পর্কে ধারণা দিতে চাইছে সরকার। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের যে বিশাল মাঠ সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে করা এ উন্নয়ন মেলায় বিভিন্ন স্টলে উন্নয়ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাউন্ড সিস্টেমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বন্দনা শোনা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনী বছরের শেষ দিকে এ ধরণের মেলায় নাগরিক সুবিধা-সেবা প্রদানের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যদিও কোনো কোনো দর্শনার্থী কিংবা সেবাগ্রহিতা স্টলে স্টলে ঘুরে যা দেখছেন-শিখছেন তাতে বিস্মিত হচ্ছেন। কেউ বা ‘হাতের কাছে মনের মতো সেবা’র নিশ্চয়তা পেয়ে মহাখুশি।
গত বৃহস্পতিবার ( ৪ অক্টোবর) শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হবে শনিবার (৬ অক্টোবর) রাত ৯ টায়। সকাল আটটা থেকে শুর হওয়া মেলায় সরকারি-বেসরকারি ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩৩০টি স্টল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০টি, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ১৯টি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৬টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৬টি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১০টি এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ৯টি স্টল রয়েছে।
মেলায় সেনাবাহিনীর স্টলে দেখা গেছে রক্তের শর্করা, গ্রুপ নির্ণয় ও বিএমআই শনাক্ত করার কাজ চলছে। সেখানে সেবাগ্রহিতাদের ভিড়। সেনা সদস্যদের আন্তরিক সেবায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন তারা।
মগবাজারের তাসলিমা বেগম বলেন, মেলায় বেড়াতে এসেছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়লো স্টলটি। তাই একটু সময় ব্যয় করে টেস্ট করিয়ে নিলাম।
এখানে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৭৬ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্টলে দায়িত্ব পালনকারী ক্যাপ্টেম আরিফ জানান, সেনাবাহিনী মূলত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। দেশ ও জনগণের সেবায় আমাদের প্রচেষ্টা সবসময় রয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তথ্য ও সংশ্লিষ্ট সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সামনে দেখা গেছে বিদেশ গমনেচ্ছুদের প্রচণ্ড ভিড়। তবে পুরুষের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি দেখা গেছে নারীদের সংখ্যা।
স্টলের সামনে কথা হয় রোজিনা আক্তার নামের এক পোশাক শ্রমিকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। তাই সেই বিষয়ে আগে একটু খোঁজখবর নিচ্ছি।’
এখানকার একজন কর্মকর্তা জানালেন, যেসব শ্রমিক বিদেশে যেতে ইচ্ছুক তারা এখানে পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিচ্ছেন। এগুলো থেকে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের জনশক্তি রফতানি ব্যুরোতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। ওই পরীক্ষায় পাশ হলে তিন মাসের একটি কোর্স করিয়ে তারপর বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করবে মন্ত্রণালয়।’
এ স্টলেই দেখা গেল, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কোর্সের সনদ বিতরণী অনুষ্ঠান থেকে সনদ গ্রহণ করছেন বিদেশ গমনেচ্ছুরা।
জাকির হোসেন নামের এক যুবক জানান, তিন মাসের কোর্স শেষ করেছেন। পড়াশোনা বেশি না শিখলেও ইংরেজিতে এখন তিনি অনেকটাই দক্ষ। বিদেশে গেলে অন্তত ভাষা নিয়ে সমস্যা হবে না।
নাগরিক সেবার এমন কোনো দিক নেই যা মিলছে না উন্নয়ন মেলায়। কেবল নিজে জানা আর অন্যকে জানানো গেলে এ মেলা হয়ে উঠতে পারে সেবাগ্রহীতার জন্য ঝামেলাহীন এক ক্ষেত্র। যেখান থেকে তথ্য নিয়ে স্বাভাবিক নাগরিক দায়িত্ব পালন, সুবিধা-অসুবিধা চিহ্নিত করণ, বিদেশে উচ্চ শিক্ষা, ভ্রমণ কিংবা চিকিৎসা সবকিছু সম্পর্কে জানতে পারবেন তারা।
সেইসঙ্গে বহিবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সম্পর্ক, পানি নিয়ে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে দেনদরবারের বর্তমান অবস্থা কিংবা সরকারি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোয় কাজের সুযোগ সব কিছু সম্পর্কেই ধারণা পাওয়া যাচ্ছে এ মেলা থেকে।
মেলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের যে বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন এ মেলা ঘুরলে সে বিষয়েই ধারণা পাওয়া যাবে। তাই তিন দিনের এ মেলায় সরকার কেবল উন্নয়ন প্রচারই নয়, নাগরিক সচেতনতাও সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করেন তারা।
সারাবাংলা/এমএস/একে