Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা কি সব দিয়ে দিলাম : ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি


৩ জানুয়ারি ২০১৮ ১৭:৫৩

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা : নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টকে প্রাধান্য দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে আদালত বলেছেন, বাইরে বলা হচ্ছে গেল গেল সব গেল। আমরা আপিল বিভাগের পাঁচজন লোক। আমরা কি সব দিয়ে দিলাম?

এ সময় আদালত ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, কোথায় সব দিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেখান আপনি।

বুধবার (০৩ জানুয়ারি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে পাচঁ সদস্যের আপিল বেঞ্চ গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেয়ার আগে এসব কথা বলেন।

আজ আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমেই রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে ২০১৬ সালে আপিল বিভাগের দেওয়া পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহার চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আবেদন জানান।

এসময় আদালত বলেন, এটা অপসারণ করা যাবে। গেজেটের বিধি ২ (খ) দেখেন।

এ সময় ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, আমি তো চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ করবো। আমি সাবমিশন দিয়েছি, সেটা নিষ্পত্তি করেন।

তখন আদালত বলেন, আগে যতবার রুল হয়েছে, সব আপিল বিভাগে সাবমিট করা হয়েছে। এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, একবার রুল হলে তা চেঞ্জ করা যাবে না এমন তো না।

আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, আমি তো বিচার বিভাগের লোক। কিন্ত এটা তো কর্ম বিভাগে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমার সাবমিশন নিষ্পত্তি করেন।

তখন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, বলা হচ্ছে আমরা নাকি সবকিছু দিয়ে দিয়েছি, কোথায় সব দেওয়া হয়েছে, দেখান আপনি।

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিধি থেকে পড়তে বলেন প্রধান বিচারপতি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বিধিমালার বিভিন্ন বিধি এবং উপবিধি পড়তে থাকেন। তখন আদালত বেশ কিছু মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

আদালত বলেন, অনুসন্ধান শুরুই হবে না সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া। সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া সরকার কিছুই করতে পারবে না। অথচ পত্রিকায় লিখে দিয়েছে সব নাকি নিয়ে নিয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বিধির ২৫ (ক) পড়ার সময় আবদুল ওয়াহহাব মিঞা আবার বলেন, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট ছাড়া কিছুই হবে না।

বিধি ২৯ পড়ার সময় বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, জোড়ে জোড়ে পড়েন। না পইড়া আন্তাজি লেইখা ফেলে। আমরা পাঁচজন লোক (পাচঁ বিচারপতি) যে কইলাম। আমরা কি এতই বোকা? আমরা কি নবিশ? প্রত্যেকেই আপিল বিভাগের বিচারপতি। অথচ কথা হচ্ছে আমরা শেষ কইরা ফেলেছি। এভরি স্টেপ সুপ্রিম কোর্ট মাস্ট বি কনসার্ন।’

কর্তৃপক্ষ যদি প্রস্তাব দেয় আর সুপ্রিম কোর্ট অ্যাপ্রোভ না করলে হবে না। আগে তো রুলস ছিল না। আমার যেটা মনে হচ্ছে, আগেরটায় সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ছিল না।

আদালত আরও বলেন, বাইরে বলা হচ্ছে গেল গেল সব গেল। আমরা আপিল বিভাগের পাঁচজন লোক। সব দিয়ে দিলাম আমরা?

এরপর নিম্ন আদালতের গেজেট গ্রহণ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বাংলাদেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের ‍শৃংখলাবিধির ব্যাপারে ইতিপূর্বে আমরা সময় নিয়েছিলাম। এ ব্যাপারে রুলস যেটা গেজেট হয়েছে সেটা আদালতে দাখিল করেছি। আজকে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এটাকে সন্তোষ্ট হয়ে গ্রহণ করেছেন। এখন থেকে এটা কার্যকরী হলো।

তিনি বলেন, আদালত স্পষ্টভাবে দেখেছেন যে, নিম্ন আদালতের বিচারকদের ব্যাপারে অনুসন্ধান, তদন্ত, শাস্তি প্রদান, আপিল এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সু্প্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার বিধান রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা যদি রাষ্ট্রপতি বা আইনমন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে মতে কোনো বিষয়ে অমিল হয় কর্মচারিদের চাকরি বা অপসারনের ক্ষেত্রে, তাহলে সুপ্রিমকোর্টের মতামতই প্রাধান্য পাবে।  সুতরাং অনেকেই নানা রকম কলাম লিখছেন বা টকশোতে বলছেন সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা খর্ব হয়ে গেছে এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। এই রুলসটা পড়লেই বুঝা যাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুপ্রিমকোর্টের সসেঙ্গ পরামর্শে বিধান রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

টাইমবিং বিষয়ে জানতে টাইলে তিনি বলেন, টাইমবিং কথা বলেছেন, মাসদার হোসেন মামলায় এটি কন্টিনিউয়াজ মেন্ডামাস, বিভিন্ন সময়ে যদি মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো রকম মতদ্বৈততা দেখা দেয় বা কোনো রকম ডেটলক ক্রিয়েট হয় সেই ক্ষেত্রে আবার এই মামলায় তারা নির্দেশ দেবেন। অর্থাৎ নতুনভাবে কোনো কিছু আর দায়ের করতে হবে না। এই মামলাতেই বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজেন তারা আদেশ দিতে পারবেন। এজন্যই বলেছেন ফর দ্যা টাইমবিয়িং।

আজকের এই গেজেট গ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও আদালতের মধ্যে বিতর্কের অবসান হলে বলেও জানান তিনি।

এর আগে ২০১৬ সালের ২৬ আগস্ট একটা আদেশে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছিল ১১৬ অনুচ্ছেদের বিষয়ে। সেটাই আমরা বলেছিলাম এটা অপ্রয়োজনীয়। তার কারণ রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে। সে অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলেই রাষ্ট্রপতি এদের অপসারণসহ নানা রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং আদেশ দিয়ে থাকেন। সেই আদেশ রাষ্ট্রপতিই দেবেন কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন হবে।

এর মাধ্যমে আমরা ৭২ এর সংবিধানের ফিরে যেতে পারিনি এবং রিট করার পদটাও বন্ধ হয়ে গেছে মাসদার হোসেন মামলার আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলামের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের কথা ওনাদের বলা শোভা পায় না। তার কারণ অতি দু:খের সঙ্গে বলতে হয়, ষোড়শ সংশোধনীর মামলায় সংবিধানের দুজন প্রণেতা, তারা ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রণয়ন করেছিলেন তারা তার বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন আদালতে। তারা এখন আবার এ কথা বলতে পারে না।

১৯৯৯ সালের ০২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালাপ্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

আপিল বিভাগের এ নির্দশনারনার পর গত বছরের ০৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানির সময় আপিল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী।

এর পরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ১৬ জুন প্রধানবিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শিগগিরই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ।আইনমন্ত্রী। পরে ফের ২৭ জুলাই বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু সেই খসড়া নিয়ে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।

পরবর্তীতে আবার দফায় দফায় সময় নেয় সরকার পক্ষ। সর্বশেষ গত ১১ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ করে আইনমন্ত্রণালয়।

সারাবাংলা/এজেডকে/ জেডএফ

 

গেজেট_সুপ্রিমকোর্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬

তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর