Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএসএমএমইউতে খালেদা, স্বস্তিতে বিএনপি


৬ অক্টোবর ২০১৮ ২১:২৯

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। এ ঘটনায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে তার দল বিএনপিতে।

কারাবিন্দ হওয়ার চার মাস পর গত ৯ জুন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম কারাগারে যায়। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এফ এম সিদ্দিকী জানান, খালেদা জিয়া হঠাৎ করে পড়ে গিয়েছিলেন। বিষয়টিকে তারা ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ বলে ধারণা করছেন।

ওই সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত একটি হাসপাতালে ভর্তি করার সুপারিশ করেন তারা। তার চিকিৎসার ব্যাপারে চার পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালাও কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে আসেন ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

এরপর গত চার মাসে বেশ কয়েকবার বিএনপির উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির অনুরোধ জানান। সর্বশেষ গত ৯ সেপ্টেম্বর বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১০ জন সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত বিশেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির অনুরোধ জানান।

কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে বলা হয়, ‘কারাবিধি অনুযায়ী তার চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমইউ) হাসপাতালে হবে। অথবা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হবে।’

কিন্তু খালেদা জিয়া কিছুতেই বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। কারাগারে দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। স্বজনদের মাধ্যমে বার বার খবর আসছিল তার হাত-পা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিজ্ঞাপন

নয়াপল্টন কার্যালয়ে দফায় দফায় ব্রিফিং করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলে আসছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার বড় ধরনের ক্ষতি সাধনের জন্যই যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সম্প্রতি নয়াপল্টন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কি না— তা নিয়ে আমাদের শঙ্কা রয়েছে। তার কিছু হলে দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।’

এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (০৪ অক্টোবর) হাইকোর্ট নির্দেশ দেন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিএসএমএমইউতে ভর্তি করতে হবে। আর খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডে আওয়ামী পন্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও বিএনপিপন্থী ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর কোনো সদস্য থাকতে পারবে না।

এই নির্দেশের পর কিছুটা নমনীয় হন খালেদা জিয়া। বিএসএমএমইউতে ভর্তির ব্যাপারে রাজি হন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (০৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩ টায় তাকে বিএসএমএমইতে ভর্তি করা হয়। ভিভিআইপি কেবিন ৬১১ ও ৬১২ তার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দলীয় সূত্রমতে, নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করায় বিএনপির নেতারা কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। তারা মনে করছেন বিছা, ইঁদুর, তেলাপোকা, বিড়াল, ছারপোকা, ধূলা-বালি, আরশোলায় ভরা স্যাঁতসেঁতে কারাকক্ষের চেয়ে বিএসএমএমইউ’র ভিভিআইপি কেবিন এ মুহূর্তে খালেদা জিয়ার জন্য ‘মন্দের’ ভালো।

এসি রুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকায় কারাগারের চেয়ে বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসাসেবা ভালো হবে বলেই মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়াকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হবে এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

বিজ্ঞাপন

খালেদা জিয়ার আইনজীবী এবং বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডাম চেয়েছিলেন কারাগারের বাইরে বিশেষায়িত হাসপাতালে পছন্দের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে। আমরা একথাটা বারবার বলেছি। আদালতকেও বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সেটা হয়নি। শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে চলে যাওয়ায় ম্যাডামকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হলো। আপাতত বিষয়টিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছিলাম বিশেষায়িত হাসপাতালে তার চিকিৎসা হোক। তিনিও তাই চেয়েছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তথা সরকার সেটা না করে বিএসএএমএমইউতে ভর্তি করেছে। এখন  আমরা আশা করছি, বেটার চিকিৎসা তাকে দেওয়া হবে। অগত্যা কারাগারের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থেকে হাসপাতালের পরিবেশে তিনি কিছুটা হলেও ভালো থাকবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ায় তিনি (খালেদা জিয়া) হয়ত বিএসএমএমইউতে ভর্তি হতে রাজি হয়েছেন। আমরা আশা করব, আরো ভালো চিকিৎসার জন্য তাকে তার পছন্দের হাসপাতাল ইউনাইটেডে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার। আর বিএসএমএমইউর চিকিৎসায়-ই যদি তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেটা আমাদের জন্য, দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক-ই হবে।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া পুরনো ঢাকার কারাগারে বন্দি আছেন।

সারাবাংলা/এজেড/একে

খালেদা জিয়া বিএনপি চেয়ারপারসন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর