Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিধস্ত বিএনপিকে’ শেষ ধাক্কা দিতে চায় ১৪ দল


৬ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:০২

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: ভোটের মাঠে বিএনপিকে পরাজয় উপহার দিয়ে বিধস্ত দলটিকে শেষ ধাক্কা দিয়ে রাজনীতির মাঠে ‘নির্মূল করার প্রত্যয়ে’ প্রতিটি জেলায় ব্যাপকভাবে সমাবেশ বা কর্মী সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণ করবে ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট। এ লক্ষ্যে শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক গঠনগুলোর ‘সামাজিক শক্তিকে’কাজে লাগানোর কর্মকৌশলও নির্ধারণ হবে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৮অক্টোবর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা সারাবাংলাকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিএনপির ‘ষড়যন্ত্র’ মোকাবিলায় বিভাগীয় শহরে ঘোষিত সমাবেশের কর্মসূচিগুলো সফল করার লক্ষ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বডুয়া।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক,  গণআজাদী লীগের এস কে শিকদার, বাসদের রেজাউর রশিদ খান, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন প্রমুখ।

বৈঠক সূত্র জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে কর্মী সমাবেশের ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে ব্যর্থ হলে ১৪ দল জাতীয় রাজনীতিতে মুখ থুবড়ে পড়ে যেত। সে লক্ষ্যে সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর কুশীলবরা তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু ১৪ দলের দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের কারণে ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে আর কোনো ছাড় নয়।

বিজ্ঞাপন

এবিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি আমাদের জোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওনার সাথে পরামর্শ করে দ্রুত বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হবে।’

সূত্র জানায়, বৈঠকে তরিকত ফেডারেশনের নজিবুর বশর মাইজভান্ডারী বলেন, তারা ইলেকশনে আসুক আমরাও চাই। আমাদের মুখপাত্রও বলেছেন, আমরা খালি মাঠে গোল দিতে চাই না। আমরা খেলেই নির্বাচনে জিতব। কারণ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ। এখন শুধু ভোটের মাঠে ১৪ দলকে একসুরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বৈঠকে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে জোটের কলেবর বৃদ্ধি করা না গেলেও আমাদের সাথে অনেক সামাজিক সংগঠন যোগাযোগ করে। তাদের সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে তো কোনো সমস্যা নাই। কারণ ভোটের রাজনীতিতে এসব সামাজিক সংগঠনের একটা সামাজিক ইমপ্যাক্ট আছে। জনগণও বুঝতে পারছে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সামাজিক শক্তিগুলো ১৪ দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছে।’

 বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির রাজনীতি নিয়ে মানুষের আশঙ্কা আছে তাদের ভোটাররা হতাশ নেতাকর্মীরা হতাশ কর্মী-সমর্থক ও নেতারাও হতাশ আছে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে তিনি বলেন, জনগণের কাছে এরইমধ্যে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। এখন গ্রাম-গঞ্জ থেকে সবখানে আলোচনা চলছে। বিএনপির ভোটার ও নেতাকর্মীরা জনগণের কাঝে হতাশা ব্যক্ত করে বলছেন, বিএনপি কী পরিমাণ অসহায় হয়ে গেছে যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব তারা গ্রহণ করেছে। বিএনপি সরকার গঠন করলে নাকি ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী হবেন, বিএনপি’র কেউ নয়। এমন বার্তা বিএনপির ভোটার থেকে শুরু স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে।

শরিক জোটের নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়ার মতামতের জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের লেভেল প্লেইং ফিল্ডটা কী? বিএনপি-জামায়াত একদিকে থাকল আরেকদিকে আমরা থাকবো, এটা তো নয়। আমাদের কথা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধই থাকবে। বিরোধী দলের আসনেও মুক্তিযুদ্ধ থাকবে, সরকারও পরিচালনা করবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। আমরা আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের সাথে পাল্টাপাল্টিতে যাব কেন? আমাদের রাজনীতি হচ্ছে এদেরকে নির্মূল করা। এরইমধ্যে আমরা এদেরকে দুর্বল করে দিয়েছি, সামনের বার আমরা নির্মূল করতে চাই। কাজেই রাজনীতির এই জায়গা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে যাওয়া যাবে না। ছাড় দিয়ে দিয়েই তারা আজকে এ পর্যায়ে এসেছে। কাজেই আমরা আর ছাড় দিতে চাই না। বিএনপি হচ্ছে আমাদের মূল প্রতিপক্ষ। এই প্রতিপক্ষ যেভাবে বিধস্ত হয়ে গেছে আমরা যদি আমাদের রাজনীতিটা ধরে রাখতে পারি তাহলে অবশ্যই শুধু ১৪ দলের নির্বাচনী বিজয় না, রাজনৈতিক বিজয়ও অর্জন করব।’

সে লক্ষ্যে ভোটের মাঠে লিফলেট বিতরণসহ ৬৪টি জেলার জন্য ১০/১৫টি টিম করে দিয়ে প্রতিটি জেলায় জনসভা বা কর্মী সভার কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন।

বৈঠকে জেপির মহানসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশের অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টায় আজকে অনেকেই খুশী নন। সেজন্য এ অভিযাত্রাকে বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং যাদের আদর্শে কোন মিল নাই। তারাও আজকে একটি প্লাটফরমে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চলছে। এই অন্তর্কলহের ঘটনা ১৪ দলের সকলের ইমেজকে ক্ষুণ্ন করে দিচ্ছে।

বৈঠকে বাংলাদশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের ভাবমূতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ১৪ দলের আগামী দিনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা যত ভোটের মাঠে জনগণের কাছাকাছি যেতে পারবে ততই বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের রাজনীতি সহজভাবে মোকাবিলা করতে পারব।’

সারাবাংলা/এনআর/একে

১৪ দল ১৪ দলীয় জোট আওয়ামী লীগ একাদশ নির্বাচন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর