মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে ওআইসি
৩ জানুয়ারি ২০১৮ ১৭:৩৮
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করবে ইসলামিক দেশগুলোর জোট ওআইসি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক শেষে ওআইসির মানবাধিকার সংস্থা’র (আইপিএইচআরসি) প্রতিনিধি ড. রশিদ আল-বালুসি গণমাধ্যম কর্মীদের এই তথ্য জানান। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকটি বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বুধবার সকালে কক্সবাজারের শিবিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতে ওআইসি’র মানবাধিকার সংস্থার ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। প্রতিনিধি দলটি আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। আগামীকাল থেকে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেখতে যাবেন।
ড. রশিদ আল-বালুসি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের অধিকার নিশ্চিত করে তাদের বসত-ভিটায় ফিরিয়ে নিতে হবে। মিয়ানমার যাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে ফিরিয়ে নেয় এজন্য যথাযথ চাপ প্রয়োগ করবে ওআইসি। এ ছাড়া বৈশ্বিক একাধিক ফোরামে এরই মধ্যে ওআইসি রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলে ধরেছে এবং সামনের দিনেও তুলে ধরবে।
তিরি আরও বলেন, নির্যাতিত এই জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ যেভাবে সহযোগিতা করছে তা প্রশংসনীয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওআইসি সবসময়েই বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছে।
ওআইসির সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ওআইসির মানবাধিকার সংস্থা (আইপিএইচআরসি) মিয়ানমার সফরের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ওআইসির প্রতিনিধি দলকে সফরের অনুমতি দেয়নি। তাই প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত নেয়।
ওআইসির প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের সময় সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ করে প্রতিনিধি দলটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতনের ঘটনা নিরূপণ এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
এদিকে, সামনের মে মাসে ঢাকায় ওআইসির পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে বুধবার সফরে আসা প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর চলমান নির্যাতনের কঠোর নিন্দা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওআইসি। বৈশ্বিক সংস্থা জাতিসংঘের অধিবেশনেও বিষয়টি তুলে ধরেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রাপ্য নাগরিক অধিকার দিয়ে তাদের বসত-ভিটায় ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আহবান জানিয়েছে ওআইসি।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা জোরালো হওয়ার পর হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের একাধিক আশ্রয় শিবিরে অবস্থান করছে।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এ ঘটনাকে মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে অবহিত করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
সারাবাংলা/জেআইএল/এমএ