ক্যানসারাক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় বিশেষ বরাদ্দের দাবি
৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:২০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ক্যানসারাক্রান্ত সন্তানের মা-বাবা তাদের সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান, অনেকে আবার চিকিৎসা চালিয়ে যেতেও পারেন না। তাই এসব শিশুদের জন্য একটি স্পেশাল ফান্ড দরকার বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম নাসিরুদ্দিন।
তিনি বলেন, সরকারিভাবে যদি এসব ক্যানসারাক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি বিশেষ তহবিল (স্পেশাল ফান্ড) দেওয়া হয় তাহলে আমরা তাদের আরও বেশি করে সাপোর্ট দিতে পারি বলেও জানান তিনি।
আজ রোববার (৭ অক্টোবর) শিশু ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে যেসব ক্যানসারাক্রান্ত শিশু চিকিৎসা শেষে সুস্থ আছে তাদের পরিবারও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ।
ডা. এ কে এম নাসিরুদ্দিন বলেন, শিশুদের ক্যানসার অাক্রান্ত হওয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। যে বাবা-মা জানতে পারেন তার সন্তানের এরকম একটা অসুখ হয়েছে, সেই পরিবার কিসের ভেতর দিয়ে যান, সেটা কেবল তারাই বুঝতে পারেন; আর কিছুটা পারি আমরা চিকিৎসকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন কিন্তু যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সে পরিমাণ সাপোর্ট তাদের দেওয়া প্রয়োজন-সে চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারছি না। কারণ, সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং রোগীর অনেক চাপ। তবে যারা এখানে আসেন তারা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আসেন। আমরা এই বিভাগকে আরও সমৃদ্ধশীল করতে চাই।
ক্যানসার অাক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া অনেক ব্যয়বহুল জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা নিঃস্ব হয়ে যান, অনেকে চিকিৎসা চালিয়ে যেতেও পারেন না। ব্যয়বহুল ওষুধগুলো দিতে পারি না, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও দিতে পারি না। তবুও আশ্বস্ত করতে চাই, আপনাদেরকে যেন উন্নত পরিবেশে চিকিৎসা দিতে পারি সে বিষয়ে সচেতন থাকবো।
তাই এসব শিশুদের জন্য একটি স্পেশাল ফান্ড দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাই সরকারিভাবে যদি এসব ক্যানসারাক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি বিশেষ তহবিল (স্পেশাল ফান্ড) দেওয়া হয় তাহলে আমরা তাদের আরও বেশি সাপোর্ট দিতে পারি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ খসরু বলেন, একজন ক্যানসারাক্রান্ত শিশুর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হয়, এর কিছুটা হয় তো আমরা দিতে পারি; কিন্তু বেশিরভাগই দিতে হয় পরিবারকে। যা বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় পরিবারগুলো। তাই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডা. হাবিবে মিল্লাতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এই বিভাগে থোক বরাদ্দ বা অনুদান দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে।
একইসঙ্গে শিশুবিভাগ, নবজাতক বিভাগের চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তার পাশে থাকার জন্য। অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ বলেন, শিশু ক্যানসার নিরাময় যোগ্য। যদি সচেতনতা থাকে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা হয় তাহলে শিশু ক্যানসার ভালো হয়। তাই, চিকিৎসক বাদ দিয়ে যেন পরিবারগুলো তাবিজ-কবজ না করেন সে আহ্বানও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যে সীমিত সম্পদের মধ্যে থেকে, যে সমস্যার মধ্যে দেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তাতে বাঙালি জাতির চিকিৎসকদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা দরকার।
অপরদিকে, শিশুদের জন্য শিশু হাসপাতাল বা বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু বিভাগ ছাড়া যে পরিমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র দরকার সেটা তেমনভাবে নেই। একইসঙ্গে শিশু হাসপাতালও কিন্তু সব ধরণের চিকিৎসা দিতে পারে না। তাই বিশেষ তহবিলের দাবি জোরালো হওয়া উচিত।
শিশুদের জন্য এবং ক্যানসারাক্রান্ত শিশুদের জন্য স্পেশালাইজড হাসপাতাল হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন ডা. হাবিবে মিল্লাত।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের উপাধক্ষ্য অধ্যাপক ডা. শফিকুল আলম চৌধুরী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সাহনূর ইসলাম, ইফফাত আরা শামসাদসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই