Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রামীণফোন কর্মকর্তার যোগসাজশে অপরাধীদের হাতে অবৈধ সিম


৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:০১

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: ‘জিনের বাদশাহ’র নামে ফোন করে চাঁদা দাবি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে ফোন করে হুমকি, হরহামেশাই ফোন করে হত্যার হুমকি অপরাধীদের, অনলাইনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে টাকা নিয়ে লাপাত্তা পরে সেই সিম বন্ধসহ নানা প্রকার অপরাধীরা যে সব অবৈধ সিম ব্যবহার করতেন তা আসত গ্রামীণফোন কর্মকর্তার হাত ধরেই।

এ সব সিম অপরাধীদের হাতে ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দিতেন তারা।

ফোন করে শ্রীলঙ্কার এক নাগরিকের কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগে একটি জিডির অনুসন্ধান করতে গিয়ে গ্রামীনফোনের এমন একজন কর্মকর্তাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

আটকেরা হলেন গ্রামীণফোনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (বিজনেস সেলস) সৈয়দ তানভীরুর রহমান ও ডিস্ট্রিবিউটর কোম্পানি ‘মোনাডিক বাংলাদেশ’ এর স্বত্বাধিকারী তৌফিক হোসেন খান পলাশ। শনিবার (৬ অক্টোবর) এ দুজনকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫২৩টা মোবাইল সিম ও একটা ল্যাপটপ ও একটা ট্যাবলেট কম্পিউটর (ট্যাব) জব্দ করা হয়।

রোববার (৭ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর সিও (কমান্ডিং অফিসার) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির সাংবাদিকদের এ সব তথ্য জানান।

র‌্যাব-৪ এর সিও বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ভাষানটেক এলাকায় বসবাসকারী শ্রীলঙ্কার এক নাগরিকের কাছে গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহার করে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

শ্রীলঙ্কার ওই নাগরিক পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর ভাষানটেক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির একটি কপি নিয়ে র‌্যাব-৪ এ অভিযোগ করেন ওই ব্যক্তি। এরপর র‌্যাব অনুসন্ধানে মাঠে নামে।

র‌্যাব-৪ এর এই অধিনায়ক বলেন, অনুসন্ধানে নেমে প্রথমে দেখা যায়, মামুন নামে পরিচয়ে চাঁদা দাবিকারী ব্যক্তির সঙ্গে সিমের কাগজপত্রের মিল নেই। আবার সিম রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্রের নাম-ঠিকানা ও ফ্রিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে কোনো মিল নেই। আর সিমটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে মাইক্রোকডেস ইনফরমেশন নামক একটি সংস্থার অনুকূলে। অথচ ওই কোম্পানিটি জানেনই না যে, তাদের কোম্পানির নামে সিম রেজিস্ট্রেশন করে অন্য কেউ ব্যবহার করছে। এরপর ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি মোনাডিক বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী পলাশ ও গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে যিনি সিম অ্যাক্টিভেট করেছেন (তানভীরুর রহমান) তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব-৪ এর কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

আটকরা জানান, তারা গত কয়েক মাসে ৪২টি কোম্পানির অনুকূলে অনুমতি ব্যতীত ৮৬৭টি সিম ইস্যু করেন। তারা গত ৯ জুন থেকে ১১ জুন সিমগুলো অ্যাক্টিভেট করেন। যার সবই চলে যেত বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের হাতে। বিপুল অংকের টাকার লোভে গ্রামীণফোনের ওই কর্মকর্তা এসব কাজ করতেন বলে জানায় র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, ব্যক্তির নামে সিম ইস্যু করলে যতটা সিম ততটা ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট দরকার হয়। আর প্রতিষ্ঠানের নামে সিম ইস্যু দেখালে এক ফ্রিঙ্গার প্রিন্টেই একাধিক সিম ইস্যু দেখানো যায়। তাই তারা কোম্পানিগুলোকে বেছে নেয়। আবার যারা অবৈধ ভিওআইপি চালান তারাও এ সিমের বড় ক্রেতা।

বিজ্ঞাপন

র‌্যাব আরও জানায়, আগে সিমের মাধ্যমে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে সিম রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র ও ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট ধরেই শনাক্ত করা যেত। কিন্তু কিছুদিন থেকে ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট ধরে আর কোনো কিছু শনা্ক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। যা একটি রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। এদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। এদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না জানতে আসামিদের ব্যাপকহারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

অবৈধ সিম বিক্রয় গ্রামীণফোন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর