Wednesday 16 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গেঁটে বাতে বেঁকে গেছে খালেদা জিয়ার বাম হাত


৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৩৫ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৪৫
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: রিউমেটিক আর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাত ও এ সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর এই সমস্যা দীর্ঘদিন থাকলেও চিকিৎসা না হওয়ায় তৈরি হয়েছে তার শারীরিক জটিলতা। তিনি বাম হাত তুলতে পারেন না, বাম কাঁধ নাড়াতে পারেন না, তার ঘাড়, কোমর ও পায়েও রয়েছে ব্যাথা।

সোমবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুল জলিল চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

আরও পড়ুন- খালেদার চিকিৎসা আগের মতই চলবে, দেখা হয়নি মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে

বিজ্ঞাপন

এসময় খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের আরেক সদস্য বিএসএমএমইউয়ের রিউমেটোলজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ন্ত্রণে এনে মূল চিকিৎসায় যেতে কতদিন লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে সবকিছু ঠিকঠাক হলে হয়তো দুই সপ্তাহের মধ্যে খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসায় যাওয়া সম্ভব হবে।সংবাদ সম্মেলনে ডা. জলিল ও ডা. আতিকুল ছাড়াও খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের আরও দুই সদস্য কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানজিমা পারভীন ও ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেছা আহমেদ এবং বিএসএমএমইউ পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডা. আব্দুল জলিল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ‘রিউমেটিক আর্থ্রাইটিসে’ ভুগছেন। বাংলায় একে বলে গেঁটে বাত। তিনি এর জন্য ওষুধ খাচ্ছিলেন। কিন্তু ওষুধের ডোজ হোক বা যেকোনো কারণেই হোক, তার শরীরে এ সংক্রান্ত কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার বাম হাত বাঁকা হয়ে গিয়েছে, হাত তুলতে পারছেন না। বাম কাঁধ নাড়াতে পারেন না, যাকে ‘ফ্রোজেন শোল্ডার’ বলা হয়। এরই ফলে তার হাত ঝিমঝিম করছে, কিছু রগে চাপ পড়ছে এবং কিছু নিউরো সিম্পটমও ডেভেলপ করেছে। আরও অনেক বয়স্ক মানুষের মতো তারও ঘাড়ে ব্যথা রয়েছে, কোমরে ব্যথা রয়েছে, লেফট হিপ জয়েন্টেও ব্যথা রয়েছে। এগুলোই তার প্রধান অসুস্থতা।

আরও পড়ুন- মেডিকেল বোর্ডের তিনজনই স্বাচিপের আজীবন সদস্য: ডা. জাহিদ

ডা. জলিল বলেন, খালেদা জিয়ার দু’টি হাঁটুই প্রতিস্থাপন করা। তিনি ভালোই ছিলেন, হাঁটতেও পারছিলেন। কিন্তু মাঝে হাঁটু ফুলে গিয়েছিল, তার চিকিৎসাও বোধহয় হয়েছিল। এছাড়া উনি কিন্তু ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিক রোগী। এর জন্য মুখে ওষুধ খাচ্ছেন। বোধহয় ইনসুলিন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি নেননি। মাঝখানে তার রক্তে সুগারও কমে গিয়েছিল। এখন তার ডায়াবেটিসটা নিয়ন্ত্রণে কি না, তা দেখতে হবে আমাদের।

খালেদা জিয়া রক্তচাপেও ভুগছেন বলে জানান তার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান এই চিকিৎসক। আরও জানান, খালেদা জিয়ার সোডিয়াম কমে যাচ্ছিল, শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার লক্ষণও রয়েছে।

‘রিউমেটিক আর্থ্রাইটিস’জাতীয় রোগের চিকিৎসা করাতে গেলে অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয় জানিয়ে ডা. জলিল বলেন, বিষয়টা এমন না যে দু’টি ওষুধ দিলেই তিনি ভালো হয়ে যাবেন। তাকে বিষদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তার কিডনি, লিভারের সমস্যা রয়েছে কি না, হার্টের সমস্যা রয়েছে কি না, এগুলোও দেখতে হবে। আবার আমরা যে আধুনিক বা উন্নত চিকিৎসা দেবো, সে ওষুধ প্রয়োগ করার আগে এটাও দেখা দরকার যে তিনি সেসব ওষুধ নিতে পারবেন কি না।

মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছে কি না— জানতে চাইলে ডা. জলিল বলেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা নিজেরা একসঙ্গে বসি, আলোচনা করি। বোর্ড একসঙ্গে দেখিনি তাকে। প্রথমদিন আমি তাকে দেখেছি, গতকাল রাতে ডা. সৈয়দ আতিকুল হক তাকে দেখেছেন। আমাদের পক্ষে তার ওখানে দু’জন চিকিৎসককে নিয়োগ করা হয়েছে, যারা তার পুরো হিস্ট্রি নিয়ে আমাদের রিপোর্ট তৈরি করেন। গতকাল রাতে তারা এ বিষয়ে কাজ করেছেন, কিন্তু পুরোটা শেষ করতে পারেননি। আজ রাতে আবার দেখবেন।

কতদিন বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে থাকতে হতে পারে বলে মনে করছেন— জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, এটা সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তিনি তো এখন কারাবন্দি। হয়তো কিছু কিছু পরীক্ষার জন্য আমাদের কারাকর্তৃপক্ষের অনুমতিরও দরকার হবে। সবকিছু যদি স্মুথলিও ফ্লো করে, তাহলেও টাইমটা বলা মুশকিল। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না এলে হয়তো চিকিৎসাটা দেওয়া যাবে না। মূল চিকিৎসার আগে শারীরিক জটিলতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে কতদিন লাগবে, সেটার ওপরই আসলে নির্ভর করবে সবকিছু। আর সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে কতদিন লাগবে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তবে আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) থেকেই ফিজিওথেরাপি দেওয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলেছেন, তিনি পছন্দমতো ফিজিওথেরাপিস্ট ও গাইকোনোলজিস্ট নিতে চান। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলেছেন কি না— এ প্রশ্নের জবাবে চাইলে ডা. আতিকুল বলেন, আমাদের সঙ্গে তো তার দেখা হয়নি এখনও। তবে এটা সেকেন্ডারি বিষয়। আগে তার আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা দিতে হবে।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সময় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মামুন সঙ্গে ছিলেন কি না— জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, তিনি (ডা. মামুন) আমার সঙ্গে রাতে ছিলেন।

খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে অনীহা দেখালে কিংবা অন্য কোথাও যেতে চাইলে কোনো সুপারিশ থাকবে কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. জলিল বলেন, এটা এখনও বলার সময় আসেনি। তিনি কী বলবেন বা বলবেন না, সেটা তো আমরা এখনও জানি না।

আরও পড়ুন-

বিএসএমএমইউয়ে পৌঁছালেন খালেদা জিয়া

৬১১-তে ভর্তি খালেদা জিয়া, নতুন মেডিকেল বোর্ড

সারাবাংলা/জেএ/এমও/জেডএফ/টিআর

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চিকিৎসা বিএনপি বিএসএমএমইউ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর