‘মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি, কে হরিজন সেটা দেখি না’
৮ অক্টোবর ২০১৮ ২০:২৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। জাতির পিতা সেটা শিখিয়েছেন। কে হরিজন, কে কী সেটা দেখি না। প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় এখন থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের যাতে সুন্দরভাবে আবাসনের ব্যবস্থা হয়, সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে।
সোমবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং’র মাধ্যমে দয়াগঞ্জ ও ধলপুর সিটি কলোনিতে হরিজন সম্প্রদায়ের জন্য নির্মিত ৪টি আধুনিক ভবনের (৩৪৫টি ফ্ল্যাট) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি খুব আনন্দিত। আমরা দয়াগঞ্জ এবং ধলপুরে চারটি ভবন উদ্ধোধন করছি যেখানে আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা থাকেন।
আরও পড়ুন- কোনো মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হবে না: প্রধানমন্ত্রী
‘আমি বলব, আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। জাতির পিতা সেটা শিখিয়েছেন। যেটা আমার একজন বোন বললেন যে, আমরা হরিজন। হরিজন বা কে কী— সেটা আমি দেখি না, আমি দেখি একজন মানুষ। তিনি হচ্ছেন মানুষ। মানুষকে আমরা মানুষ হিসেবে দেখি। মানুষকে হিসেবে সম্মান করি। আমার বাবা সেটাই শিখিয়েছেন।
প্রকল্প উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে একজন উপকারভোগী নারী নিজেকে হরিজন বলে পরিচয় দেন। সেই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
তিনি ভবন নির্মাণের অন্তরালের পটভূমি তুলে ধরে আরও বলেন, আমার বোন রেহানা, তার মেয়ে ওর বয়স তখন বোধহয় ১৬-১৮ বছর বয়স। আমি যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হলাম তখন এসে একদিন বললো যে, হরিজন সম্প্রদায় এরা অবহেলিত। এরা খুব কষ্ট করে থাকে। তাদের কয়েকজনকে তুমি গণভবনে ডাকো। তারপর তখন তার সঙ্গে কি করে যোগাযোগ হলো, সে নিয়ে আসলো আর বললো যে, থাকার জায়গা নাই, তোমাকে ওদের জন্য বাসস্থান তৈরি করে দিতে হবে।
তখনই আমরা প্রজেক্ট নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ৫ বছর সময়ে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। কিন্তু আমরা যেটা নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম, তারা এমনভাবে টাকা পয়সা লুট করে খেয়ে যায়, যে চারতলা ভবনগুলি নির্মাণ করা হয়েছিল একটাও বাসযোগ্য ছিল না। আমি দ্বিতীয়বার ২০০৯ যখন সরকারে আসার পর খোঁজ নেই। ওই বিল্ডিংগুলির কী অবস্থা?
খোঁজ নিয়ে ভবনগুলির করুণ অবস্থার চিত্র পাওয়া যায় সেকথা কথা তুলে ধরে বলেন, তখন সিদ্ধান্ত নেই, ওগুলো ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে নতুন ভাবে নির্মাণ করতে হবে। যে টাকা গেছে, সে টাকা গেছে। যে ঠিকাদার কাজ করতে গিয়েছিল, টাকা লুট করে খেয়ে গেছে। আর তখন যিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিল সাদেক হোসেন খোকা, সে তো সব টাকাই চুরি করে চলে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, রাজধানীতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ১৩টি বহুতল ভবন হবে। এর মধ্যে দয়াগঞ্জে ৫টি ভবনে ৪৪০টি ফ্ল্যাট, ধলপুরে ৫টি ভবনে ৪৮০টি ফ্ল্যাট এবং সূত্রাপুরে তিনটা ভবনে ২২৮টা ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। যার ব্যয় প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। উক্ত ১৩টি ভবনের বহুতল ভবনের মধ্যে আজকে চারটি ভবনের উদ্ধোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী নামটাও কিন্তু আমি পরিবর্তন করে দিয়েছি। কারণ আমরা জানি তাদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখবে। আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন হতে হবে। আমরা ঝাঁড়ু দিয়ে পরিষ্কার করি, ঝাঁড়ু আমাদের লাগবে ঠিক আছে। কিন্তু আমি মাননীয় মন্ত্রীকে বলেছি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য এখন যে আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে অর্থ্যাৎ রাস্তাগুলো পরিষ্কার করার জন্য গাড়ি বা হোভার কিনে দিতে হবে। যেটা দিয়ে ধুলা পরিষ্কার হবে। এ ছাড়াও পানি দিয়ে পরিষ্কারের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, কারণ যাদের জন্য ফ্ল্যাটগুলি তাদের ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং গাড়ি ব্যবহার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তারা কাজ করতে পারে। সেজন্য ভবিষ্যতে তাদেরকে ট্রেনিং দেবো, উপযুক্ত করে গড়ে তুলবো।
‘প্রত্যেকটি গৃহহারা মানুষ ঘর পাবে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সকলের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য তারা সেবা দেয়। কাজ করে, শ্রম দেয়। কিন্তু তাদের জীবনমানটা যেন সুন্দর হয়। তারাও যেন সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করতে পারে। সুন্দরভাবে বাস করতে পারে। সেটা নিশ্চিত করা মনে করি, সরকার হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। জনগণের সেবার জন্যই আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি।
বহুতলভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা এদেশের সকল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই দেশ স্বাধীন করেছেন। কাজেই আমাদের লক্ষ্য, বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আর ঢাকা হচ্ছে রাজধানী। রাজধানী যদি সুন্দর না থাকে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকে তখন আমাদের দেশের সম্পর্কে তাদের ভাবমূর্তিটা ভাল থাকে না কারণ এখনো দেশি-বিদেশি মানুষ আসে।
আজকে যেমন আমি রাজধানীতে বাসস্থান করলাম। সাথে সাথে এটাও নির্দেশ দিচ্ছি, প্রত্যেক জেলা উপজেলায় এখন থেকে এই পরিচ্ছন্নতা কর্মী সেখানে যারা কাজ করবে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা। তারা সুন্দরভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়, সেই ব্যবস্থাটাও নিতে হবে।
আমরা প্রত্যেকটি গ্রামকে নাগরিক সুবিধা দিয়ে শহরে রূপান্তর করতে চাই উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে জন্য শুরু থেকেই আমাদের পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রত্যেকটি এলাকাই সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই। তা ছাড়া বাংলাদেশের সকল শ্রেণির মানুষ তাদের আবাসন ব্যবস্থা তাদের সুন্দরভাবে বসবাসের চিন্তাভাবনা এটা আমাদের রয়েছে। সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা নিচ্ছি সেভাবেই আমরা কাজ করে যাবো।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শহরও বেড়ে গেছে তাই ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ দুইভাগে বিভক্ত করার প্রয়োজনীতা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যাতে করে যারা কাজ করবে তাদেরও কাজের সুবিধা হয় এবং মানুষও যেন সেবা পায়। আর যারা কাজ করবে তারাও যেন সুন্দরভাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজগুলো করতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
রাজধানী যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সুন্দর থাকে তাহলে এটা সকলের জন্য জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবেও দেশের মানুষের সম্মান বৃদ্ধি পায় খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। সেদিকে লক্ষ্য করে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আমার একটাই দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। কারণ আমার বাবা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমার লক্ষ্য হচ্ছে তার স্বপ্নটা পূরণ করা। যেন বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে ওঠে।
এরপর দয়াগঞ্জ ও ধলপুরের নবনির্মিত চারটি বহুতলবিশিষ্ট ভবনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা।
গণভবন প্রান্তে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিব জাফর আহমেদ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
অপরদিকে ধলপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই