Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিনা কারণে জেলে রাখা অসাংবিধানিক: আপিল বিভাগ


৩ জানুয়ারি ২০১৮ ২০:২৩

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় বিভিন্ন ভুল শাস্তি দেওয়া হয়। এই ধরনের শাস্তি সাধারণ মানুষের সঠিক বিচার পাবার স্বাধীনতা নষ্ট করে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন আদালত।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সমালোচনা করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেছেন, পুলিশ থাকে না, থাকতে পারবে না, জেল-জরিমানা দিয়ে দিবেন। সাধারণ মানুষের কথা কি বলবো, আমার নিজেরই তো ভয় লাগে। বিনা কারণে কোনো নাগরিককে একদিন জেলে রাখাও সংবিধান সমর্থন করে না।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত আইনের বেশ কয়েকটি ধারা, উপধারাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের শুনানির সময় আদালত বুধবার এ কথা বলেন আদালত। পরে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছেন আদালত।

বুধবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম।
শুনানি শুরু হলে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম তার লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় আদালত তাকে সাক্ষ্য আইন পড়তে বললে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী বলেন, আমি যেটা বুঝেছি তা আমি লিখিতভাবে উপস্থাপন করছি। এটি না শুনেই আপনারা কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে পারেন না।

বিজ্ঞাপন

লিখিত শুনানির পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, ‘আগের মানুষ আর নাই। তখনকার মানুষের একটা চরিত্র ছিল। এখন কোনো একটা চাকরির জন্য চারিত্রিক সদন নিতে গেলেও চেয়ারম্যান সাহেবরা টাকা নেন। টাকা খেয়ে সালিশে কথা বলেন। আগে তো ২৫-৩০ বছর একজনই চেয়ারম্যান থাকতেন। কোনো অভিযোগ শোনা যেত না। এখন মানুষ বাড়ছে কিন্তু ম্যান অব কোয়ালিটি কমছে।’

এ সময় আপিলের আরেক সদস্য বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রবীন্দ্রনাথের ‘বঙ্গমাতা’ কবিতা দুইটি লাইন আবৃত্তি করেন,
“সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো বাঙালি করে, মানুষ করোনি।”

বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, এখন মানুষের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে গেছে মিস্টার ইসলাম। আপনি মোবাইল কোর্টের সামনে পড়েছেন কোনোদিন? মোবাইল কোর্ট নিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক আছে। ঘটনাস্থলেই আপনি সাজা দিয়ে দিচ্ছেন অথচ তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিচ্ছেন না। জোর করেও তো স্বীকারোক্তি আদায় করা যায় মিস্টার ইসলাম।

তখন আমীর উল ইসলাম বলেন, এটা তো ভাল বিষয়। আপনার দর্শন আর আমার দর্শনে পার্থক্য আছে।

বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, দণ্ডবিধির এতগুলো ধারা আপনি অন্তর্ভূক্ত করে নিলেন আবার আপনিই বলছেন এটা আদালত, না প্রশাসনিক ব্যবস্থা! এটা তো আমাদের বুঝতে হবে। খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। আমাদের তো রায় লিখতে হবে।
একটা লোককে ২ বছরের জেল দিয়ে দিবেন তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগই দিচ্ছেন না। তার সুযোগটা কোথায়? হ্যাঁ, কিছু কিছু আইন আছে যেখানে মোবাইল কোর্ট থাকতেই হবে। কিন্তু সাক্ষ্য আইনের সব শিডিউল যদি নিয়ে নেন তাহলে এটা কি হবে? এমন প্রশ্ন রেখে আদালত মঙ্গলবার পর্যন্ত মূলতবি করেন।

বিজ্ঞাপন

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত ২০০৯ সালের আইনের ১৪ টি ধারা ও উপধারাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে গত বছরের ১১ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণাও করা হয়।

পরে রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে। এ আপিলের শুনানির সময় আদালত এসব কথা বলেন।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমএ

আপিল_বিভাগ ভ্রাম্যমাণ_আদালত

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর