রুপির বিপরীতে টাকা শক্তিশালী, আমদানিতে লাভ
৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৫৫
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ভারতীয় রুপির বিপরীতে শক্তিশালী অবস্থানে আছে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মান। তবে, মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ায় প্রতিবেশি ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। রফতানি ও রেমিটেন্স আয়ের স্বার্থে সম্প্রতি বাংলাদেশেও টাকার মান কিছুটা কমানো হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতীয় রুপির বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হলে রফতানিতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমদানিতে কিছুটা লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুখপাত্র) সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। রফতানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর সুবিধার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) ভারতীয় রুপির মান বাংলাদেশি মুদ্রায় রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। ওই দিন বাংলাদেশি ১১৩ টাকার বিপরীতে পাওয়া যায় ভারতীয় ১০০ রুপি। অর্থাৎ, ১০০ টাকায় মিলেছে ৮৯ রুপি। বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে রুপির এটি সর্বনিম্ন অবস্থান। গত রোববার (৭ অক্টোবর) রুপির মান ১ পয়সা বেড়ে বাংলাদেশি ১ টাকা ১৪ পয়সার বিপরীতে ১ রুপি পাওয়া যায়।
ইন্টারনেট মানি এক্সচেঞ্জ থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) এক মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য দাঁড়ায় ৭৩ দশমিক ৬৬ রুপি। অথচ চলতি বছরের প্রথম দিনেও ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাওয়া যেত ৬৩ দশমিক ৮৮ রুপি। ফলে গত ১০ মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কমেছে ১৫ শতাংশ। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ওই অনুপাতে না কমায় রুপি ও টাকার মান পাশাপাশি চলে আসছে। সর্বশেষ রোববার এক মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ভারতীয় মুদ্রার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ০৭ রুপি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় রুপির বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মান বাড়লে রফতানি খাতে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমদানির ক্ষেত্রে লাভবান হবে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ লাভবান হওয়ার কথা। এছাড়াও রুপি ও টাকার মান সমান কিংবা কাছাকাছি হলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে চিকিৎসা কিংবা ভ্রমণ করতে যাওয়া ২০ লাখ লোক লাভবান হবেন। কারণ রুপি কিনতে তাদের টাকা কম লাগবে। এতে করে তাদের খরচও কম হবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, রুপির যে হারে অবমূল্যায়ন হয়েছে সেই হারে টাকার অবমূল্যায়ন না হওয়ায় রুপির মান টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। এই অবস্থায় ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে কিছুটা সুবিধা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রফতানিতে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন হলে আমাদের জন্য খুব একটা লাভ হওয়ার কথা না। সাম্প্রতিককালে ভারতে আমাদের রফতানির পরিমাণ বেড়েছে। এই অবস্থায় রুপির মান কমে গেলে তাদের আমদানির পরিমাণ কমে যেতে পারে। এতে করে আমাদের রফতানির পরিমাণ কমে যাবে।
মির্জ্জা আজিজুল আরও বলেন, রুপির মান কমে যাওয়ায় ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের লাভবান হওয়ার কথা। তবে সেই সুবিধাটি পাওয়া যাবে যদি আমরা ডলারের পরিবর্তে রুপির মাধ্যমে আমদানির লেনদেন করি।
অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার কারণে ডলারের মান বাড়ছে। এর সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মুদ্রার মান পড়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত, শ্রীলংকা, নেপালের মুদ্রা ধ্বস নামলেও বাংলাদেশে খুব বেশি অবমূল্যায়ন হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ভারতের মুদ্রা রুপির মান বাংলাদেশে টাকার কাছাকাছি চলে আসাটা আমাদের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। বিশেষ করে বাংলাদেশ ভারত থেকে রফতানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় আমরা লাভবান হব।
এদিকে, ইন্টারনেট মানি এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, ডলারের বিপরীতে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের মুদ্রা বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। রোববার বাংলাদেশি টাকার বিনিময় হার হলো— ১ মার্কিন ডলার ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা, এক ভারতীয় রুপির সমপরিমাণ ১ টাকা ১৪ পয়সা, এক ব্রিটিশ পাউন্ড ১১২ টাকা ৭০ পয়সা, এক ইউরো ৯৯ টাকা ২৪ পয়সা ও এক সৌদি রিয়াল ২২ টাকা ৩৬ পয়সা।
এছাড়াও, বাংলাদেশি এক টাকায় ১ দশমিক ৩৪ নেপালি রুপি ও ১ দশমিক ৯২ শ্রীলংকান রুপি, ৫৭১ দশমিক ৭২ ইরানিয়ান রিয়াল, ১৪ দশমিক ২২ ইরাকি দিনার, ১ দশমিক ৩২ আলবেনিয়ান লিক, ১ দশমিক ৪২ আলজেরিয়ান দিনার, ৫ দশমিক ৭৭ আর্মেনিয়ান ড্রাম, ৪৮ দশমিক ৫৯ কম্বোডিয়ান রিয়েল ও ৭ দশমিক ৯৮ চিলিয়ান পেসো পাওয়া যায়। অন্যদিকে, এক টাকায় ২ দশমিক ৯৯ ইয়েমেনি রিয়াল, ১৮ দশমিক ২ লেবানিজ পাউন্ড ও ২৭৮ দশমিক ১৩ ভিয়েতনামিজ ডং পাওয়া যায়।
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম/টিআর