পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা, বাড়ছে দুশ্চিন্তা
৯ অক্টোবর ২০১৮ ১০:২৫
।। রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
চুয়াডাঙ্গা: পানির অভাবে সোনালী আঁশের ফসল পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। শুধু তাই নয়, মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টির কারণে এ বছর জেলাটিতে পাটের আবাদ ব্যহত হয়েছে। আর এখন পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে জাগ দেওয়ার প্রক্রিয়া। ফলে পাটের আবাদ থেকে এ বছর লাভবান হতে পারবেন কি না— তা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে কৃষকদের মনে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, গত মৌসুমে এ জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ২০ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি পাটের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৪ মেট্রিক টন হিসাবে ৫২ হাজার ৬৬৮ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল।
এ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে মাত্র ৯ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে পাট উৎপাদন হবে মাত্র ২২ হাজার ৫৪৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় এবার মাত্র ২৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৯৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৮০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার হাজরাহাটী গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান (৪২) জানান, তিনি গত বছর পৌনে ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। পাট উৎপাদন হয়েছিল ১৫ মন। পাট বিক্রির টাকা আর আবাদের খরচ সমান হওয়ায় চলতি বছর আর পাটের আবাদ করেননি তিনি।
হাবিবুর রহমান আরও জানান, একসময় এ অঞ্চলে নিচু জমিতে পানি থৈ থৈ করত। বর্তমানে বৃষ্টির অভাবে খাল, বিল, ডোবা, নালায় পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পাট জাগ দিতে পারছেন না। ফলে পাট নিয়ে জেলার কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কৃষকরা নিরুপায় হয়ে পুকুর বা পানি আছে এমন গর্তেও পাট জাগ দিচ্ছেন। অধিকাংশ কৃষক পাটের বিকল্প চাষ খুঁজছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, তিনি গত বছর দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। প্রায় তিন হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার। এ বছর পাটের আবাদ কমিয়ে মাত্র ১৮ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন। তাও শুধু নিজের পান বরজের শলি ও খুঁটি দেওয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য পাটের চাষ করেছেন তিনি।
একই গ্রামের কৃষক শান্তি জানান, এ বছর তিনি মাত্র এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। এখন পাট শুকানোর কাজ চলছে। তিনি ধারণা করছেন, ৭ থেকে ৮ মন পাট পাবেন তিনি। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় পাট বিক্রি হচ্ছে। এ টাকায় পাট বিক্রি করে কোনো লাভই হবে না তার। তারচেয়ে পাটকাঠি বেচে বেশি লাভ হবে বলে মনে করছেন তিনি।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নাঈম আস সাকীব বলেন, এ জেলায় পাটের আবাদ কমে যাওয়ার কারণ ধানের দাম বেশি হওয়া। বেশি লাভের আশায় কৃষকরা ধানের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। পাটের উৎপাদন খরচ বেশি, সেই তুলনায় বাজার মূল্য কম। তাছাড়া পাট জাগ দেওয়ার জায়গার সমস্যার কারণে কৃষকদের মধ্যে পাট আবাদে অনীহা দেখা যাচ্ছে। তবে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এসএমএন/টিআর