Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৮০০ স্প্লিন্টারে দুর্বিষহ জীবন, দোষীদের ফাঁসি চান মাহবুবা


৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৫:৩৪

।। আজিম উদ্দিন, সাভার ।।

দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শরীরে ১৮শটি স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন। এর মধ্যে দু’টি স্প্লিন্টারের বসবাস মাথায়। আর এ দুটির যন্ত্রণায় প্রায়ই ঘুমাতে পারেন না তিনি। শরীরের এক অংশ অবশ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরাও করতে পারেন না ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে চালানো ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার অন্যতম এই সাক্ষী।

বিজ্ঞাপন

https://www.youtube.com/watch?v=1YYWOMncyh8&feature=youtu.be

মাহবুবা পারভীন ওই সময় ছিলেন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সহসম্পাদক। গ্রেনেড হামলার সময় তিনি বসেছিলেন তখনকার আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী রহমানের পাশেই। গ্রেনেড হামলার পর গুরুতর আহত আইভী রহমানকে বাঁচানো যায়নি। কিন্তু শরীর ভর্তি স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন মাহবুবা। এই শরীরেই তিনি আছেন ঢাকা জেলা (উত্তর) আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে।

এখন মাহবুবা পারভীনের একটিই চাওয়া, মৃত্যুর আগে ২১ আগস্ট সমাবেশে গ্রেনেড হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চান তিনি।

মাহবুবা জানালেন, দেহের ভেতরে থাকা ১৮শ স্প্লিন্টারের মধ্যে মাথার দু’টি তাকে অনবরত যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। হামলার পর শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে গেছে। তাই ঠিকমতো চলাফেরাও করা সম্ভব হয় না। যন্ত্রণায় মাঝে মধ্যেই পাগলের মতো হয়ে যান তিনি।


২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পড়ে আছেন আহত মাহবুবা পারভীন (ডানে)

পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ভিটা বসবাস করার অনুপযোগী হওয়ায় ভাড়া বাড়িতে থাকতে হচ্ছে মাহবুবাকে। তিনি জানান, সাভার এলাকার সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীও তার কোনো খোঁজ-খবর নেন না বলে আক্ষেপ করলেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন মাহবুবা পারভিন।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবছর ২১ আগস্ট এলেই সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি মনে করে এখনও আঁতকে ওঠেন, কান্না চেপে রাখতে পারেন না তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ওষুধ খাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পান মাহবুবা। আর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থেকে যে লভ্যাংশ আসে, তা দিয়েই চলে তার সংসারের খরচ।

স্বামী মারা গেছেন, দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আসিফ পারভেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ’র শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে রোওশাদ যোবায়ের পড়ছেন আর্কিটেকচার নিয়ে। এরই মধ্যে উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার পেয়েছেন। কিন্তু ছেলেকে কানাডায় পাঠানোর মতো সামর্থ্য না থাকায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। মাহবুবা পারভীন বলেন, জীবনের শেষ ইচ্ছা ছেলেদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা।

মাহবুবা আক্ষেপ করে বলেন, খুব কঠিন অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন, ২০০৪ সালে ১৮শ স্প্লিন্টারে আমার শরিরটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। এই ১৮শ স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় শরীর অস্থির হয়ে ওঠে। সারাক্ষণ ঘোরের মধ্যে থাকি, আঁতকে উঠি, এই বুঝি ব্যাথা শুরু হয়ে গেল।

‘সরকারের কাছে আমার দাবি, যারা আমার সুন্দর জীবনটা নষ্ট করে দিলো, আমি তাদের ফাঁসি চাই। তাদের ফাঁসি দেখে যেন মরতে পারি,’ কাতর কণ্ঠে বলেন মাহবুবা।

আরও পড়ুন-

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় কাল

সারাবাংলা/এসএমএন/জেডএফ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মাহবুবা পারভীন স্প্রিন্টার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর