আচমকা মালিকানা পরিবর্তনে আতঙ্কে ব্যাংকাররা
৩ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:৩৪
গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা : গতবছরে ব্যাংকিং খাতে আকস্মিক মালিকানা পরির্বতন ও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের অপসারণে ব্যাংকাররা ভীত হয়ে পড়েছেন। এতে আমানতকারী ও উভয়ের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ধরনের পরিবর্তন রোধে ব্যাংকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ চেয়েছেন।
বুধবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা তুলে ধরেন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। বৈঠক উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয়ে ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সভাপতিত্ব করেন। এতে ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকারদের এই উদ্বেগের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকিংখাতের মালিকানা পরির্বতন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কেউ শেয়ার বিক্রি করে চলে গেলে কিছু করার থাকে না। তাই ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সুশাসন প্রশ্নে কাউকে কোনো ছাড় দেবে না বলেও এবিবিকে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, কোনো এমডিও ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম করে পার পাবেন না। অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়ালে তাদের অপসারণসহ কঠোর শাস্তির আওতায় আসতেই হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাংকার্স বৈঠকে সামগ্রিক ব্যাংকিংখাত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকাররা ব্যাংকিংখাতে মালিকানা পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছেন। এখানে অনিয়ম করে কিছু হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখবে। এর বাইরে দেখার সুযোগ নেই।
অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিদায়ী বছরে ব্যাংকিং খাতে হঠাৎ বেশ কিছু পরিবর্তন আমরা দেখেছি। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। আমানতকারীরাও আতঙ্কে রয়েছে। এ ব্যাপারে বৈঠকে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের আশ্বস্থ করেছে।
বৈঠক সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ব্যাংকারদের নানাভাবে হয়রানি করছে বলে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক ব্যাংকের এমডি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে জানিয়েছেন, নিরপরাধ অনেক ব্যাংকারকে দুদক নানাভাবে হয়রানি করছে। এ ব্যাপারেও এবিবি ব্যাংকারদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এ ব্যাপারে ভবিষ্যতে দুদক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যাংকারদের নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করা হবে বলে জানিয়েছেন।
ব্যাংকার্স বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফশিলী ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ঋণের ব্যাপারে ব্যাংকগুলো সর্তক করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর আমানত থেকে যাতে ঋণের পরিমাণ নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকে সেটি খেয়ার রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়াও বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে বলেছে, শিগগিরই ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ সীমা হালনাগাদ করে তা কমিয়ে আনতে বলেছে।
এছাড়াও বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৯০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। সেটি পুনঃনির্ধারণ করে ৮৮ শতাংশ করা হতে পারে। আর কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো তার আমানতের ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। এ হার নামিয়ে ৮০ থেকে ৮২ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়াও বৈঠকে কিছু ব্যাংক তার স্বীকৃত বিল পরিশোধে গড়িসমি করে। বেশ কিছু বিদেশি ব্যাংকের এই ধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকগুলোকে হুশিয়ার করে দিয়েছে। স্বীকৃত বিল পরিশোধে কোনো ধরনের গড়িমসি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জবাবে ব্যাংকাররা আইনি জটিলতাকে বাধা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তারা বলেছেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন থাকলেও খুব বেশি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এছাড়াও বৈঠকে এবিবি ব্যাংকিং খাতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদনকারীদের নিকট থেকে ফি আদায় করার দাবি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা নাকচ করে দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এতে মেধাবি ও দরিদ্ররা আবেদন করা থেকে বঞ্চিত হবেন।
সারাবাংলা/জিএস/একে