Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপি এলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে খুলনায়


৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:০৮

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছাড়া বিগত নির্বাচনী পরিসংখ্যানগুলো বলছে, পুরো খুলনা বিভাগের সার্বিক নির্বাচনী ফলাফলে আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রায় সমানে সমান। এ বিভাগে জাতীয় পার্টির অবস্থান ততটা শক্তিশালী না হলেও আগের নির্বাচনগুলোতে জামায়াতের অবস্থান ছিল আমলে নেওয়ার মতো। এ বিভাগ থেকে বেশ কয়েকটি আসনও পেয়েছে দলটি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১০ বছরের মাথায় ধানের শীষ কিংবা দাড়িপাল্লা— উভয় প্রতীকই রয়েছে চাপের মুখে। তারপরও ভোটাররা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি প্রধান দুই দল কিংবা এ দুই দলের নেতৃত্বাধীন জোট লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়, তবে নির্বাচন হবে হাড্ডাহাড্ডি।

বিজ্ঞাপন

১০টি জেলা নিয়ে গঠিত খুলনা বিভাগে মোট নির্বাচনী আসন রয়েছে ৩৫টি। জেলাগুলো হলো— কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ বিভাগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদের টিকেট পান ১২ জন।

মেহেরপুর জেলা

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জেলা মুজিবনগর। ৭১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলায় মোট নির্বাচনী আসন দুইটি। জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭ হাজার ৫২৫ জন। এর আগের নির্বাচনগুলোর ফল থেকে দেখা যায়, জাতীয় সংসদের ৭৩ নম্বর আসন মেহেরপুর-১-এ আওয়ামী লীগ ও ৭৪ নম্বর আসন মেহেরপুর-২-এ রয়েছে বিএনপির আধিপত্য।

মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর)

আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ফরহাদ হোসেন। প্রায় দুই লাখ ভোটারের এ আসনে ফরহাদ হোসেন এবারও নৌকার টিকেট পাচ্ছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বিএনপি নির্বাচনে এলে এই আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুন একক প্রার্থী হবেন বলেও জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

মেহেরপুর-২ (গাংনী)

বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মকবুল হোসেন। মোট ২ লাখ ২৬ হাজার ৪১৬ ভোটারের এ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। দশম জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় আসনটি বিএনপি হাতছাড়া হয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপি দল হিসেবে অংশ নিলে আসনটি ফেরত নিতে চাইবে। আর আওয়ামী লীগও চাইছে আসনটি কব্জা করতে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ক্ষমতাসীন দলটির অবস্থা এই আসনে খুব বেশি সুবিধাজনক নয় বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৮ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১১ জন ও বিএনপির দু’জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন— জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা আখতার বানু, দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরজাহান বেগম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোকলেছুর রহমান মুকুল, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ কে এম শফিকুল আলম, গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও গাংনী পৌরসভার সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলী এবং জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখন।

অন্যদিকে, বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু ও পৌর বিএনপির সভাপতি গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান মুরাদ আলী।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর)

বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজাউল হক চৌধুরী। স্বাধীনতার পর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির আহসানুল হক মোল্লা। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার মঙ্গল ও বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা আলতাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট রমজান আলীও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ এ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর–ভেড়ামারা)

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মহাজোট হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলে এবারও তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের মনোনয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। হানিফ বর্তমানে কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য হলেও এই আসনেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বসে নেই ইনুও। তবে এ আসনে বিএনপির কাছে ইনু ও হানিফ— দু’জনেরই বড় ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও এরই মধ্যে এ আসনে গণসংযোগ শুরু করেছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে তিনি ছাড়াও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরীও বিএনপির মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন। এছাড়া ২০ দলীয় জোটভুক্ত জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরের নামও রয়েছে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায়।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর উপজেলা)

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি এবার নিজ আসন কুষ্টিয়া-২ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে ওই আসনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে তথ্যমন্ত্রী ইনু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে হানিফকে ফের এই আসন থেকেই লড়াই করতে হতে পারে। তবে তিনি ছাড়াও ১৪ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, দলের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার আমিনুল হক রতন। এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদের কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সভাপতি হাজী গোলাম মহসিন ও জাতীয় পার্টি (জেপি) রোটারিয়ান জাহাঙ্গীর হোসেনও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এই আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাবউদ্দিন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে ভেতরে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনের কাজ। তবে সোহরাবউদ্দিন ছাড়াও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার ও এমএ শামীম আরজুর নামও রয়েছে আলোচনায়।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকশা)

আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আব্দুর রউফ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হয়। ওই নির্বাচনকে ঘিরেই দলের মধ্যে বিভক্তি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। সেই দ্বন্দ্ব মেটেনি এখনও। ফলে আব্দুর রউফ ছাড়াও খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ সদরউদ্দিন খান, সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানা তরুণ, কুমারখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুণ, বর্ষীয়ান নেতা জাহিদ হোসেন জাফর ও খোকসা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বিটুর মতো নেতারাও নৌকা প্রতীকে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে, এই আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে এরই মধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। স্থানীয়রা বলছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি এলে প্রার্থী হিসেবে তার বিকল্প নেই। তবে নুরুল ইসলাম প্রামাণিক আনসার ও অ্যাডভোকেট গোলাম মহম্মদের নামও রয়েছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায়।

চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা-সদর উপজেলার অংশ বিশেষ)

আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুন।  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও উদীয়মান রাজনীতিক ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের দফতর সম্পাদক ও হারদী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম পান্নুও নৌকার মনোনয়ন পেতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবননগর)

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগার টগর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, দর্শনা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মতিয়ার রহমান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক হাশেম রেজা, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল মল্লিক। এই আসনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলেও স্থানীয়রা মনে করছেন, মনোনয়ন প্রত্যাশী সব নেতাই সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি এলাকায় গণসংযোগ করে জনগণকে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।

ঝিনাইদহ-১ (শৈলকূপা)

আসনের মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন। নতুন ভোটার ১৭ হাজার ৬৭৪ জন। সংখ্যালঘু ভোটার ৫৫ হাজার। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বর্তমান সাংসদ আব্দুল হাই, শৈলকূপা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার, উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার মোশাররফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক তৈয়ব আলী জোয়ার্দ্দার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল ইসলাম রাজু, সাবেক যুগ্মসচিব মীর শাহাবুদ্দিন, ঢাকার মিরপুর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাড. মাসুদ রুমী।

অপরদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন শৈলকূপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু।

ঝিনাইদহ-২ (হরিণাকুণ্ডু ও সদর উপজেলার একাংশ)

এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৯ জন। এর মধ্যে সংখ্যালঘু ভোটার ৯০ হাজার। এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে চলছে চরম লবিং-গ্রুপিং থাকলেও বিএনপিতে রয়েছে একক প্রার্থী। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপু। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীর কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান।

এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কনক কান্তি দাস, ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. আব্দুর রশিদ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নুরজাহান বেগম ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মআহ্বায়ক আফজাল হোসেনের নামও শোনা যাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায়।

অন্যদিকে এ আসনে এখনও পর্যন্ত সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান দলের একক সম্ভাব্য প্রার্থী। তার বিকল্প অন্য কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর)

এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৫৮ জন। নতুন ভোটার ১৭ হাজার ৯০৯ জন। সংখ্যালঘু ভোটার ৩০ হাজার। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে। এর প্রভাব পড়েছে দল দুটির তৃণমূল পর্যন্ত। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন বতর্মান অধ্যক্ষ নবী নেওয়াজ। এছাড়া মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাজ্জাতুয জুম্মা, মহেশপুর উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়জদ্দীন হামীদের নাম শোনা যাচ্ছে।

অপরদিকে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন বিএনপির সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, মহিলা দল নেত্রী অ্যাড. শেলী সুলতানা জামান, কোটচাঁদপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। তবে  কণ্ঠশিল্পী মনির খান দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় ভোটারদের সাথে সভা-সমাবেশ ছাড়াও ব্যাপক গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের মাঝে তার নিয়ে বেশ সাড়া পড়েছে। আগামী নির্বাচনে মনির খান প্রার্থী হলে জয়লাভ করবেন বলে মনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ-সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন)

এ আসনের মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন। নতুন ভোটার ১৭ হাজার ৬৭৪ জন। সংখ্যালঘু ৫৫ হাজার। এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে তীব্র কোন্দল রয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আক্কাস আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী ঠাণ্ডু, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার সউদ।

অন্যদিকে বিএনপির মধ্যেও এ আসনে তীব্র গ্রুপিং রয়েছে। বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে বোমাবাজিসহ সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম শহিদুজ্জামান বেল্টু, ছাত্রদলের  কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহবুবার রহমান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ। এ আসনে জাপার (এরশাদ) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আব্দুল কাদের গণসংযোগ করছেন।

যশোর-১ (শার্শা)

আসনে বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দীন। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের টিকেট অনেকটা নিশ্চিত। তবে পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুল মাবুদের নামও শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরে।

এ ছাড়া শার্শা উপজেলা বিএনপি সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাসান জহির এবং জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এম মহাসিন কবীর ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী। দলের বহিষ্কৃত নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তির নামও উচ্চারিত হচ্ছে তার কর্মী সমর্থকদের মুখে মুখে। এলাকায় রটনা রয়েছে, তৃপ্তির বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তৃপ্তি সমর্থকরা তার যোগদানের খবরে ব্যাপকভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন। তবে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে এ আসনের শক্ত দাবিদার জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমান।

যশোর-২ ( চৌগাছা–ঝিকরগাছা)

আসনে মো. মনিরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। মনিরুল ছাড়াও এবারের নির্বাচনে সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন এখানকার নৌকার শক্ত দাবিদার।  ক্লিন ইমেজের কারণে বিএনপির জেলা যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের জনপ্রিয়তা রয়েছে সংসদীয় এলাকায়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা নাজমুল মুন্নী এ আসনে দলের বড় দাবিদার। তবে নিজ দলের বাইরে সরকারি দলের সঙ্গে সমন্বয় করে চলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জহুরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসহাকও চাইবেন ধানের শীষ।

যশোর-৩ (সদর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন)

আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদ বিনা প্রতিদ্বন্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। জেলার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে কাজী নাবিলের নামই থাকছে সবার ওপরে।  তিনি ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার, সাবেক এমপি খালেদুর রহমান টিটো, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র শ্রমিক নেতা কামরুজ্জামান চুন্নু নৌকার দাবি করবেন।

এছাড়া বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেও তিনি এখন শারীরিক অনেকটাই অক্ষম। তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী অধ্যাপিকা নার্গিস ইসলাম কিংবা পুত্র বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান এখানকার বিএনপি। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলামও ধানের শীষের শক্ত দাবিদার বলে জানা গেছে।

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া- অভয়নগর, সদর উপজেলা)

আসনের এমপি রঞ্জিত কুমার রায়। এ আসনের আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট সাবেক হুইপ শেখ আব্দুল ওয়াহহাব। তবে এ দুজনই দল ও এলাকার জনগণের কাছে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত। একে পুঁজি করে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র এনামুল হক বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাঘারপাড়ার নাজমুল ইসলাম কাজল নৌকার টিকেট পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, তরিকুলপন্থী হিসেবে পরিচিত বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের সিদ্দিকী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান দলীয় মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন।

যশোর-৫ (মনিরামপুর)

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন স্বপন ভট্টাচার্য। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য গত দুইবার দলের মনোনয়ন না চাইলেও আগামী নির্বাচনের শক্ত দাবিদার হবেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত হওয়ার পর থেকেই মূলত তাকে ঘিরে মেরুকরণ শুরু হয় আওয়ামী লীগে। তিনি ছাড়াও সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মজিদ ও কামরুল ইসলাম বারী, মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মাহমুদুল হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলুও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া বিএনপি প্রার্থীর দাবিদার মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও মনিরামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসা এবং জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার শরিফুজ্জামান খানের নাম বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে নির্বাচনী মাঠে।

যশোর-৬ (কেশবপুর)

আসনের বর্তমান এমপি বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আসমাত আরা সাদেক। তবে এ আসনে সাবেক চিত্র নায়িকা শাবানাকে ঘিরে নৌকা শিবিরে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যদিও মাঝখানে তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আভাস পাওয়া গেলেও এখন তার কোনো তৎপরতা নেই।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেশবপুর উপজেলা সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ এই আসন থেকে আগেও মনোনয়ন পেয়েছেন। এবারও তিনি মনোনয়ন লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন। পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

মাগুরা-১ (শ্রীপুর ও সদর উপজেলার কিছু অংশ)

আসনের বর্তমান এমপি মোহাম্মদ সিরাজুল আকবর)। তবে এবার এ আসনে নৌকার কাণ্ডারি হতে পারেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (অবৈতনিক) অ্যাড. সাইফুজ্জামান শিখর, অ্যাড. সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, ও মে. জে. (অব.) এ টি এম আব্দুল ওহাব।

অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের মতে, এ আসনটি তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু ও পুনরুদ্ধারের লড়াই। এ আসনে বিএনপির পক্ষে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কবির মুরাদ,  সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন খান, বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর, সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল আখতার খান কাফুর, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বদরুল আলম হিরোর নাম শোনা যাচ্ছে।

মাগুরা-২ (শালিখা-মহম্মদপুর ও সদর উপজেলার কিছু অংশ)

এ আসনে রয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। এ আসনে গত দুই মেয়াদে পরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে এমপি নির্বাচিত হন বর্তমান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া অ্যাডভোকেট শ্রী বীরেন শিকদার।  একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনিই দলের প্রথম পছন্দ। তিনি ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার দূতাবাসের কাউন্সিলর ওহিদুর রহমান টিপু ও অ্যাড. শফিকুজ্জামান বাচ্চু এ আসনে নৌকার টিকেট পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে  এ আসনের লড়তে চান সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাড. নিতাই রায় চৌধুরী। তিনি ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক সৈয়দ আলী করিমের নাম শোনা যাচ্ছে।

নড়াইল-১ (কালিয়া সদর উপজেলার কিছু অংশ)

এ আসনের বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ৬শ’৮৯ জন এবং নারী ভোটার ১লাখ ২১ হাজার ৩২৫ জন। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তি, আওয়ামী লীগ নেতা লে. কমান্ডার ওমর আলী (অব.), নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, আওয়ামী লীগ নেত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোল্লা ইমদাদুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো.শাহীদুল ইসলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন।

অন্যদিকে এ আসনে জেলা বিএনপি’র সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি সাজেদুর রহমান সুজা, খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাহারুজ্জামান মর্তুজা দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নড়াইল-২ (লোহাগড়া-সদর উপজেলার কিছু অংশ)

আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান বর্তমান এমপি।  এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৩৭ জন। আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। আগামী নির্বাচনে দলের সবাই একজোট হয়ে কাজ করলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। তবে বিএনপির দাবি, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে জয় হবে তাদেরই।

গত সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এ আসনে এবার নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজামউদ্দিন খান নিলু, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শিকদার আ. হান্নান রুনু, জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম মুন, লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু, জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি এসএম আসিফুর রহমান বাপ্পী, জেলা আওয়ামী লীগের অপর সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আইয়ুব আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস কে আবু বাকের, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহম্মেদ ও মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সাইফ হাফিজুর রহমান খোকন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ হুমায়ুন কবির নৌকার টিকেট চাইছেন।

অন্যদিকে, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল কাদের সিকদার, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জুলফিকার আলী মণ্ডল, নড়াইল সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন সিকদার, বিএনপি নেতা মেজর (অব.) মঞ্জুরুল ইসলাম প্রিন্স।

এছাড়া বাংলাদেশ গণসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মুফতি শহিদুল ইসলাম, এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-ফকিরহাট-মোল্লাহাট)

আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনার চাচাত ভাই শেখ হেলাল উদ্দীন। স্বাধীনতার পূর্বে ও পরে অধিকাংশ জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। আসনটি পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটিতে। বিগত সময়ে মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি বা বিএনপি এই এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে বারবার।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচন করেন এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি সে সময় ১ লাখ ৪২ হাজার ৯শ ৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সে সময় তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু পান ৫৮ হাজার ৫শ ৩৩ ভোট। পরে শেখ হেলাল উদ্দিন দেশে ফিরে উপ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আলোচিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হেলাল উদ্দীন এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় টিকেট পাচ্ছেন সেটি প্রায় নিশ্চিত।

অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে ভোটারদের মাঝে কৌতূহল রয়েছে। বিগত দিনে বিএনপির প্রার্থী শেখ মুজিবুর রহমান একাধিকবার এ আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। একপর্যায়ে ২০০৮ সালে বিএনপি তাদের প্রার্থী পরিবর্তন করে জেলা বিএনপির অন্যতম সহ-সভাপতি অ্যাড. শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপুকে প্রার্থী করলে তিনিও পরাজিত হন। তবে তিনি এবারও এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রচেষ্টা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন বিএনপির এ নেতা।

বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া)

আসনে মীর শওকত আলী বাদশা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। বাদশা এবারও এ আসনের নৌকার কাণ্ডারি। তবে জেলা তাঁতি লীগের সভাপতি ও প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাকী তালুকদার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

এদিকে, বিএনপি থেকে এ আসনের ধানের শীষের দাবিদার বাগেরহাট জেলা সভাপতি এম এ সালাম ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম খান।

বাগেরহাট-৩ (মংলা-রামপাল)

আসনের আওয়ামীল লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক বিনা প্রতিদ্বন্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। পরে তিনি খুলনা সিটির মেয়র নির্বাচিত হলে ওই আসনের এমপি হন তার স্ত্রী হাবিবুন্নাহার তালুকদার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি পাাচ্ছেন নৌকার টিকেট।

অপরদিকে এ আসনে অতীতে বিএনপি-জামায়াত কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি।  বিএনপির হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়ে এই আসনে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। এ ছাড়া মংলা পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপি নেতা জুলফিকার আলীও দলীয় টিকিট পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল ওয়াদুদ ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে।

বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)

আসনের বর্তমান এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তবে তার বার্ধক্যকে পুঁজি করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে আছেন।

অন্যদিকে বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান, জেলা সহসভাপতি কাজী খাইরুজ্জামান শিপন ও বিএনপি নেতা ফরাজী মনিরুল ইসলামও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলে এই আসনে এবারও জামায়াত থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম।

খুলনা-১ (দাকোপ–বটিয়াঘাটা)

আসনের এমপি  আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস। পুরো জেলার মধ্যে এ আসনটিই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। বাকি পাঁচটিতে বিএনপির শক্ত অবস্থান রয়েছে।

যদিও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দৃশ্য বেশ পাল্টেছে। এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ৫৩৭ জন। এবারও এ আসনে পঞ্চানন বিশ্বাসের মনোনয়ন নিশ্চিত। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলের অভ্যন্তরে যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে তা কাজে লাগিয়ে আসনটি পেতে চায় বিএনপি।  দলীয় মনোনয়ন পেতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৩, বিএনপি, জাপা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একক প্রার্থী মাঠে আছে।

১৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দু’টি উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ জন। পঞ্চানন বিশ্বাস ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম খান মনোনয়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অপরদিকে দল ও জোটের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আমীর এজাজ খান। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং দলীয় চেয়ারম্যানের পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় দল ও জোটের কাছে মনোনয়ন চাইবেন।

খুলনা-২ ( কোতোয়ালী-সোনাডাঙ্গা)

আসনের এমপি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তবে আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়ছেন এমনটাই পূর্বাভাস। মোট ২ লাখ ৯০ হাজার ৩১৫ ভোটারের এ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনি। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

খুলনা-৩ (খালিশপুর-খানজাহান আলী)

আসনের এমপি সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান। এ আসনে মুন্নুজান এবারও পাচ্ছেন নৌকার টিকেট।

খুলনা-৪ (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা)

আসনের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সে সময় এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা। তার মৃত্যুর পর শিল্পপতি ও সাবেক ক্রিড়াবিদ আব্দুস সালাম মুর্শেদী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও তিনি পাচ্ছেন দলীয় প্রতীক, সূত্র বলছে- এমনটাই সিদ্ধান্ত হাইকমান্ডের।

খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা)

আসনের বর্তমান এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। তিনিও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন ডুমুরিয়া উপজেলা সভাপতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এবং খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রবর্তনের সম্পাদক মোস্তফা সরোয়ার, বঙ্গবন্ধু পরিষদের খুলনা জেলা সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মাহাবুব উল ইসলাম এবং ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য জামিরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মামুন রহমান ও বিএমএর সাবেক মহাসচিব, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. গাজী আবদুল হক ও ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি খান আলী মুনসুর।  এছাড়া এ আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান থাকায় দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২০ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা)

আসনে বিনা প্রতিদ্বন্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট শেখ মো. নুরুল হক। এ আসনে এবার প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান টিকেট পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানা, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব রশীদুজ্জামান মোড়ল। এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

সাতক্ষীরা-১ (কলারোয়া-তালা)

আসনের বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ। এবারও তিনি জোটের মনোনয়ন চাইছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ দল থেকে প্রার্থী চাওয়ায় তার বিষয়টি ঝুলে আছে। এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম, তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র মনোনয়ন চাইছেন। এদিকে বিএনপিতে সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

সাতক্ষীরা-২ (সদর উপজেলা)

আসনের বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন দলীয় প্রতীক পেতে। রবি ছাড়াও এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবু আহম্মেদও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জেলা সদর থেকে পাড়া মহল্লার নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

অপরদিকে সদর আসনে বিএনপি থেকে এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন বর্তমান জেলা সভাপতি রহমতুল্লাহ পলাশ। তবে জোটগত নির্বাচন হলে সেক্ষেত্রে বিএনপি আসনটি জামায়াতকে ছাড় দিতে পারে বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটার  চাম্পাফুল, ভাড়াশিমলা, তাতালী  ও নলতা ইউনিয়ন)

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক। এবার এ আসনের নৌকার কাণ্ডারি তিনি।

অপরদিকে এ আসনেও জামায়াতের রয়েছে ভালো অবস্থান। জোটগত নির্বাচন হলেও এখানেও জামায়াতকে ছাড় দিতে পারে বিএনপি। তবে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে রয়েছেন সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকীন আহমেদ চিশতি, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ, বর্তমান সহ- সভাপতি কামরুল ইসলাম ফারুক, সাবেক পৌর মেয়র এম এ জলিল,জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিমের নাম শোনা যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ)

আসনে আওয়ামী লীগের এ এম জগলুল হায়দার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। এবার দলীয় প্রতীক পেতে তিনি অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও এরইমধ্যে এলাকায় তার ভালো অবস্থান তৈরি হয়েছে।

অপরদিকে বিএনপির হয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাতক্ষীরা আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দিন ও শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ।

এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম আরিফুল ইসলামও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন-

ঢাকা বিভাগে বিএনপি-জামায়াত সেবার শূন্য, এবার কী?

রংপুর: মাঠের লড়াইয়ে শক্তিশালী জাপা, আ.লীগে একাধিক প্রার্থী

ময়মনসিংহ: আ.লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এখনও সক্রিয় নয় বিএনপি

রাজশাহী: মাঠে-কেন্দ্রে তৎপর আ.লীগের একাধিক প্রার্থী, বসে নেই বিএনপিও

সারাবাংলা/এমএস/টিআর/একে

আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় পার্টি বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর