Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমুদ্রগর্ভ থেকে আসবে ৮১ ভাগ সম্পদ: প্রধানমন্ত্রী


৯ অক্টোবর ২০১৮ ১৯:১৯

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: বাংলাদেশের সমুদ্রগর্ভ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ আহরণ করা যাবে তা দেশের মোট ভূখণ্ড হতে আহরিত সম্পদের ৮১ ভাগ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ঢাকায় ২য় সাউথ এশিয়া মেরিটাইম অ্যান্ড লজিসটিক ফোরামের দ্বিতীয় সম্মেলনের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে বাংলাদেশের নৌ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং ভারতের গেটওয়ে মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ও শ্রীলঙ্কার কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম কনফারেন্স ইভেন্টস’র সহযোগিতায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

‘আমাদের সমুদ্রসীমার ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সমুদ্রের ৩৫৪ নটিক্যাল মাইলেরও বেশি সমুদ্র তলদেশের সম্পদ রয়েছে। সমুদ্রগর্ভ থেকে যে পরিমাণ সম্পদ আহরণ করা যাবে তা বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ড থেকে আহরিত সম্পদের  ৮১ ভাগ।’

আমাদের উন্নয়ন সহযোগী ও বেসরকারি খাত এই সম্পদ আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের নিজের দেশকে নিয়ে ভাবি না, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ অঞ্চলের সকল মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনকে সব থেকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য নদী খননের উদ্যোগসহ বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌরুটগুলো পুনরায় চালুর জন্য ড্রেজিং’র উদ্যোগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে ধরেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, বাংলাদেশের জন্য একটি আধুনিক দক্ষ পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন খাতে যথাযথ কর্মপন্থা গ্রহণ করব। আমদের কর্মকৌশল হবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।’

‘বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল। এর শতকরা ৮০ ভাগ নদ-নদী প্লাবন ভূমি। যার ওপর নির্ভরশীল দেশের বেশিরভাগ জীবনযাত্রা এবং অর্থনীতি। বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ। এবারে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত লাভ করেছি। এটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ বাংলাদেশকে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’

‘২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে কারণ ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।’

‘মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করা, তাদের পানীয় জল ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ধরনের কাজগুলো করছি’ বলেন শেখ হাসিনা।

বদ্বীপের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এ বদ্বীপেরও কিছু প্রতিকূলতা থাকে। সেই প্রতিকূলতা বারবার আমরা সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের ব-দ্বীপটাকে আগামীতে উন্নত করবো। কারণ ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

ব-দ্বীপের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই অঞ্চলের বসবাসকারী মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি করতে পারি সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই এরইমধ্যে আমরা ডেল্টা প্লান-২১০০ প্রস্তুত করেছি এবং নেদারল্যান্ড সরকার এব্যাপারে আমাদের সহায়তা করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম বা আজকের শিশু আগামী দিনে কেমন জীবন যাপন করবে সে দিকে লক্ষ্য রেখে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি।’

‘আমরা মনে করি, বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। নৌপরিবহন সেক্টরে রয়েছে বিপুল ব্যবসায়িক সুযোগ। দেশে-বিদেশে কনটেইনার পরিবহন উন্নয়নে ড্রেজিং কার্যক্রমসহ বন্দর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা যাতে আরও আসে তার জন্য আমাদের নীতিমালা আরও উন্নত করেছি এবং উন্মুক্ত করেছি’ বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও বাংলাদেশের নদী বন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করা, নতুন বন্দর নির্মাণ অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোগুলোতে জাহাজ ও যাত্রী ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নৌযানের দক্ষতা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সমাধান হওয়ার দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে আমরা আমাদের যে সমুদ্রসীমা পেয়েছি, এখানে যে সম্পদ রয়েছে তা আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য এরইমধ্যে ব্লু ইকোনমি পলিসি গ্রহণ করেছি। আমরা মনে করি যে, এ সম্পদ ব্যবহার করে আমরা আমাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারব।’

সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি-উন্নয়নের সূচকগুলোর কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিগত এক দশক ধরে গড়ে আমরা ৬ শতাংশের উপরে ডিজিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। গত বছর আমাদের জিডিপি অর্জন করেছি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও আমরা নিম্ন থাকব না। আমরা অবশ্যই উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলব। জাতিসংঘ ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সনদও আমাদের দিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে। যা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল।’

নৌপরিবহন খাতে দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কাজেই এই খাতকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলের জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের প্রভূত অবদান রাখা সম্ভব বলে আশাবাদ করেন।

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু আমাদের নিজের দেশ নিয়ে ভাবি না, আমরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সাথে তাদের একটা যোগাযোগ রক্ষা করে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ অঞ্চলের সকল মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর সব থেকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’

দ্বিতীয় দক্ষিণ এশিয়া সামুদ্রিক ও লজিস্ট্রিক ফোরাম-২০১৮’তে যে সকল সুপারিশ করা হবে তা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে উল্লেখ করে ফোরামের সাফল্য কামনা করে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে সাউথ এশিয়া মেরিটাইম অ্যান্ড লজিসটিক ফোরামের প্রথম সম্মেলন হয়। এবারের সম্মেলনে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটানসহ এশিয়া ও ইউরোপের ২০টি দেশের নৌখাত-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য ও শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সম্মেলনে অংশ নেবেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেরিটাইম ফোরাম সমুদ্রসম্পদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর