দিনাজপুরের চড়ারহাট গণহত্যা দিবস আজ
১০ অক্টোবর ২০১৮ ১০:১৯
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
দিনাজপুর: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার চড়ারহাট গণহত্যা দিবস আজ (১০ অক্টোবর) । ১৯৭১ সালের এই দিনে উপজেলার পুটিমারা ইউনিয়নের দুই গ্রামের দেড় শতাধিক নিরীহ বাসিন্দাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। নির্মম এই গণহত্যার কথা মানুষ ভুলতে পারেনি আজও। অক্টোবর এলেই এখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
দিবসটি পালনে প্রতিবছর এই দিনে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনাসভার আয়োজন করেন এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা।
জানা গেছে, নবাবগঞ্জের পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাটে (প্রাণকৃঞ্চপুর) ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিরীহ সাধারণ নারী-পুরুষকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে একত্রিত করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহতও হয়। সেই শহীদদের গণ কবরগুলো সংরক্ষণে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর বিরামপুর উপজেলার আলতাদিঘী নামক স্থানে গরুর গাড়িতে করে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা বিরামপুর ক্যাম্পে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধারা হামলা করে ৭ জন পাকি সেনাকে হত্যা করে। এ সময় পাকিস্তানি সেনাদের সাথে ২ জন রাজাকারও ছিল। ওই রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা করার খবর বিরামপুর ক্যাম্পে জানায়। খবর পেয়ে ক্যাম্প কমান্ডার একজন মেজর প্রতিশোধ নিতে হিংস্র হয়ে উঠে। তিনি তার ফোর্সদের নিয়ে ৯ অক্টোবর রাতেই পুটিমারা ইউনিয়নের চড়ারহাট (প্রাণকৃঞ্চপুর) ও আন্দোলগ্রাম (সারাইপাড়া) ঘেরাও করে।
পর দিন ১০ অক্টোবর ভোরে ওই গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষদের কাজের কথা বলে চড়ারহাটের একটি স্থানে মানুষগুলোকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এতে ২ জন নারীসহ ১৫৭ জন শহীদ হন। শহীদদের সকলের লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয় নাই। ৯৩ জন শহীদের লাশ শনাক্ত করা হয়েছিল। যার মধ্যে চড়ারহাট (প্রাণকৃঞ্চপুর) গ্রামের ৬১জন এবং আন্দোলগ্রামের (সারাইপাড়া) ৩২ জন। ওই সময় এক কবরে একাধিক শহীদের মরদেহ দাফন করা হয়েছিল। সেইদিনের ঘটনা ও শহীদদের স্মৃতি আজও তাদের আপনজনদের মাঝে নাড়া দেয়। শহীদ পরিবারের দাবি ছিল গণহত্যার স্থানে একটি স্মৃতি মিনার করে দেওয়ার।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ২০১১ সালে সেখানে একটি স্মৃতি মিনার তৈরির ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক। মিনারের কাজ শেষ হলে তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন, দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক জামাল উদ্দীন আহমেদ। প্রতি বছর স্থানীয়রা বিভিন্ন আযোজন মধ্য দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করে।
সারাবাংলা/এমএইচ