পলাতক আসামিদের মধ্যে ৮ জনের অবস্থান সনাক্ত
১০ অক্টোবর ২০১৮ ১০:৪৪
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
ঢাকা : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় অভিযুক্ত মোট ১৮ পলাতক আসামির মধ্যে ৮ জনের অবস্থান জানতে পেরেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক বিশেষ সহকারী আবদুল হারিস চৌধুরী মালয়েশিয়ায়, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে যাতায়াত করেন বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা বাসস এই তথ্য জানিয়েছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (এডিডিআই ডিআইজি) এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আবদুল কাহহার আকন্দ বলেন, ‘আমরা ইন্টারপোল ও বিদেশে আমাদের মিশনগুলোর সহায়তায় ইতোমধ্যে ৮ পলাতক আসামির অবস্থান সনাক্ত করেছি এবং অপর ১০ পলাতক আসামির অবস্থান জানার চেষ্টা করছি।’
সিআইডি ও পুলিশ সদর দফতরের সূত্র অনুযায়ী, মাওলানা তাজুদ্দিন ও তার ভাই রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, সাবেক এমপি মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে, সাবেক মেজর জেনারেল এটিএম আমিন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার দুবাইতে, দুই ভাই- হরকাতুল জিহাদ নেতা মহিবুল মত্তাকিন ও আনিসুল মোরছালিন রয়েছেন ভারতের তিহার জেলে।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বাসস জানিয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক বিশেষ সহকারী আবদুল হারিস চৌধুরী মালয়েশিয়ায়, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে যাতায়াতের মধ্যে রয়েছেন।
তবে তৎকালীন উপ-পুলিশ কমিশনার খান সায়ীদ হাসান ও ওবায়দুর রহমান খান, হুজি নেতা মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বাদল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মো. ইকবাল, মুফতি শফিউর রহমান (ভৈরব) ও মুফতি আবদুল হাই এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফের অবস্থান এখনও সনাক্ত করা যায়নি।
এই মামলার চার্জশিট দাখিলের পরপরই খান সায়ীদ হাসান ওবায়দুর রহমান খানকে জরুরি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া মাওলানা তাজুদ্দিনকে ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, তারেক রহমানকে একই বছরের ১৩ এপ্রিল, হারিস চৌধুরীকে ৩১ নভেম্বর এবং রাতুল বাবুকে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জরুরি নোটিশ পাঠানো হয়।
ইন্টারপোলের জরুরি নোটিশের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ মাওলানা তাজুদ্দিনকে গ্রেফতার করলেও পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। অবশ্য এখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুপ্রেবেশের মামলা মোকাবিলা করছেন।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বাসসকে বলেন, ‘আদালত তাদের (১৮ অভিযুক্তকে) পলাতক ঘোষণা করেছেন এবং অপর ৩১ জন জেলে রয়েছে, তাছাড়া তিন জনের ফাঁসি হয়েছে।’
অন্য মামলায় যে তিন জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তারা হচ্ছে সাবেক মন্ত্রী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, হরকাতুল জিহাদ প্রধান মুফতি আবদুল হান্নান ও অপর জঙ্গি নেতা শহিদুল আলম বিপুল।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ঘটনায় করা আলাদা মামলায় একই সঙ্গে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিচার শেষ হয়।
দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে এখনও ১৮ জন পলাতক। ৩১ জন কারাগারে।
প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা বাসস’কে বলেন, মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর পলাতক ১৮ আসামির বিষয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ সব ধরণের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। এরমধ্যে যাদের বিষয়ে আইনে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার মতো ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিল। এ আইনজীবীরা পলাতকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আসামিরা হলেন-মাওলানা তাজউদ্দিন, তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মো.হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহামন, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গির আলম বদর, মো. খলিল, মো. ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই। ফারহানা রেজা বলেন, পলাতক ১৮ জনের মধ্যে ৪ জন আসামীর বিষয়ে ‘রাষ্ট্র নিযুক্ত’ আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়নি। তারা হচ্ছেন-আসামী সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এমন কোন ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তারা ‘স্টেট ডিফেন্স বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাননি।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ ৫ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণযন্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
সারাবাংলা/এসএমএন