Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রায়ে অসন্তুষ্ট, বিএনপিকে নিষিদ্ধের দাবি


১০ অক্টোবর ২০১৮ ১৪:১২

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে সন্তুষ্ট নন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আখ্যা দিয়ে তারা তার ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই হামলা বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্টপোষকতা ও অর্থায়নে হয়েছে উল্লেখ করে তারা বিএনপিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায়ে তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং গ্রেনেড হামলার সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার জীবিত বাকি ১১ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রায়ের প্রতিক্রিয়ার যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা বিএনপি-জামায়াতে দলীয় সিদ্ধান্ত এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই হামলা হয়েছে। কোনো একক ব্যক্তির পক্ষে এই হামলা সম্ভব নয়। এটার জন্য যদি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ফাঁসি হয়, তাহলে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিএনপিকেও রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করতে হবে।’ এ সময় তিনি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিচারেরও দাবি জানান।

ওমর ফারুক চৌধুরী আরও বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন। কিছু দিন আগে কানাডার আদালতেও এটি প্রমাণিত হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি এবং গণমাধ্যমকে বিএনপির সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানাব।

বিজ্ঞাপন

রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, আামরা এই রায়ে সন্তুষ্ট নই। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব আমরা।

গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিহতদের স্মরণে গঠিত সংগঠন ‘২১ আগস্ট বাংলাদেশে’র সাধারণ সম্পাদক মো. নাজিমুদ্দিন নাজমুল বলেন, এই রায়ে হামলায় আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা সন্তুষ্ট নয়। আমরা ২১ আগস্ট হামলার ষড়যন্ত্রকারী ও মূল হোতা হিসেবে তারেক রহমানের যাবজ্জীবন নয়, ফাঁসি দাবি করেছিলাম। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত যাব।

রায় শোনার পর কান্না ভেঙে পড়েন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার শিকার আওয়ামী লীগের নারী নেত্রী রাশিদা আক্তার রোমা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলা আহত অ্যাডভোকেট কাজী শাহানা ইয়াসমিন বলেন, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, আদালতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। হস্তক্ষেপ থাকলে এরকম রায় হতো না। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব। আমরা তারেক জিয়ার ফাঁসি চাই।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও গ্রেনেড হামলার শিকার আজিজুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ও চক্রান্তকারীদের ফাঁসির রায় হবে। কিন্তু তারেক জিয়ার ফাঁসি না হওয়ার আমরা হতাশ হয়েছি। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত যাব।

কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা বলেন, তারেক জিয়ারসহ হামলা ও ষড়যন্ত্রকারী সবার ফাঁসি হবে বলে আশা করেছিলাম। আমরা এই সন্তুষ্ট নয়। আমরাও রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালত যাব।

এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন সম্রাটসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এর আগে, বুধবার (১০ অক্টোবর) পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং হামলার সময়ে বিএনপি-জামায়াত সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

একইসঙ্গে মামলার জীবিত বাকি ১১ আসামিকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পরপরই দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।

এ রায়ে সন্তোষ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে রায় পর্যালোচনার পর যদি মনে হয় কারও সাজা কম হয়েছে, সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালতে সাজা বাড়ানোর আবেদন জানানো হবে বলে জানান তারা।

বিএনপির আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, তারেক রহমান নির্দোষ, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, এ রায়ে খুশি হলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনিসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই মামলায় তারেক রহমানের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও বলেছেন, তারেক রহমানের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল।

আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, রায় যথার্থ, দণ্ডাদেশ পাওয়া পলাতক আসামিদের শিগগিরই দেশে আনা হবে।

অন্যদিকে, রায়কে ‘ফরমায়েশি’ অভিহিত করে এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি সপ্তাহজুড়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।

সারাবাংলা/এমএমএইচ/এসটি/এমএইচ/টিআর

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর