তিতলি’র আঘাত মোকাবিলায় প্রস্তুত চট্টগ্রাম
১০ অক্টোবর ২০১৮ ২১:১৬
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘পাহাড়ে বসবাসরতদের সরানোর জোর চেষ্টা চলছে। আশ্রয়কেন্দ্রও প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা দল গঠন করা হয়েছে। জরুরি ত্রাণ তৎপরতা চালানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ঘূর্ণিঝড় তিতলি’র আঘাত পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। তবে এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় চট্টগ্রামে আঘাত হানার কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় তিতলি আঘাত হানার নিশ্চিত তথ্য না থাকলেও মানুষের মধ্যে কিছুটা উৎকণ্ঠা আছে। সেজন্য ঝড়ের আঘাত মোকাবিলায় জেলার প্রায় ৪৭৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও ওষুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী মজুদ আছে। মন্ত্রণালয় থেকে নগদ টাকার আশ্বাস পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা চালানোর জন্য উদ্ধারকারী দলও প্রস্ত্তত রয়েছে।
সভায় চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আবহাওয়াবিদ জাকির হোসেন ঘূর্ণিঝড় তিতলির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িষ্যার কাছাকাছি অবস্থান করছে। মারাত্মকভাবে আঘাত না হানলেও চট্টগ্রামে এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হবে।
আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় তিতলি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়ার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর এবং ঘনীভূত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে সমুদ্র বন্দরগুলোকে চার নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত মাছ ধরার নৌকাগুলোকে পরবর্তী র্নিদেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকায় বুধবারও দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৪৭.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে মঙ্গলবার রাত থেকে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন। বুধবারও তা অব্যাহত ছিল বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় তিতলি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ করতে গতকাল বন্দর ভবনে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ঝড় মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের সচিব ওমর ফারুক।
সারাবাংলা/আরডি/এমও