Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে ১৪টি বিষয় প্রশ্ন রেখে ২১ আগস্টের রায় ঘোষণা


১০ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:৫০

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, গ্রেনেড সংগ্রহ, হাওয়া ভবনের ষড়যন্ত্রসহ ১৪টি বিষয় বিবেচনার জন্য প্রশ্ন রেখে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।

বুধবার (১০ অক্টোবর) পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের ভবনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত এসব বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।

রায় ঘোষণার পূর্বে বিচারক প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপনের পর ১৪টি বিষয়ে বিবেচনার কথা বলেন। সেগুলোর মধ্যে আছে-

এক. অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধ ও ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামি আহসান উল্লাহ কাজলের ভাড়া করা ফ্ল্যাট বাড়ি নম্বর-ম-৩০ পশ্চিম মেরুল বাড্ডার মৃত জয়নাল আবেদিনের তৃতীয় তলার বাড়ির গ্যারেজ সংলগ্ন পূর্ব পাশের তিন কক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাট থেকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঘটনাস্থল ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলার জন্য আসামিরা একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেয় কি না ও গ্রেনেড নিক্ষেপকারীরা এই ঘটনাস্থল থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করেছে কি না।

দুই. অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক রুহুল আমিনের বাড়ি হোল্ডিং নম্বর ২ এর ৫ আনন্দ নগর, বাড্ডা। আসামি মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওই বাড়ি ভাড়া নিয়ে অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে জঙ্গি কাজে নিযুক্ত ছিল কি না। ওই বাড়ি থেকে মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ২০০৫ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় কি না।

তিন. মেরুল বাড্ডার রাজউক প্লট নং ৫৩, লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম রাব্বানীর (অব.) চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলার উত্তর অংশের ফ্ল্যাট আসামিরা ভাড়া নিয়ে গ্রেনেড সংরক্ষণ করতো কি না এবং বিভিন্ন গ্রেনেড হামলায় ওই বাড়ি থেকে গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়েছে কি না।

বিজ্ঞাপন

চার. রোড নম্বর ৫ এর এ, বাড়ি নম্বর ৬১, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, বাড়িটি বিএনপি জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর দ্বিতল সরকারি বাসভবন। ওই বাসভবনে ২০০৪ সালের ১৮ আগস্ট আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী, আহসান উল্লাহ কাজল, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা তাজউদ্দিনরা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে কিনা। ২০০৪ সালের ১৮ আগস্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে গ্রেনেড প্রাপ্তি, অর্থবল, প্রশাসনিক সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ ২০ আগস্ট আসামি আহসান উল্লাহ কাজল ও মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির বাসা থেকে আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের সরবরাহকৃত ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড এবং নগদ ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন কি না।

পাচঁ. প্লট নং-৩, সেকশন-১, ব্লক-সি, মিরপুরে মসজিদ-ই আকবর কমপ্লেক্সে আসামি মাওলানা আবু তাহের শিক্ষকতা করতেন কি না। কমপ্লেক্সের মসজিদের ইমাম সাহেবের অনুপস্থিতিতে মাঝে মাঝে জুমার নামাজের সময় মুসল্লিদের উদ্দেশে জেহাদি বক্তব্য রাখতেন কি না। ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট আসামি আহসান উল্লাহ কাজল, মাওলানা আবু তাহের, আব্দুস সালাম পিন্টু, মুফতি মঈন পরিকল্পনা ও অপরাধ সংঘটনের জন্য প্রয়োজনীয় শলা-পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করেন কি না।

ছয়. ৩ এর ১১ আলী অ্যান্ড নূর রিয়াল এস্টেট, সাত মসজিদ রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। এ বাড়ির নিচতলায় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা হতো কি না। ওই বাড়িতে গ্রেনেড সংরক্ষণ করা হতো কি না এবং এই মামলার অনেক আসামি ওই বাড়িতে যাতায়াত করতো কি না। আসামিরা দেশের বাইরে ও দেশের ভেতর হামলা পরিচালনার জন্য মাওলানা তাজউদ্দিনের কাছ থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করতেন কি না। মাওলানা তাজউদ্দিন বিয়ের পর একই বাড়ির তৃতীয় তলা বসবাস করতেন কিনা এবং সেখানে গ্রেনেড সংগ্রহ করতেন কি না। ওই বাড়িতে আসামি আব্দুস সালাম পিন্টু ও মাওলানা আবু তাহেরের যাতায়াত ছিল কি না।

বিজ্ঞাপন

সাত. গুলশান থানার রোড নং ১৩, ব্লক নং ডি, বাড়ি নম্বর ৫৩, বনানী মডেল টাউনের জনৈক আশেক আহমেদ, বাবা-আবদুল খালেক। তার বাসাটি হাওয়া ভবন নামে পরিচিত। ওই হাওয়া ভবন বিএনপি জামায়াত ঐক্য জোট সরকারের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কি না। ওই ঘটনাস্থলে পলাতক আসামি তারেক রহমান অপরাধ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে কি না ও জঙ্গি নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মিটিং করে কি না।

আট. মোহাম্মদপুর থানার আলী অ্যান্ড নূর রিয়েল এস্টেট এলাকার সাতগম্বুজ মসজিদে ঘটনার আগে আসামি মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী, মাওলানা আব্দুস সালাম, মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আব্দুর রউপ, আব্দুল মাজেদ ভাট অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করে কি না।

নয়. মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের কাছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর অফিসে ও খিলগাঁও থানা এলাকায় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন সময় আসামিরা অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক সভা ষড়যন্ত্র করেছে কি না।

দশ. অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে পরস্পর যোগসাজশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেনেড আক্রমণ চালানোর সুবিধার জন্য ও অপরাধীদের রক্ষার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না।

এগার. অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে প্রশাসনিক সহায়তা দিয়ে মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত অবিস্ফোরিত সংরক্ষণযোগ্য তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে এবং আদালতের অনুমতি না নিয়ে অপরাধীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক ধ্বংস করার ও আলামত নষ্ট করায় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা।

বার. অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত সভা ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে পরস্পর যোগসাজশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মূল আসামিদের সহায়তা করার লক্ষ্যে আসামিদের নির্ভিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে ও পরবর্তী সময়ে আসামিদের অপরাধের দায় থেকে বাঁচানোর সুযোগ করে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না।

তের. উল্লিখিত ঘটনাস্থলগুলোয় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও পূর্বপরিকল্পনা করে পরবর্তী সময়ে মূল ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগ কার্যালয় ২৩ নম্বর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সামনের ঘটনার তারিখ ও সময় আর্জেস গ্রেনেড হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করার অপরাধে আসামিরা দণ্ডবিধির ১২০/বি, ৩২৪, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১০৯, ২০১, ২১২, ২১৭, ২১৮, ২৩০ ও ৩৪ ধারায় শাস্তি দেওয়া যায় কি না।

চৌদ্দ. প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তাদের রক্ষা করার জন্য প্রলোভন ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে অন্য লোকের ওপর দায় বা দোষ চাপিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার লক্ষ্যে মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না।

এসব বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে আদালত রায় ঘোষণা করেন। রায়ে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের ফাসিঁ, তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকী ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত।

সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর