কয়লা দুর্নীতি: নির্বাচনী অজুহাতে থমকে আছে দুদকের তদন্ত কার্যক্রম
১১ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:১২
॥ এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ॥
ঢাকা: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে ‘কয়লা উধাওয়ের’ ঘটনাটি দেশেজুড়ে আলোড়ন তোলে। বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় নড়েচড়ে বসে সরকারের উপরের মহলও। ঘটনা তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির এ ঘটনা তদন্তে মামলার ১৯ আসামিসহ অন্তত ৪০ জনকে এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংস্থাটি।
তবে সর্বশেষ, গত ৩০ আগস্টের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের তদন্ত কার্যক্রমের আর কোনো অগ্রগতি কারো চোখে পড়েনি। এমনকি কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা করা হয়নি।
দুদক বলছে, সিস্টেম লসের প্রশ্ন উঠায় কয়লা উধাওয়ের ঘটনাটি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হতে আরও অনেক সময় লাগবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, যে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে নির্বাচনের আগে শেষ হচ্ছে না কয়লা দুর্নীতিতে দুদকের তদন্ত কার্যক্রম। তাই সহসাই হচ্ছে না এ মামলার চার্জশিটও।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিস্টেম লসের প্রশ্ন উঠায় আমরা বিশেষজ্ঞ মতামত নেব। কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ারও কথা রয়েছে। মামলাটি আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে- তখন ওই বোর্ডে (খনি) কারা কারা ছিলেন।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবস শেষ হয়েছে।’
এদিকে, গত ১৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, কয়লা দুর্নীতির তদন্ত দ্রুতই শেষ হবে। পরে ১৬ আগস্টও তিনি প্রায় অভিন্ন কথা বলেন। কয়লা দুর্নীতির তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে সেদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে দদুক চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, ‘তদন্ত চলবে এবং আমরা যেটা বলেছি, দ্রুততম সময়ে এই মামলার শেষ পরিণতি আমরা দেব। আমরা আমাদের কথা রাখার চেষ্টা করছি।’
তবে কতদিনে মামলা শেষ হবে সেদিন তিনি তা জানাতে পারেননি। বলেছিলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা মামলাটি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আরও দুইমাস পেরিয়ে যেতে চললেও এখনও তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি।
কয়লা দুর্নীতির অনুসন্ধানে গত ২৩ জুলাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দুদক। দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলমকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ হোসেন ও উপসহকারী পরিচালক এ এস এম তাজুল ইসলাম। আর এই তদন্ত কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন দুদকের পরিচালক কাজী শফিক।
দুদকের তদন্ত কমিটি গঠনের একদিন পর (২৪ জুলাই) কয়লা আত্মসাতের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে এই মামলার তদন্ত শুরু করে দুদক।
গত ১৩ আগস্ট পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ৩২ কর্মকর্তাকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক। এর মধ্যে ১৬ আগস্ট সাত জন, ২৮ আগস্ট আট জন, ২৯ আগস্ট আটজন ও ৩০ আগস্ট বাকি ৯ জনকে পর্যায়ক্রমে দুদকে হাজির থাকতে বলা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমেই ওই ৩২ কর্মকর্তা দুদকের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়।
এদিকে, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ‘কয়লা চুরি বা কোন দুর্নীতি হয়নি’ বলে দাবি করেছেন খনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদ। গত, ২৯ আগস্ট দুদক কার্যালয়ে আট কর্মকর্তাসহ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন।
হাবিব উদ্দিন আহমদের দাবি, কয়লা উধাওয়ের যে ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে এর পুরোটাই প্রকৃতপক্ষে সিস্টেম লস। তারও আগে, নিজের মেয়াদে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে দাবি করেন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির খনির আরেক সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম নুরুল আওরঙ্গজেব।
গত ১ আগস্ট দুদক কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির দুর্নীতি মামলায় দুদকের অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এসব কয়লার অনুমানিক মূল্য ২৩০ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে