শিক্ষক সংকটে স্থবির বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
১১ অক্টোবর ২০১৮ ১০:০৩
।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা : আশা করা হয়েছিল উচ্চ শিক্ষায় দক্ষিণের বাতিঘর হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। তবে প্রতিষ্ঠার ৮ বছরেও দূর হয়নি শিক্ষক সঙ্কট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে শিক্ষক নিয়োগে চাহিদা পত্র দিলেও সে অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে শিক্ষা কার্যক্রমে। মঞ্জুরি কমিশন বলছে, দেশের ৪৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়েই সঙ্কট রয়েছে। সব সমস্যার সমাধান রাতারাতি করা সম্ভব নয়।
২০১১ সালে যাত্রা শুরু করা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ২২টি বিভাগ রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। তবে সে তুলনায় নেই প্রয়োজনীয় গবেষণাগার, সেমিনার রুম বা গ্রন্থাগার, আবাসিক হলসহ অন্যান্য সুবিধা। তবে সবচেয়ে বেশি সঙ্কট শিক্ষকের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, মোট ২২টি বিভাগের শিক্ষক সংখ্যা ১৭২। যার মধ্যে ৪১ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে দেশের বাইরে রয়েছেন। বাকি ১৩১ জন শিক্ষকের ৯৯ জন প্রভাষক। যাদের মধ্যে ৫৭ জনই অস্থায়ীভিত্তিতে কর্মরত। আরও পাঁচ জন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক পদে অস্থায়ী হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাফর মিয়া জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগেই শিক্ষক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। কোনো বিভাগে ৬ টি ব্যাচের জন্য শিক্ষক রয়েছেন ৩ জন। সব মিলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নামে আছে কাজে নাই।
অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বেশিরভাগের মেয়াদই দুই তেকে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। এসব শিক্ষককে স্থায়ী করার উদ্যোগ যেমন নেই তেমনি নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদনও পাচ্ছেনা বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে যারা রয়েছেন তাদের অমানুষিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে একেকজন শিক্ষককে সাত থেকে আটটি করে কোর্স পরিচালনা করতে হয়। অনেক বিভাগেই তিন থেকে চার জন শিক্ষক দিয়েই চালাতে হয় পাঁচ থেকে ছয়টি ব্যাচ। যেমন— বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের ছয়টি ব্যাচ থাকলেও বিভাগটিতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিন জন। এ বিভাগে দেড়শ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। অন্য বিভাগগুলোতেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সন্তোষজনক নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক প্রতিনিধি জানান, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকদের জন্য একটি পদও ইউজিসি থেকে ছাড় করাতে পারেনি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাফর মিয়া জানান, শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে গত এপ্রিল মাসেও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় শিক্ষক সমিতি। সে সময় উপাচার্য এস এম ইমামুল হক সঙ্কটের বিষয়টি মঞ্জুরি কমিশনের কাছে জানান। কিন্তু গত ৫ মাসেও কোনো ফল আসেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনেকের অভিযোগ উপাচার্যের অমনোযোগ, উদাসীনতা, একরোখা মনোভাব এবং ইউজিসির সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকায় শিক্ষক সঙ্কট দূর করতে পারছেন না তিনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষার পরিবেশও বিঘ্নিত হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম ইমামুল হক জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিকট শিক্ষক চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো জবাব আসেনি। আমরা সঙ্কট নিরসনে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান জানান, কেবল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের চাহিদা রয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি সঙ্কট থেকে থাকে তবে তাদের চাহিদার আলোকে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
মঞ্জুরি কমিশনে কোনো আবেদন আসলে দ্রুততার সঙ্গে তাতে সাড়া দেওয়া হয় জানিয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, কমিশনের বৈঠকগুলোতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা ও চাহিদার আলোকে আলোকে আলোচনা করা হয়। আগামী বৈঠকে বরিশাল বিশ্বববিদ্যালয়ের বিষয়টি আলোচনা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমএস