নির্বাচনের বছর, তাই দুর্গাপূজায় বিশেষ সতর্কতা
১১ অক্টোবর ২০১৮ ১৬:২০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : সুনির্দিষ্ট হুমকি না থাকলেও নির্বাচনের বছর হওয়ায় এবারের দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষভাবে সতর্ক থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক।
বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার পুলিশ সুপার ও পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডিআইজি।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা শেষে ডিআইজি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্গাপূজা নিয়ে স্পেসিফিক কোনো থ্রেট নেই। তবে নির্বাচনের বছর হওয়ায় কেউ হয়ত সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতেও পারে। সেজন্য আমরাও বিশেষভাবে সতর্ক আছি। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদেরও সতর্ক থাকার জন্য বলেছি।’
‘নির্বাচনের বছরে দুষ্কৃতিকারী কিংবা কোন অপশক্তি যাতে কোন ধরনের অঘটন দুর্গাপূজায় ঘটিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সব ধরনের পদক্ষেপ আছে। আশা করছি কোন অপশক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পাবে না’, যোগ করেন ডিআইজি।
সভায় চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত বলেন, ‘অন্যান্য বছরের পূজার আয়োজনের সঙ্গে এবারের পূজার আয়োজনের মধ্যে ভিন্নতা আছে। যেহেতু এবার নির্বাচনের বছর, এবার পূজার নিরাপত্তায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমরা বিশেষ গুরুত্ব প্রত্যাশা করছি।’
চাঁদপুর থেকে আসা পূজা উদযাপন পরিষদের একজন প্রতিনিধি সভায় বলেন, ‘প্রতিমা মণ্ডপে নেওয়া, চারদিনের উৎসব এবং প্রতিমা বিসর্জনের সময় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। গুজব ছড়িয়ে প্রতিমা ভাংচুরের মতো পরিস্থিতি কেউ কেউ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করতে পারে। কারণ সামনে নির্বাচন। বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে অনেকের সুবিধা হবে।’
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ডিআইজি জানান, চট্টগ্রাম বিভাগে এবার সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্গাপূজা হচ্ছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জে দুই হাজার ৭৬০টির মতো পূজামণ্ডপ আছে। এই পূজামণ্ডপগুলোতে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনটি পূজামণ্ডপের জন্য একটি করে মোবাইল টিম থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। পুলিশ এবং শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নয়, সমস্ত বাঙালি জাতি আমরা একে অপরের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে উৎসবে মেতে উঠব। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আমরা ঘটতে দেব না।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দুর্গাপূজায় নাশকতা করতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা।
সভা শেষে সাংবাদিকদের এসপি বলেন, ‘সুযোগসন্ধানী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব কিংবা অশ্লীল ছবি ছড়িয়ে দিতে পারে। এটাকে পুঁজি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এটা ঠেকাতে আমাদের পদক্ষেপ আছে। একজন এডিশনাল পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে কমিটি করেছি। দুজন আইটি এক্সপার্ট নিয়োগ দিয়েছি। তারা সন্দেহভাজন ফেসবুক আইডিগুলো তদারক করছেন।’
এসপি জানান, চট্টগ্রামে এক হাজার ৫১০টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর বাইরে ৩০০টির মতো ঘরোয়া পূজার আয়োজন আছে।
তিনি বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে আনসার সদস্য থাকবে। কিছু কিছু মণ্ডপে একজন কিংবা দুজন করে পুলিশ সদস্যও থাকবেন। তবে বড় মণ্ডপ যেখানে হাজার হাজার লোক সমাগম হবে, সেখানে বিকেল থেকে ট্রাফিক সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে। সার্বক্ষণিক ফোর্সও থাকবে।
‘যাদের সামর্থ আছে তাদের মণ্ডপে সিসিটিভি লাগানোর কথা বলেছি। জেনারেটরের মাধ্যমে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছি।’ বলেন এসপি
এদিকে দুর্গাপূজায় চট্টগ্রাম নগরীতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো.মাহাবুবর রহমান।
তিনি জানিয়েছেন, এবার নগরীতে ২৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। এসব পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, আনসার মোতায়েন থাকবে। এছাড়া গুজব ছড়ানো ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার।
উল্লেখ্য আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।
সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন